বিশ্বকাপে ভারতের জয় শ্রীনিবাসনের ‘সাজানো’

Looks like you've blocked notifications!
শ্রীনিবাসন। ছবি : সংগৃহীত

২০১৫ সালে ক্রিকেট ওয়ার্ল্ড কাপের কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশের বিপক্ষে ভারতের জয় ছিল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) চেয়ারম্যান এন শ্রীনিবাসনের ‘সাজানো’। এক সাক্ষাৎকারে এই বোমা ফাটালেন আইসিসির সাবেক সভাপতি আ হ ম মুস্তফা কামাল। আজ শুক্রবার ক্রিকেটনেক্সট-এ প্রকাশিত ওই সাক্ষাৎকারে তিনি দাবি করেন, চলতি বছরের মার্চে ভারতের বিজয়ের জন্য নীলনকশায় শ্রীনিবাসন একাই দায়ী। 

‘নিন্দিত’ ও ‘বিতর্কিত’ শ্রীনিবাসন কীভাবে ম্যাচে কারসাজি করেছেন, এ প্রসঙ্গে মুস্তফা কামাল বলেন, ‘ভারতে যে মানুষটি এসব করেছে, সে মেলবোর্নেও একই কাজ করতে পারে।’

মুস্তফা কামালের সাক্ষাৎকারে বিশ্বকাপ ফাইনালের পুরস্কার বিতরণী ও ভারত-বাংলাদেশ কোয়র্টার ফাইনাল প্রসঙ্গে চুম্বক অংশটি দেওয়া হলো।

প্রশ্ন : স্যার, বিশ্বকাপ ক্রিকেটের কোয়ার্টার ফাইনালে বিতর্ক এবং এর বিরুদ্ধে আপনার অবস্থানের কথা সারা বিশ্ব জানে। আপনার সঙ্গে আইসিসি ও এর চেয়ারম্যানের কিছু সমস্যা ছিল। বিশ্বকাপ ফাইনালেও কিছু সমস্যা হয়েছিল বলে জানা যায়। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী? 

মুস্তফা কামাল : দেখুন, বিশ্বকাপ ফাইনালে কোনো বিতর্ক ছিল না। পুরস্কার বিতরণীতে মি. শ্রীনি (শ্রীনিবাসন) সেখানে ছিলেন। তিনি চাইছিলেন, সবাই যেন বিষয়টির তারিফ করে। কিন্তু কেউই বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি। কাজটি না করতে আমি তাঁকে সতর্ক করেছিলাম। কারণ, ক্রিকেট দেখেন এমন সবাই জানেন যে, ফাইনালের পুরস্কার বিতরণীর কাজটি করেন আইসিসি প্রেসিডেন্ট। সব সময়ই এমনটি হয়ে এসেছে। এখন যখন সবাই (সাধারণ মানুষ/বিশেষজ্ঞরা) দেখল কোনো কিছু অন্যভাবে হচ্ছে, তারা এটি সহজে গ্রহণ করবে না। তাই সবাই বিষয়টির বিরোধিতা করেছে এবং তাদের মনোভাব ব্যক্ত করেছে। এটি ছিল তাঁর দুর্ভাগ্য এবং তিনি নিজেকে, মহান খেলা ক্রিকেটকে ও ক্রিকেটের প্রতিষ্ঠানকে অপমান করেছেন। তাই আমি মনে করি, একজন ভালো মানুষের ব্যবহার এমনটি হতে পারে না। আমি অনেক কিছুই করতে পারতাম। আমি মাঠে যেতে পারতাম। আমি ছিলাম আইসিসি প্রেসিডেন্ট, নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে জানতাম, তাই বিশ্বকাপ ট্রফি দিতে পারতাম। সেখানে আমি এর বিরোধিতা করতে পারতাম। কিন্তু আমি সেই পথে যেতে চাইনি। আমি বলেছি, ঠিক, ঠিক আছে। 

শ্রীনিবাসনের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগের তদন্ত চলছে এবং অনেক দুর্নীতিরও অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে। আপনি কি মনে করেন না, আইসিসির উচিত ছিল খেলাকে কলঙ্কিত না হতে দেওয়া? 

