বায়ুদূষণ : দিল্লি কি খেলাধুলার অনুপযোগী?
দিল্লির ফিরোজ শাহ কোটলা স্টেডিয়ামে চলছে ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্ট সিরিজের চতুর্থ ম্যাচ। শহরের এক প্রান্তে অবস্থিত এই স্টেডিয়াম ভারতের রাজধানীর অন্যতম দূষিত এলাকা। সকালে প্রথম সেশনে খেলা চলার সময় স্পষ্ট বোঝা যায় এক ধরনের ধোঁয়াশে উপস্থিতি। বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত রাজধানী হিসেবে পরিচিত দিল্লি শহর খেলাধুলার উপযোগী অবস্থায় আছে কি না, তা নিয়ে কথাবার্তা উঠছে জোরেশোরেই।
শুধু ক্রিকেটই নয়, দিল্লিতে আয়োজিত অন্যান্য খেলাধুলার ক্ষেত্রেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে দূষিত বায়ু। গত রোববার দিল্লির বার্ষিক ম্যারাথন প্রতিযোগিতায় দৌড়বিদদের অংশ নিতে দেখা গেছে মাস্ক পরে। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী সঞ্জয় সুরি বলেছেন, ‘সকালে এত বেশি ধোঁয়া থাকে যে মাস্ক ছাড়া দৌড়ালে আমি অসুস্থ হয়ে যেতে পারতাম।’ দিল্লির বায়ুদূষণের কারণে মুশকিলে পড়েছেন জাতীয় শ্যুটিং চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণকারী শ্যুটাররাও। ২০০২ সালে কমনওয়েলথ গেমসে সোনাজয়ী মোরাদ আলী খান বলেছেন, ‘আপনি যদি লক্ষ্যবস্তুই দেখতে না পান, তাহলে সেটা ভেদ করবেন কীভাবে? ইউরোপের ওপর দিয়ে প্লেনে যাওয়ার সময় নিচে তাকালে সবকিছু স্পষ্ট দেখা যায়। এটা খুবই পরিষ্কার। কিন্তু দিল্লির ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় খুব বেশি কিছু দেখা যায় না। এটা একটা বড় সমস্যা।’
দিল্লির বাতাসে পিএম ২ দশমিক ৫ নামের একটি ক্ষতিকারক কণা অনেক বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছে ভারতে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস। এটা ফুসফুসের জন্য ‘খুবই ক্ষতিকর’ বলেও সতর্ক করা হয়েছে। ধোঁয়ার কারণে মুশকিলের মুখে পড়তে হচ্ছে খেলা সম্প্রচারকারী ক্যামেরাম্যানদেরও। ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্ট ম্যাচ সম্প্রচারের দায়িত্ব পালন করা একজন ক্যামেরাম্যান বলেছেন, ‘এখানে খুবই বাজে অবস্থা। ক্যামেরার আলো ঠিকঠাক করতে গিয়ে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। কারণ, ধোঁয়ার কারণে আলো প্রায় নেই বললেই চলে। কখনো কখনো আমরা মাঠের অন্য প্রান্তও দেখতে পাই না। এটা আমাদের কাজ অনেক কঠিন করে দিয়েছে। আর এই বিষাক্ত বায়ুতে শ্বাস নেওয়াটাও সুখকর কিছু না।’
দিল্লিতে বায়ুদূষণের এই ব্যাপারটা স্বীকার করে নিয়েছেন ভারতের কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান সুনীল গাভাস্কারও। তিনি বলেছেন, ‘ফাস্ট বোলারদের জন্য লম্বা সময় ধরে বল করে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে।
ব্যাটসম্যানরাও তিন রান নিতে পারছে না। কারণ, তারা দম হারিয়ে ফেলছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি অবশ্য কিছুটা সহজ হয়ে আসে। খেলোয়াড় ও আম্পায়ারদের স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে আইসিসি নিশ্চয়ই ব্যাপারটা আমলে নেবে।’ ১৯৯৬ সালে ভারতের বিপক্ষে হারের পর দিল্লির দূষিত বায়ুকেই দোষী করেছিল অস্ট্রেলিয়া। স্বাভাবিকভাবে নিশ্বাস নিতেই কষ্ট হয়েছিল গ্লেন ম্যাকগ্রাদের।
দিল্লির এই বায়ুদূষণের প্রভাব পড়ছে ফুটবলেও। গত বৃহস্পতিবার ভারতের ঘরোয়া প্রতিযোগিতা ইন্ডিয়ান সুপার লিগের ম্যাচে মাঝেমধ্যে বল খুঁজে পেতেই সমস্যা হয়েছে দর্শক-ক্যামেরাম্যানদের। বিদেশি খেলোয়াড়রা বেশি সমস্যার মুখে পড়ছেন বলে মনে করছেন দিল্লির ক্রীড়াবিষয়ক চিকিৎসক অঙ্কিত গুপ্ত। তিনি বলেছেন, ‘যারা পরিষ্কার ও মুক্ত বায়ুতে জীবনযাপন করে অভ্যস্ত, তাদের বিশেষভাবে সতর্ক থাকা উচিত। সব সময় ঘরে বসে থাকাও অবশ্য কোনো বিকল্প উপায় নয়।’ দিল্লি ডায়নামোর হয়ে খেলতে আসা লিভারপুলের সাবেক ডিফেন্ডার আর্ন রিসের মতো খেলোয়াড়রা বেশি সমস্যার মুখে পড়বেন বলে মনে করছেন অঙ্কিত।