আসছে অলিম্পিক, জিকা আতঙ্কে অ্যাথলেটরা
খুব অল্প সময়ের মধ্যেই মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়েছে জিকা ভাইরাস। আগামী এক বছরের মধ্যে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকায় ৩০ থেকে ৪০ লাখ মানুষ মশাবাহিত এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা। ব্রাজিলের সাম্প্রতিক এই পরিস্থিতি ভীষণ দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে এ বছরের অলিম্পিকে অংশ নিতে যাওয়া অ্যাথলেটদের। আগামী আগস্টে ব্রাজিলের রাজধানী রিও ডি জেনিরোতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ক্রীড়াবিশ্বের সবচেয়ে বড় এই প্রতিযোগিতা।
ব্রাজিলিয়ান রেসলার অ্যালিন সিলভা কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন একটি অলিম্পিক পদক জয়ের জন্য। সেই লক্ষ্যে প্রস্তুতি নেওয়ার পাশাপাশি জিকা ভাইরাসের জন্য বাড়তি ব্যবস্থাও নিতে হচ্ছে তাঁকে। বাড়ির বাইরে বের হলে প্রতি ৯০ মিনিট পরপর ব্যবহার করতে হচ্ছে বিশেষ ঔষুধ। এরই মধ্যে দুইবার ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ায় সিলভার ভয়টা আরো বেড়ে গেছে। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘আমার জন্য এটা খুবই দুশ্চিন্তার বিষয়। সবচেয়ে বড় সমস্যা হবে অনুশীলন ও মূল প্রতিযোগিতার সময়- যখন আমি ঔষুধটা ব্যবহার করতে পারব না। এরই মধ্যে আমার দুইবার ডেঙ্গু জ্বর হয়েছে। ফলে আমি একটু বেশিই উদ্বিগ্ন।’ সিলভার মতো ব্রাজিলের আরো অনেক অ্যাথলেটও পড়েছেন জিকা ভাইরাসের দুশ্চিন্তায়।
ব্রাজিলের বাইরে অন্যান্য দেশ থেকে অলিম্পিকে অংশ নিতে যাওয়া অ্যাথলেটরাও জিকা ভাইরাসের বিপদ নিয়ে ভাবতে শুরু করেছেন। অনেক কোচই তাঁদের শিষ্যদের পরামর্শ দিয়েছেন ব্রাজিলে গিয়ে ঘরের বাইরে খুব বেশি না বেরোনোর জন্য। জিকা ভাইরাসের কারণে বিকৃত ও বিকলাঙ্গ শিশু জন্ম নেওয়ার ঘটনায় বিশেষভাবে দুশ্চিন্তায় আছেন আমেরিকার রেসলার অ্যাডেলিন গ্রে। সম্প্রতি ব্রাজিলে একটি টেস্ট ইভেন্টে অংশ নিতে এসে তিনবারের এই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন বলেছেন, ‘আমি যদি আগামী মাসে গর্ভধারণের পরিকল্পনা করতাম তাহলে চরম অস্বস্তিতে থাকতে হতো। হয়তো আমি এখানে আসার সিদ্ধান্তই পরিবর্তন করতাম।’ অল্প কিছুদিনের জন্য ব্রাজিলে এসে সব সময়ই লম্বা হাতার জামা-প্যান্ট, ও নানা রকম ঔষুধ, পোকা-মশা মারার স্প্রে ব্যবহার করছেন গ্রে।
রেসলারদের একই রকম পরামর্শ দিয়েছেন জাপানের কোচট শিগেও কিনাসে। তিনি বলেছেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি হোটেল ছেড়ে খুব বেশি বাইরে না যাওয়ার। যদি আমার অ্যাথলেটরা বাইরে বাজার করার জন্য যেতে চায়, তাহলে আমিও তাদের সঙ্গে যাই।’
অলিম্পিকের সময় জিকা ভাইরাসের হুমকি মোকাবিলার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ব্রাজিলের আয়োজকরা। প্রতি দুই সপ্তাহ পরপর ভালোভাবে অলিম্পিক ভেন্যুগুলো পরিষ্কার করা হচ্ছে। মশারা বংশবৃদ্ধি করতে পারে এমন জায়গাগুলোর দিকে রাখা হচ্ছে কড়া নজর। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থাকলেও রিও অলিম্পিক বাতিল বা স্থগিত করার কোনো চিন্তাভাবনা কারোই নেই বলে আশা প্রকাশ করেছেন আয়োজকদের মুখপাত্র মারিও আন্দ্রাদা। তবে অনেক অ্যাথলেট শেষপর্যায়ে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নিতে পারেন বলে আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। সেই সঙ্গে রিও অলিম্পিকের সময় কমে যেতে পারে ক্রীড়াপ্রেমী অনেক মানুষের ব্রাজিল গমন।