যে ‘ক্লাবে’র সদস্য হতে কেউ আগ্রহী নয়
৯৯ ও ১০০। পার্থক্য মাত্র একটি রানের। কিন্তু সেটাই হয়ে যায় একজন ব্যাটসম্যানের চিরকালের আক্ষেপ। মাত্র একটি রানই টেনে দেয় শতক আর অর্ধশতকের ব্যবধানরেখা। ১৯৯ রানে আউট হওয়া ব্যাটসম্যান সান্ত্বনা খুঁজতে পারেন এই ভেবে, ‘যাক! অন্তত সেঞ্চুরি তো হয়েছে।’ কিন্তু আদৌ কি সান্ত্বনা পাওয়া যায়? পা বাড়ালেই দ্বিশতক, অথচ তা কত দূরে! তাই ১৯৯ রান ক্রিকেটের এমন একটা আক্ষেপজাগানো ‘ক্লাব’ যার সদস্য কেউই হতে চাইবেন না।
গত শুক্রবার স্টিভেন স্মিথ এই ক্লাবের সদস্য হয়েছেন দশম ক্রিকেটার হিসেবে। জ্যামাইকার স্যাবাইনা পার্কে তাঁর অসাধারণ ইনিংসের সমাপ্তি হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেসার জেরম টেইলরের হাতে। আম্পায়ার এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্ত দেওয়ার পর তা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না স্মিথ। তাই রিভিউ নিলেন। কিন্তু তাতে শেষ রক্ষা হয়নি। মাত্র এক রানের জন্য অধরা থেকে গেল টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম দ্বিশতক।
যে হতাশা স্মিথকে ছুঁয়ে গেল তা সর্বপ্রথম বিদ্ধ করেছিল পাকিস্তানের মুদাসসর নজরকে। ১৯৮৪ সালে ফয়সালাবাদে ভারতের ৫০০ রানের জবাবে ব্যাট করছিল পাকিস্তান। ওপেনার মুদাসসর নজরের দুর্দান্ত শতকে মাত্র এক উইকেট হারিয়ে পাকিস্তান পৌঁছে যায় ৩৯১ রানে। মুদাসসর তখন ১৯৯ রানে ব্যাট করছেন। কিন্তু হঠাৎ ছন্দপতন। শিবলাল যাদবের বল তাঁর ব্যাটের কানায় লেগে জমা পড়ে উইকেটরক্ষক সৈয়দ কিরমানির গ্লাভসে। সূচনা হয় ‘ক্লাব ১৯৯’-এর।
দুই বছর পর মুদাসসর নজরের দুঃখের ভাগিদার হন ভারতের সাবেক অধিনায়ক আজহারউদ্দিন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কানপুর টেস্টে তিনি আউট হয়ে যান ১৯৯ রানে। এই ক্লাবের তৃতীয় সদস্য ম্যাথু এলিয়ট। ১৯৯৭ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে লিডসের হেডিংলিতে ৫০ রানে চার উইকেট হারিয়ে ফেলা অস্ট্রেলিয়াকে বিপদ থেকে উদ্ধার করেন এই বাঁ-হাতি ওপেনার। তারপর ড্যারেন গফের দুর্দান্ত এক ইন-সুইঙ্গারে বোল্ড হয়ে যান ১৯৯ রানে।
আজহার ও এলিয়টের দুঃখ অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি। অন্যরা তাও আগে-পরে ছুঁতে পেরেছেন ২০০ রানের ‘ম্যাজিক ফিগার’। কিন্তু এই ১৯৯ রানই হয়ে আছে আজহার-এলিয়টের টেস্ট ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ ইনিংস।
১৯৯৭ সালে ভারতের বিপক্ষে কলম্বোতে সনাথ জয়সুরিয়া এই অনাকাঙ্ক্ষিত ক্লাবের সদস্য হয়ে যান। ১৯৯৯ সালে অস্ট্রেলিয়া-ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্রিজটাউন টেস্ট ব্রায়ান লারার অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়ের কারণে বিখ্যাত। ওই ম্যাচে একা লড়াই করে ক্যারিবীয়দের এক উইকেটের অসাধারণ জয় এনে দিয়েছিলেন লারা। কিন্তু সেই টেস্টেই ১৯৯ রানে আউট হয়ে যান স্টিভ ওয়াহ।
১৯৯ ক্লাবের প্রথম অপরাজিত সদস্য অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার। ২০০১ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে হারারে টেস্টে একাই লড়াই করেছিলেন জিম্বাবুয়ের সর্বকালের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। কিন্তু শেষ ব্যাটসম্যানও আউট হয়ে গেলে তাঁকে থেমে যেতে হয় ১৯৯ রানে। এক রানের জন্য দ্বিশতক না পাওয়া অপরাজিত আরেক ব্যাটসম্যানের নাম কুমার সাঙ্গাকারা। ২০১২ সালে গল টেস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কা অলআউট হয়ে গেলে ১৯৯ রানে থেমে যেতে হয় ‘সাঙ্গা’কে।
১৯৯ রানে রান আউট হওয়া প্রথম ব্যাটসম্যান ইউনিস খান। ২০০৬ সালে লাহোরে ভারতের বিপক্ষে ঝুঁকিপূর্ণ রান নিতে গিয়ে আউট হয়ে যান পাকিস্তানের এই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান।
স্টিভেন স্মিথের আগে সর্বশেষ এই দুর্ভাগ্যের শিকার ইয়ান বেল। ২০০৮ সালে লর্ডসে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১৯৯ রানে আউট হয়ে গিয়েছিলেন ইংল্যান্ডের এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান।