তাসকিনের স্বপ্ন, তাসকিনের লক্ষ্য

Looks like you've blocked notifications!
ছবিটা বেশ আগের। গত বছরের ১৭ জুন আবির্ভাব হয়েছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটাকাশের এক নতুন তারকার। ভারতের বিপক্ষে অভিষেক ম্যাচেই পাঁচ উইকেট নিয়ে তাসকিন আহমেদের উল্লাস। ছবি : এএফপি

লক্ষ্য ছিল বিশ্বকাপের সেরা দশ বোলারের মধ্যে থাকা। সেই লক্ষ্য পূরণ হয়নি, তবে নয় উইকেট নিয়ে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সফলতম বোলারের নাম তাসকিন আহমেদ। এমন সাফল্যে দারুণ আনন্দিত এই তরুণ পেসার। জীবনের প্রথম বিশ্বকাপে পাওয়া সাফল্য তাঁর আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে অনেকখানি। এই সাফল্যের প্রেরণাকে সঙ্গী করে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়াই তাসকিনের লক্ষ্য।

তাসকিনের এখন স্বপ্ন জাতীয় দলে প্রতিষ্ঠা পাওয়া। কঠোর পরিশ্রম আর অধ্যবসায় যে একজন পেসারকে সাফল্যের সর্বোচ্চ শিখরে নিয়ে যেতে পারে, সেই বিশ্বাস তাঁর আছে, ‘পরিশ্রম করেছি বলেই বিশ্বকাপে সাফল্য পেয়েছি। তবে আরো সাফল্যের জন্য আরো কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। সেভাবেই এগিয়ে যেতে চাই আমি।’

অস্ট্রেলিয়া থেকে ফেরার পর তাঁকে নিয়ে মাতামাতি চলছে। তবে বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার কয়েক মাস আগের দুঃসহ স্মৃতি এখনো তাড়া করে তাসকিনকে। চোটের কারণে গত নভেম্বর-ডিসেম্বরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ঘরের মাঠের সিরিজে খেলতে পারেননি। বিশ্বকাপ নিয়েও শঙ্কা জেগেছিল। তবে কঠোর পরিশ্রম করে, প্রিমিয়ার লিগে ভালো খেলে বিশ্বকাপের দলে জায়গা করে নেন তিনি।

ক্রিকেটের সেরা আসরে সাফল্য পেয়ে খুশি, তবে কোনো আত্মতৃপ্তি নেই তাসকিনের মনে, ‘আমাকে আরো ভালো করতে হবে। এখানে বসে থাকলে চলবে না। সাফল্যের জন্য আমি সব কিছু করতে প্রস্তুত।’ সেমিফাইনালে খেলতে না পারার হতাশা অবশ্য এখনো ভুলতে পারেননি।

এখন তাসকিনের পরিকল্পনা সামনের ‘হোম’ সিরিজগুলো নিয়ে। এপ্রিলে বাংলাদেশ সফরে আসছে পাকিস্তান। এরপর আসবে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারত। ঘরের মাঠে সামনের সিরিজগুলো ভালো খেলাই তাঁর লক্ষ্য।

বিশ্বকাপে মাশরাফি বিন মুর্তজাকে কাছ থেকে দেখে তাসকিন মুগ্ধ। বাংলাদেশ দলের অধিনায়কের প্রশংসায় তিনি পঞ্চমুখ, ‘মাশরাফি ভাই দলের প্রত্যেক জুনিয়র ক্রিকেটারকে আগলে রাখেন। আমাকে তো নিজের ছোট ভাইয়ের মতো দেখেন। তাঁর স্নেহ-শাসন আমাকে ভীষণ অনুপ্রাণিত করেছে।’

বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচের আগে জাতীয় সংগীত গাওয়ার সময় আবেগাক্রান্ত হয়ে পড়েছিলেন তাসকিন। সেই অনুভূতি এখনো রোমাঞ্চ জাগায় তাঁর মনে, ‘ক্যানবেরায় প্রথম ম্যাচ খেলতে নামার আগে যখন জাতীয় সংগীত গাইছিলাম, তখন গা যেন শিউরে উঠছিল। সেই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।’

২২ মার্চ অস্ট্রেলিয়া থেকে দেশে ফিরে মানুষের অনাবিল ভালোবাসাও আবেগের ঢেউ তুলেছিল তাসকিনের হৃদয়ে। ঢাকার মোহাম্মদপুরের জাকির হোসেন রোডে তাঁর বাসা। তাসকিনের গাড়ি ঢুকতেই হাজারো মানুষের ভালোবাসার স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। যেন এক ‘বিশ্বজয়ী বীরে’র ঘরে ফেরা। তার পর থেকেই তাসকিন ঘরের বাইরে বেরোলেই এলাকার মানুষ ছেঁকে ধরে তাঁকে। ভক্তদের আবদার মেটাতে হয় ‘সেলফি’ তুলে আর ‘অটোগ্রাফ’ দিয়ে। বাসার সামনে সব সময় ভক্তদের ভিড় লেগেই থাকে।

ভক্তদের দাবি হাসিমুখে মেটান আগামী ৩ এপ্রিল ২০ বছর পূর্ণ করতে যাওয়া এই প্রতিশ্রুতিশীল পেসার, ‘এই ফর্ম সব সময় ধরে রাখতে চাই। তাহলে আমাকে ঘিরে আগ্রহও সব সময় থাকবে। ভক্তদের ভিড় আমাকে কখনোই বিরক্ত করে না। বরং আমি সব সময় এটা উপভোগ করি।’

আপাতত তিনি তাকিয়ে রোববারে ফাইনালের দিকে। ফাইনালে তাসকিন কার সমর্থক? জানালেন নতুন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দেখতে পেলেই বেশি খুশি হবেন, ‘আমার একটাই চাওয়া। ফাইনাল যেন ফাইনালের মতো জমজমাট হয়। একতরফা ম্যাচ দেখতে চাই না। তবে আমি চাই নিউজিল্যান্ড জিতুক। নতুন কোনো দল বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হোক।’