‘হ্যান্ড অব গড’ রেফারির সঙ্গে ম্যারাডোনা!
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2015/08/19/photo-1439981484.jpg)
ফুটবলের খবর যাঁরা রাখেন, তাঁদের পক্ষে ‘হ্যান্ড অব গড’ শব্দসমষ্টির মানে বুঝতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। ১৯৮৬ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ডিয়েগো ম্যারাডোনার দুটো গোলই জায়গা করে নিয়েছে ইতিহাসের পাতায়। এরমধ্যে প্রথম গোলটিতে ছিল হাতের ছোঁয়া। ইংল্যান্ডের গোলরক্ষক পিটার শিল্টনের মাথার ওপর দিয়ে ম্যারাডোনার হাত দিয়ে গোল করার দৃশ্য জন্ম দিয়েছে ফুটবল-ইতিহাসের অন্যতম আলোচিত ছবির। কিন্তু যাঁর ভুলের কারণে সেটা গোল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিল, সেই রেফারির কথা কজন জানেন? তিউনিসিয়ার সেই রেফারি আলী বেনাসুরের নাম নতুন করে আলোচনায় উঠে এসেছে। দীর্ঘদিন পর ম্যারাডোনার সঙ্গে দেখা হয়েছে বেনাসুরের। সেই ‘ঈশ্বরের হাত’ দিয়ে ম্যারাডোনা তাঁকে জড়িয়ে ধরেছেন, শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন।
কয়েক দিন আগে তিউনিসিয়ায় গিয়ে ম্যারাডোনা দেখা করেছিলেন সেই কুখ্যাত গোলের বাঁশি বাজানো রেফারির সঙ্গে। এখন অবশ্য সেই গোল নিয়ে ৭১ বছর বয়সী বেনাসুরের মনে কোনো গ্লানি নেই। দেখা হওয়ার পর দুজনে একে-অন্যকে জড়িয়ে ধরেছেন, শুভেচ্ছার স্মারক হিসেবে উপহার বিনিময় করেছেন। বেনাসুর ম্যারাডোনাকে দিয়েছেন সেই ম্যাচ শুরুর আগে তোলা একটি ছবি। যে ছবিতে আছেন ম্যারাডোনা, ইংল্যান্ড অধিনায়ক শিল্টন ও বেনাসুর। আর ম্যারাডোনা বেনাসুরকে দিয়েছেন অটোগ্রাফসহ একটি আর্জেন্টিনার জার্সি। যেখানে আর্জেন্টিনার ১৯৮৬ বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক লিখেছেন, ‘আলী, আমার আজীবনের বন্ধুকে।’
ম্যাচের ৫১ মিনিটের সময় ইংল্যান্ডের গোলপোস্টের সামনে ম্যারাডোনা এত দ্রুত সেই কুখ্যাত কাজটি করেছিলেন যে তা চোখ এড়িয়ে গিয়েছিল বেনাসুরের। সম্প্রতি ফরাসি ফুটবল ম্যাগাজিন সো ফুট-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, “খেলা শুরু হওয়ার আগে ফিফা আমাদের একটা পরিষ্কার নির্দেশনা দিয়েছিল। যেখানে বলা ছিল, ‘যদি তোমার কোনো সহকারী তোমার থেকে ভালো অবস্থানে থাকে, তাহলে তাঁর সিদ্ধান্তই অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।’ আমি সেটাই করেছিলাম। আমার সহকারী ফ্ল্যাগ তোলেনি।”
তবে সেই কুখ্যাত গোলের মাত্র চার মিনিট পর ম্যারাডোনা এমন এক গোল করেছিলেন, যা এখন বিবেচিত হয় ‘শতাব্দীর সেরা গোল’ হিসেবে। সেই গোলটির নেপথ্যেও তাঁর ‘অবদান’ ছিল বলে মনে করেন রেফারি বেনাসুর। তিনি বলেছেন, ‘ম্যারাডোনা সেই গোলটা একা করেননি। আমিও তাঁকে সহায়তা করেছিলাম। আমি তাঁকে করা তিনটা ফাউল দেইনি। প্রথমবার সে একটু হোঁচট খেয়েছিল। দ্বিতীয়টা হয়েছিল বক্সের কাছাকাছি। আমি তখন ‘অ্যাডভান্টেজ, অ্যাডভান্টেজ’ বলে চেঁচিয়ে উঠেছিলাম। তিনি যখন বক্সের ভেতরে ঢুকছিলেন, দেখলাম টেরি বুচার তাঁকে ফেলে দিচ্ছেন। আমি বাঁশিটা ঠোঁটের কাছে নিয়ে বাজাতে গিয়েও বাজাইনি।’
বেনাসুর বাঁশিতে ফুঁ দেননি বলেই সেদিন জন্ম হয়েছিল ‘শতাব্দীর সেরা গোলের’। কোয়ার্টার ফাইনালে ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনা জিতেছিল ২-১ গোলে। আর ফাইনালে পশ্চিম জার্মানিকে ৩-২ গোলে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো জিতে নিয়েছিল বিশ্বকাপ শিরোপা।