কার হাতে বিপিএলের শিরোপা?
খেলোয়াড়দের নিলামের পর অনেকেই কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসকে তেমন পাত্তা দিতে চায়নি। অথচ বিপিএলে প্রথমবার খেলতে এসে সেই দলটিই সবার আগে ফাইনালে উঠে গেছে। মঙ্গলবার শিরোপার লড়াইয়ে মাশরাফির দলের প্রতিপক্ষ মাহমুদউল্লাহর বরিশাল বুলস। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে খেলা শুরু হবে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়।
ফাইনালের আগে একটি তথ্য কুমিল্লাকে অবশ্যই উজ্জীবিত করবে। প্রতিযোগিতার লিগ পর্বে দুইবারই বরিশালকে সহজে হারিয়েছিল তারা। প্রথম ম্যাচে আট উইকেটে আর ফিরতি ম্যাচে সাত উইকেটে।
মুখোমুখি লড়াইয়ে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস এগিয়ে থাকলেও প্রতিযোগিতায় দুই দলের পারফরম্যান্সই ভালো। সমান-সমানই বলা যায়। কুমিল্লা ১১টি ম্যাচ খেলে আটটিতে জিতেছে আর তিনটিতে হেরেছে। অন্যদিকে বরিশাল ১২টি ম্যাচ খেলে নয়টি জিতেছে এবং তিনটি হেরেছে।
দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচে ক্রিস গেইলকে ছাড়াই সাকিব আল হাসানের রংপুর রাইডার্সকে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছে বরিশাল বুলস। শিরোপা লড়াইয়েও ক্যারিবীয় আক্রমণাত্মক ওপেনারকে পাচ্ছে না মাহমুদউল্লাহর দল। তবে বরিশালের জন্য আশার কথা, রান-খরা কাটিয়ে ছন্দে ফিরেছেন সাব্বির রহমান।
প্রতিযোগিতার প্রথম নয় ম্যাচে সব মিলিয়ে সাব্বিরের মাত্র ৬০ রান ছিল। দশম ম্যাচে ব্যাট করার সুযোগ পাননি। কিন্তু সর্বশেষ দুই ম্যাচে তাঁর দুটো চমৎকার ইনিংস বরিশালকে শিরোপার শেষ লড়াইয়ে পৌঁছে দিতে বড় ভূমিকা রেখেছে। এলিমিনেটর ম্যাচে ঢাকা ডায়নামাইটসের বিপক্ষে ৩৯ বলে ৪১ রান করেছিলেন। রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচে সাব্বিরের আরো উজ্জ্বল পারফরম্যান্স। গেইল না খেললেও তাঁর ৪৯ বলে ৭৯ রানের অসাধারণ ইনিংসের ওপরে ভর করে ফাইনালে চলে গেছে বরিশাল বুলস।
ছন্দে আছেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের ইমরুল কায়েসও। ১১ ম্যাচে ২৫৯ রান নিয়ে জাতীয় দলের বাঁ-হাতি ওপেনার এখন প্রতিযোগিতার চতুর্থ সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। মাশরাফির দলের সাফল্যের পেছনে পাকিস্তানের অলরাউন্ডার আশার জাইদিরও বড় অবদান। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখনো অভিষেক না হলেও ১০ ম্যাচে ১৯৯ রান করার পাশাপাশি বাঁ-হাতি স্পিনে ১৬ উইকেট নিয়ে জাইদি এখন তৃতীয় বিপিএলের অন্যতম সফলতম অলরাউন্ডার।
এবারের বিপিএলের সেরা আবিষ্কার নিঃসন্দেহে কুমিল্লার বাঁ-হাতি পেসার আবু হায়দার রনি। ১১ ম্যাচে ২১ উইকেট নিয়ে তিনি এখন টুর্নামেন্টের সেরা বোলার। তবে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের সবচেয়ে বড় অস্ত্র মাশরাফির ক্ষুরধার ক্রিকেট-মস্তিষ্ক। ফিটনেস সমস্যায় সব ম্যাচে বল করতে না পারলেও স্রেফ বুদ্ধিদীপ্ত অধিনায়কত্বের জোরে দলকে ফাইনালে নিয়ে গেছেন ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’।
এখন শুধু শিরোপার অপেক্ষা। লক্ষ্যপূরণের ব্যাপারে আশাবাদী কুমিল্লার অধিনায়ক মাশরাফি, ‘এটা দুইদলের জন্যই বাঁচা-মরার লড়াই। এই লড়াইয়ে জিততে আমরা শতভাগ আশাবাদী। দু-একটি ম্যাচ বাদ দিলে টুর্নামেন্টের প্রতিটি ম্যাচই প্রত্যাশিত পারফরম্যান্স দেখিয়েছে আমাদের খেলোয়াড়রা। ফাইনালেও সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে আশা করছি আমরাই চ্যাম্পিয়ন হবো।’
ফাইনাল পর্যন্ত আসার পেছনে দলের প্রত্যেককে কৃতিত্ব দিয়ে মাশরাফির মন্তব্য, ‘একটা দলের সাফল্যের জন্য সবারই অবদান থাকা প্রয়োজন। খেলোয়াড়-কোচ-কর্মকর্তা প্রত্যেকে কঠোর পরিশ্রম করেছে বলেই আমরা ফাইনালে উঠতে পেরেছি।’
বরিশাল অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর চোখেও শিরোপা-স্বপ্ন, ‘অনেক কষ্টের পর ফাইনালে উঠেছি। তাই শিরোপা জয়ের প্রত্যাশা থাকবেই। শেষ দুটি ম্যাচ যেভাবে খেলেছি সে ধারাবাহিকতা ফাইনালে ধরে রাখতে পারলে আমরাই চ্যাম্পিয়ন হবো।’