‘সাতক্ষীরা সায়ানাইড’ মুস্তাফিজ

Looks like you've blocked notifications!
মুস্তাফিজুর রহমান। ফাইল ছবি

আন্তর্জাতিক একদিনের ক্রিকেটে অভিষেকের দিন পাঁচটি উইকেট নিয়ে এবং দ্বিতীয় দিন ছয়টি উইকেট নিয়ে এখন শুধু বাংলাদেশের নয়, গোটা ক্রিকেটবিশ্বের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছেন মুস্তাফিজুর রহমান। সাতক্ষীরা থেকে উঠে আসা দলের নতুন প্রতিভা এই বাঁহাতি পেস বোলারের জয়জয়কার সব গণমাধ্যমে। সায়ানাইডের মতো বিষ ছড়ানো এই প্রতিভাকে তাই ‘সাতক্ষীরা সায়ানাইড’ ডাকা যেতে পারে বলে মত দিয়েছে ভারতের জনপ্রিয় বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার।

আজ সোমবার পত্রিকাটির অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত ‘বাংলাওয়াশের গর্জনের সামনে বিপন্ন ব্র্যান্ড ধোনি’ শিরোনামের প্রতিবেদনে এমন কথাই জানিয়েছে আনন্দবাজার।

মুস্তাফিজের প্রশংসা করে পত্রিকাটি লিখেছে, “ভাবা যায়, রোহিত শর্মা-বিরাট কোহলির ভারত পঁয়তাল্লিশ ওভার টিকতে পারছে না। দুশো তুলতে গিয়ে গলদঘর্ম হয়ে যাচ্ছে। প্রতিপক্ষের বাঁহাতি পেসারকে এমন আতঙ্কের চোখে দেখছে যেন, কোনো এক ওয়াসিম আকরাম দৌড় শুরু করছেন! বাংলাদেশ বাঁহাতি পেসার নিঃসন্দেহে মারাত্মক প্রতিভা। আজকের পর মুস্তাফিজুর রহমানকে অনায়াসে সাতক্ষীরা সায়ানাইড বলে ডাকা যেতে পারে। গত পাঁচ দিনে দুটো ম্যাচ খেলে ১১টা উইকেট নিয়েছেন। দুটো ম্যাচ মিলিয়ে দু-দুবার হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনার সামনে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন। এম এস ধোনি থেকে সুরেশ রায়না—কাউকে পাল্টা মারের বিষ ছড়াতে দেননি। ‘সায়ানাইড’ তো তিনি বটেই। তাঁর স্লোয়ার কাটারগুলো যখন দুঁদে ভারতীয় ব্যাটিংয়ের টুঁটি ছিঁড়ে নেয়, নিঃশব্দ মৃত্যুদূতের বাইরে মুস্তাফিজুরকে আর কিছু মনে হয়নি। পরপর দুই ম্যাচে পাঁচ উইকেট তোলা, ক্রিকেটবিশ্বে আজ পর্যন্ত জিম্বাবুয়ের ব্রায়ান ভিট্টোরির বাইরে কেউ করে দেখাতে পারেননি। মুস্তাফিজুর নিলেন আবার ছয়টা।”

গতকাল রোববারের ম্যাচে মুস্তাফিজ ভারতের ব্যাটসম্যানদের কচুকাটা করেছেন মন্তব্য করে আনন্দবাজার আরো বলছে, “রোহিত শর্মাকে দিনের দ্বিতীয় বলে তুলে নেওয়া দিয়ে যাঁর শুরু। রবীন্দ্র জাদেজাকে বোল্ড করে যার শেষ। ইনিংসের দ্বিতীয় বলে যে ড্রাইভটা খেললেন রোহিত, মনে হয় না তার কোনো যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা তাঁর কাছেও আছে বলে। ক্রিকেটীয় পরিভাষায় ‘লুজ শট’ বললেও তাকে অপমান করা হয়। এবং ছত্রিশ থেকে চুয়াল্লিশ ওভার ভারতীয় ইনিংসের আট ওভারের একটা সময়ে সাক্ষাৎ ‘মৃত্যুদূত’ হিসেবে আবির্ভূত হলেন মুস্তাফিজুর।”

এর পর মুস্তাফিজের নেওয়া উইকেটগুলোর নিখুঁত বর্ণনা করেছে পত্রিকাটি। অক্ষর প্যাটেল আউট হওয়ার বর্ণনায় মুস্তাফিজের বল সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্রেফ পাঁচটা শব্দ। সোজা এলো, প্যাডে পড়ল এবং এলবিডব্লিউ। রবিচন্দ্রন অশ্বিনের আউট হওয়ার বর্ণনা আরো মজার। বলা হয়েছে, অফ কাটার, খোঁচা ও ড্রেসিংরুম।

ইতিহাসগড়া সাফল্যে উচ্ছ্বসিত মুস্তাফিজ গতকাল মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ম্যাচ-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘সব সময়ই চেষ্টা ছিল ভালো কিছু করার। আজো সে লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নেমেছি, তাই সাফল্য পেয়েছি। তবে পেস বোলিং কোচ হিথ স্ট্রিকের পরামর্শে বোলিংয়ের ধরনে কিছুটা পরিবর্তন এনেছি। আর ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেছি বলেই হয়তো সাফল্যের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে পেরেছি।’

একজন তরুণ পেসারের বোলিংয়ে এত বৈচিত্র্যের রহস্য কী? সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রশ্নে সাতক্ষীরার ১৯ বছরের তরুণের জবাব, ‘নিয়মিত অনুশীলন করেছি বলেই হয়তো ভালো কিছু করতে পারছি। এর পেছনে আর কোনো রহস্য নেই। তবে ভালো করার প্রাণপণ চেষ্টা তো ছিলই।’

প্রথম ম্যাচে ভারতের অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির সঙ্গে তাঁর ধাক্কা-কাণ্ড নিয়ে কম হৈচৈ হয়নি। রোববার সেই ধোনির উইকেট নিতে পেরে একটু বেশিই তৃপ্তি লাগছে কি না—এমন প্রশ্নে মুস্তাফিজ বলেন, ‘ছয়টা উইকেট নিয়েই ভালো লেগেছে। ধোনির উইকেট পেয়ে আলাদা কোনো অনুভূতি হয়নি। তেমন কিছু ভাবিওনি।’

পাঁচ-ছয় দিন আগেও তাঁর জীবন ছিল অন্য রকম। তাঁকে সেভাবে কেউ চিনত না। অথচ এখন তিনি দেশের মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত এক বিজয়ী ক্রিকেটার। মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে বদলে যাওয়া জীবন সম্পর্কে মুস্তাফিজের মন্তব্য, ‘আসলেই জীবনটা বেশ বদলে গেছে। চারদিক থেকে ফোন আসছে, সবাই অভিনন্দন জানাচ্ছে। ভালোই লাগছে। এই ধারাবাহিকতা সব সময় ধরে রাখতে পারলে খুব ভালো লাগবে।’