লক্ষ্যে অবিচল সাব্বির

Looks like you've blocked notifications!
সাব্বির রহমান। ছবি : এএফপি

বিশ্বকাপের দলে জায়গা পাওয়ার কথা কল্পনাও করতে পারেননি। বিশ্বকাপের আগে মাত্র পাঁচটি ওয়ানডে খেলার অভিজ্ঞতা ছিল। পারফরম্যান্সও তেমন উল্লেখ করার মতো নয়। গত নভেম্বরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অপরাজিত ৪৪ রান দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হলেও পরের চার ম্যাচে তাঁর রান ছিল ০, ২২, ৪ ও অপরাজিত ১৩। তাই বিশ্বকাপের চূড়ান্ত দলে সুযোগ পেয়ে খুশি হওয়ার পাশাপাশি অবাকও কম হননি সাব্বির রহমান।

তখনই প্রতিজ্ঞা করেন, যেভাবে হোক বিশ্বকাপে ভালো করতেই হবে। এমন সুবর্ণ সুযোগ কিছুতেই হাতছাড়া করা যাবে না। বিশ্বকাপের মতো বিশাল মঞ্চে নিজেকে চেনানোর সুযোগ পাওয়া তো ভাগ্যের কথা।

আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে মাত্র তিন রান করে আউট হয়ে যাওয়ায় সাব্বিরের স্বপ্ন ধাক্কা খায় শুরুতেই। তবে হতোদ্যম হননি। বরং ভালো করার স্পৃহা বেড়ে যায় আরো। আগের ম্যাচের ব্যর্থতাকে শক্তিতে পরিণত করে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পরের ম্যাচেই খেললেন ৫৩ রানের দারুণ এক ইনিংস।

শ্রীলঙ্কার কাছে বাংলাদেশ হেরে গেলেও ওই ইনিংসটা আত্মবিশ্বাস অনেক বাড়িয়ে দেয় সাব্বিরের। একটা স্বপ্নপূরণের আনন্দও উদ্বেলিত করে তোলে তাঁকে, ‘বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার আগেই আমার সংকল্প ছিল মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে খেলার সুযোগ পেলে হাফ সেঞ্চুরি করবই। তবে মনের মধ্যেই স্বপ্নটা লুকিয়ে রেখেছিলাম। কাউকে কথাটা বলিনি। হাফ সেঞ্চুরিটা করার পর এত ভালো লেগেছে যে বলে বোঝাতে পারব না।’

এমসিজি মানে মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে অর্ধশতক করে সাব্বিরের সবচেয়ে বেশি মনে পড়ছিল বাবার কথা। তাঁর বাবা সব সময় চাইতেন ছেলে একদিন বিশ্বকাপে খেলবে। বাবার স্বপ্নপূরণ করতে পেরে সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে সাব্বিরের।

এমসিজির সেই ইনিংস থেকে পাওয়া আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান সাব্বির আর পেছন ফিরে তাকাননি। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৪০ বলে অপরাজিত ৪২ আর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২৩ বলে ৪০ রানের দুটো আক্রমণাত্মক ইনিংস ভীষণ তৃপ্তি দিয়েছে তাঁকে। কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতের বিপক্ষেও তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে ৪০ বলে ৩০ রানের একটা ভালো ইনিংস। ছয় ম্যাচে ৩৬.৪০ গড়ে ১৮২ রান, স্ট্রাইক রেট ৯৮.৩৭—বিশ্বকাপের মতো কঠিন টুর্নামেন্টে একজন ‘অনভিজ্ঞ’ ২৩ বছর বয়সী ব্যাটসম্যানের এমন পারফরম্যান্স অবশ্যই প্রশংসনীয়।

প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে খেলতে গিয়ে এত ভালো পারফরম্যান্সের ‘রহস্য’ কী? এমন প্রশ্নে বিনয়ী সাব্বিরের জবাব, ‘মানুষ কষ্ট করলে সাফল্য পাবেই। বিশ্বকাপের আগে তিন মাস আমি কঠোর পরিশ্রম করেছিলাম। চেষ্টা করেছি নিজেকে শতভাগ উজাড় করে দিতে। তারই সুফল অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ভালো পারফরম্যান্স।’

তবে নিজের পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট হলেও বাংলাদেশ সেমিফাইনালে উঠতে না পারায় ভীষণ কষ্ট পেয়েছেন সাব্বির। কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে শেষ চারে খেলার আশায় বুক বেঁধেছিলেন। আশাভঙ্গের বেদনার রাতটা কেমন কেটেছিল, তা শোনা যাক সাব্বিরের মুখেই, ‘এটা ঠিক যে বিশ্বকাপে এটাই আমাদের সবচেয়ে ভালো পারফরম্যান্স। কিন্তু সেমিফাইনালে খেলতে না পারার আক্ষেপ কিছুতেই দূর হচ্ছে না। সেমিফাইনালে উঠতে পারলে খুব ভালো লাগত। ভারতের কাছে হেরে যাওয়ার পর সারা রাত ঘুমাতে পারিনি।’

সেই ম্যাচের হতাশা বাদ দিলে বিশ্বকাপ থেকে বাংলাদেশের অর্জনের পাল্লা অনেক ভারী বলেই মনে করেন সাব্বির। বিশ্বকাপের সাফল্যকে সঙ্গী করে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় তাঁর কণ্ঠে, ‘আমাকে অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে, অনেক পরিশ্রম করতে হবে, আরো অনেক ভালো খেলতে হবে। বিশ্বকাপে ভালো করার তৃপ্তি নিয়ে বসে থাকতে চাই না। আমার লক্ষ্য আরো ১০ বছর বাংলাদেশ দলের হয়ে খেলা।’

ছোটবেলায় সাব্বিরের স্বপ্নের নায়ক ছিলেন শহীদ আফ্রিদি। পাকিস্তানের এই অলরাউন্ডারের অন্ধভক্ত ছিলেন তিনি। স্বপ্ন দেখতেন আর ভাবতেন, ‘যদি আফ্রিদির মতো খেলতে পারতাম, জাতীয় দলে খেলতে পারতাম।’ স্বপ্নপূরণ করে আজ তিনি বাংলাদেশ দলের অন্যতম সদস্য। আফ্রিদির সঙ্গে দারুণ মিলও আছে সাব্বিরের। দুজনই আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান। আফ্রিদির মতো সাব্বিরও লেগস্পিনার।

বিশ্বকাপে ভালো পারফরম্যান্স দায়িত্ব অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে বলে মনে করেন সাব্বির। তাঁর উপলব্ধি, ‘জাতীয় দলের হয়ে খেলা মানে পুরো দেশের আমার দিকে তাকিয়ে থাকা। দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারলেই মনে করব আমি সফল হতে পেরেছি। দলকে জেতানোর মতো এমন কিছু ইনিংস আমি খেলতে চাই, যা সারা জীবন মানুষ মনে রাখবে। এখন থেকে আমার সেই চেষ্টাই থাকবে।’