মেসির নতুন ‘চ্যালেঞ্জ’

বার্সেলোনার হয়ে একটা দুর্দান্ত মৌসুম কাটালেন লিওনেল মেসি। দ্বিতীয়বারের মতো তিনটি শিরোপা জিতলেন এক মৌসুমে। বার্সাও গড়ল ইউরোপের প্রথম ক্লাব হিসেবে দুটি ট্রেবল জয়ের ইতিহাস। এবারের মতো বার্সার ‘দায়িত্ব’ শেষ। লিওনেল মেসির সামনে এখন কোপা আমেরিকার ‘চ্যালেঞ্জ’। লাতিন আমেরিকার সেরা ফুটবল টুর্নামেন্টে সাফল্য পেয়ে আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে প্রথম বড় কোনো শিরোপা-আনন্দে ভেসে যেতে তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
চিলিতে বৃহস্পতিবার থেকে (বাংলাদেশ সময় শুক্রবার ভোর) শুরু হবে কোপা আমেরিকা। আর্জেন্টিনার প্রথম ম্যাচ শনিবার রাতে, প্যারাগুয়ের বিপক্ষে। ‘বি’ গ্রুপে আর্জেন্টাইনদের অন্য দুই প্রতিপক্ষ গতবারের চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়ে ও জ্যামাইকা।
বার্সেলোনার হয়ে একের পর এক সাফল্য পেলেও আর্জেন্টিনার পক্ষে তেমন উল্লেখযোগ্য সাফল্য নেই মেসির। টানা চারবারের ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলার ২০০৮ সালের বেইজিং অলিম্পিকে সোনা জয় ছাড়া আর কোনো সফলতা পাননি জগদ্বিখ্যাত আকাশি-সাদা জার্সিতে। গত বছর বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠলেও হার মানতে হয়েছিল জার্মানির কাছে।
তাই আর্জেন্টিনার ট্রফি-খরা দীর্ঘ হয়েছে আরো। ম্যারাডোনার দেশ সর্বশেষ কোপা আমেরিকা জিতেছিল ১৯৯৩ সালে। এর পর দীর্ঘ ২২ বছর কোনো গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্টের শিরোপা তাদের অধরা। এবার সেই হতাশা ঘোচানোর প্রত্যয় নিয়ে কোপা আমেরিকা শুরু করতে যাওয়া মেসির দৃঢ়তাপূর্ণ ঘোষণা, ‘এ বছর শিরোপা জয়ই আমাদের লক্ষ্য।’
এবারের লা লিগায় ৩৮ ম্যাচে ৪৩ গোল করেছেন মেসি। বার্সাকে চ্যাম্পিয়নস লিগের পঞ্চম শিরোপা এনে দেওয়ার পথে ১০টি গোলও করেছেন। এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর সঙ্গে তিনি যৌথভাবে সর্বোচ্চ গোলদাতা। ৭৭টি করে গোল নিয়ে প্রতিযোগিতার সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতাও দুই ফুটবল-মহাতারকা।
কিন্তু আর্জেন্টিনার হয়ে তাঁর পারফরম্যান্স ঠিক ‘মেসিসুলভ’ নয়, ৯৭ ম্যাচ ৪৫ গোল। ‘মেসি যতটা বার্সেলোনার, ততটা আর্জেন্টিনার নন’—অনেক দিন ধরে এমন অভিযোগ আর্জেন্টিনাতেই উঠছে। মেসি অবশ্য এই অভিযোগ মানতে রাজি নন। আকাশি-সাদা জার্সিটা যে তাঁর কাছে কতটা গৌরবের, তা জানিয়ে তিনি বলেছেন, ‘জাতীয় দলের হয়ে খেলতে খুব ভালো লাগে। জাতীয় দলের জার্সি পরা, অধিনায়কত্ব করা দারুণ ব্যাপার। এখন আমার প্রধান লক্ষ্য (কোপা আমেরিকার) শিরোপা জয়।’
এবারের মৌসুমে মেসির পারফরম্যান্স আশার আলো দেখাচ্ছে আর্জেন্টিনার কোচ জেরার্দো মার্তিনোকেও। ২০১৩-১৪ মৌসুমে বার্সেলোনার কোচ হিসেবে মেসিকে খুব কাছ থেকে দেখেছিলেন। সেই অভিজ্ঞতা থেকে তাঁর উপলব্ধি, ‘সে বল নিয়ে এমন সব কারিকুরি করছে, যা আগে কখনো তাঁকে করতে দেখিনি। বুঝতে পারছি, আক্রমণভাগের সতীর্থদের সঙ্গে খেলাটা সে খুব উপভোগ করছে।’
এর আগে দুটো কোপা আমেরিকায় খেলেছিলেন মেসি। ২০০৭ সালে ফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলের কাছে ৩-০ গোলে হারের যন্ত্রণা সইতে হয়েছিল বার্সা-তারকাকে। তার চার বছর পর কোয়ার্টার ফাইনালে উরুগুয়ের কাছে টাইব্রেকারে হেরে গিয়েছিল মেসির দল।
এবার সেই উরুগুয়ে আর্জেন্টিনার গ্রুপ-সঙ্গী। প্রতিশোধের ব্যাপার তো আছেই, ২২ বছরের দুঃখ ভোলার মিশনও আছে। মেসির সামনে তাই ‘দেশনায়ক’ হয়ে ওঠার সুবর্ণ সুযোগ!