আমি এখন আর আইসিসির সঙ্গে নেই। আইসিসির সঙ্গে থাকা অবস্থায় আমি কথা বলেছি এবং সব অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছি। অন্যায় মেনে নিতে না পারায় আমার কাছে অন্য কোনো উপায় ছিল না। প্রেসিডেন্টের পদ থেকে পদত্যাগ করা ছাড়া অন্য কোনো উপায় ছিল না। তাই এখন আমি এ সম্পর্কে কথা বলতে চাই না। আমি পুরো বিষয়টি বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিচার-বিবেচনার জন্য ছেড়ে দিয়েছি। আমি আমার চিন্তা ও ধারণার ব্যাপারে পরিষ্কার।

একজন মানুষকে পরিষ্কার থাকতে হবে। শ্রীনিবাসনের নিজের ও পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে। এত নেতিবাচক অভিযোগের পরও আইসিসির মতো বড় সংগঠনের চেয়ারম্যানের মতো পদের কাছাকাছি তিনি থাকতে পারেন না।  

বিশ্বকাপের পর, বাংলাদেশ-ভারতের সমর্থকদের মধ্যে বেশ বিরোধ দেখা যায়। ভারতের বিপক্ষে সিরিজ জয় কি প্রতিশোধ?

এমন কোনো কিছু হয়নি। এটি ছিল সাময়িক কারণ, এটা ছিল ভুল বোঝাবুঝি। কোয়ার্টার ফাইনালের পর আমি পদত্যাগ করছি এমন সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের সবাই অসন্তুষ্ট হয়। তারা আমার ধারণাকে সমর্থন করে না। অনেকে মনে করে, আমি ভারতের বিপক্ষে বলছি। কিন্তু ভারতের বিপক্ষে আমি কিছু বলিনি। ভারতের খেলোয়াড়রা জানত না কী ঘটছে। তারা জানত না ম্যাচের ভাগ্য। আমার যুক্তি ছিল, খেলা পক্ষপাতিত্বহীন হয়নি। এটি ছিল আইসিসির সিদ্ধান্ত।

কে আইসিসি চালায়—প্রেসিডেন্ট, নাকি চেয়ারম্যান? যেহেতু আমি কোনো অন্যায় করিনি, তবে কে করেছে? করেছেন চেয়ারম্যান। অবশ্যই এটি তাঁর বিরুদ্ধে যায়। কেন ওই দিনের খেলায় স্পাইডার ক্যামেরা ছিল না? ওই দিন কেন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হলো না? কেন ওই দিন বড় পর্দা ব্যবহার করা হলো না? কেন? এটি ছিল আইসিসির আয়োজন। আমি ছিলাম আইসিসির অংশ। তাঁরা কীভাবে এমনটি বলতে পারে? তাঁরা কীভাবে বলে, বাংলাদেশ হারছে এবং ভারত জিতছে। পরবর্তী খেলায় ভারত অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হচ্ছে। তাঁরা কেন বিষয়টি বড় পর্দায় দেখাল? তাঁরা কেন দেখাল না, জিতেগা জিতেগা ইন্ডিয়া জিতেগা, অস্ট্রেলিয়া হারেগা। তাঁরা কি এমনটি বলতে পারবে?  তবে কেন বাংলাদেশের বিপক্ষে? আর আমি প্রতিনিধিত্ব করছিলাম বাংলাদেশের। আমি সেখানে ছিলাম ক্রিকেট বিষয়ে স্বার্থ ঠিক রাখায় এবং ওই দিন এটি যদি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ঘটলেও আমি এর প্রতিবাদ জানাতাম। কারণ এটি ছিল অন্যায়।

আপনি বলুন, ওই ম্যাচ ছাড়া মেলবোর্নের আর কোনো ম্যাচ কি ক্যামেরা ছাড়া খেলা হয়েছে? কেন? কেন এমন নিশানা করা হয়েছিল? কাকে নিশানা করা হয়েছিল? কারণ ভারতে যে এসব জিনিস করছে, সেই মেলবোর্নে সব করতে পারে।