মুস্তফা কামালের পদত্যাগের ঘোষণা
আইসিসি সভাপতির পদে আর থাকতে রাজি নন আ হ ম মুস্তফা কামাল। বুধবার অস্ট্রেলিয়া থেকে দেশে ফিরে হযরত শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এক সংবাদ সম্মেলনে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। সংবাদ সম্মেলন শেষে আইসিসির কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েও দিয়েছেন।
বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতের কাছে বাংলাদেশ হেরে যাওয়ার পর ‘বিতর্কিত’ আম্পায়ারিং নিয়ে তীব্র সমালোচনা করায় আইসিসি কর্মকর্তাদের রোষের মুখে পড়তে হয়েছিল মুস্তফা কামালকে। আইসিসির প্রধান নির্বাহী ডেভ রিচার্ডসন তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করতেও ছাড়েননি। এ নিয়ে জল অনেক দূর গড়িয়েছিল।
তবে মুস্তফা কামালকে সবচেয়ে আহত করেছে ফাইনালের আগের দিনের একটি ন্যক্কারজনক ঘটনা। সংবাদ সম্মেলনে সেই ঘটনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ফাইনালের আগের দিন মাত্র এক ঘণ্টার নোটিশে একটা মিটিং ডাকেন আইসিসি চেয়ারম্যান শ্রীনিবাসন। সেখানে এই বিতর্কিত ব্যক্তি আমাকে বলেন, ‘কোয়ার্টার ফাইনালে আম্পায়ারিং নিয়ে আপনি যা বলেছেন, তার জন্য আপনাকে ক্ষমা চেয়ে বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে।’ তাঁর এ কথার প্রতিবাদ করে বলি, আমি বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে বাজে আম্পায়ারিংয়ের সমালোচনা করেছি। ক্ষমা চাওয়া বা বক্তব্য প্রত্যাহারের প্রশ্নই ওঠে না।”
কোয়ার্টার ফাইনালের পর দেওয়া বক্তব্য অবশ্য আরেকটু ‘মার্জিত’ হলে ভালো হতো বলে মনে করেন মুস্তফা কামাল। তাঁর মতে, ‘আমার প্রতিটি কথাই একেবারেই খাঁটি কথা। তবে এতটা উচ্চস্বরে বলা হয়তো ঠিক হয়নি। সেজন্য আমার কাছে কৈফিয়ত চাইতে পারে আইসিসি। কিন্তু এর বাইরে কিছু বলতে পারে না তারা।’
পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে নিজেকে ‘নির্ভার’ মনে করছেন মুস্তফা কামাল। এ প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘সত্যি কথা বলা কোনো অপরাধ নয়। আমার এ ঘোষণার ফলে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের বাজে আম্পায়ারিং নিয়ে তদন্তে সুবিধাই হবে। সেদিন বাংলাদেশকে বঞ্চিত করা হয়েছিল।’
কোয়ার্টার ফাইনাল চলার সময় মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডের জায়ান্ট স্ক্রিনে ভারতের সমর্থন এবং ম্যাচে প্রযুক্তির ব্যবহার কম হওয়ায় মুস্তফা কামাল ক্ষুব্ধ। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে আইসিসির কোনো ইভেন্ট হলে তাদের অনুমতি ছাড়া একটি কাজও করা যায় না। অথচ সেদিন খেলা চলার সময় জায়ান্ট স্ক্রিনে বার-বার দেখানো হচ্ছিল ‘জিতেগা ভাই জিতেগা, ইন্ডিয়া জিতেগা’। তা ছাড়া মাঠে স্পাইডার ক্যামেরার ব্যবহারও কম হয়েছে। যে কারণে আম্পায়ারদের সিদ্ধান্ত নিতেও অসুবিধা হয়েছে।’
ফাইনালে আইসিসির নিয়মনীতি পাশ কাটিয়ে রীতিমতো অপমান করা হয় মুস্তফা কামালকে। চ্যাম্পিয়ন দলের হাতে আইসিসি সভাপতির ট্রফি তুলে দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তাঁকে সে সুযোগ দেওয়া হয়নি। মাইকেল ক্লার্কদের ট্রফি দেন শ্রীনিবাসন।
এ নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুস্তফা কামাল। বুধবার বিমানবন্দরে নেমেই সংবাদ সম্মেলনে পদত্যাগের ঘোষণা দিতে তাই কোনো দ্বিধা করেননি বিসিবির সাবেক সভাপতি।
এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের ক্রিকেটে কোনো বিরূপ প্রভাব ফেলবে না বলেই মনে করেন তিনি, ‘আমি তো ভারতের বিপক্ষে কোনো কথা বলিনি। এখনো আমি ভারতের বিপক্ষে নই। আমি শুধু একজন ব্যক্তির বিপক্ষে কথা বলেছি। এটা বাংলাদেশের ক্রিকেটে তেমন প্রভাব ফেলবে না বলেই আমার বিশ্বাস।’
প্রায় ছয় বছর আইসিসির বিভিন্ন পদে ছিলেন মুস্তফা কামাল। প্রথমে ছিলেন নির্বাহী কমিটির সদস্য। এরপর দুই বছর সহসভাপতি থাকার পর ৯ মাস আগে সভাপতির দায়িত্ব পান তিনি।