মুরালি এখন শ্রীলঙ্কারই শত্রু!
অস্ট্রেলিয়ার জার্সি গায়ে মুত্তিয়া মুরালিধরনকে দেখলে কে বলবে যে, এই অস্ট্রেলিয়ার আম্পায়ারদের জন্যই বেশ কয়েকবার হুমকির মুখে পড়েছিল তাঁর সম্ভাবনাময় ক্রিকেট ক্যারিয়ার? খেলোয়াড়ি জীবনের সেসব তিক্ত সম্পর্কের স্মৃতি দূরে ঠেলে এখন দিব্যি অস্ট্রেলিয়ার বোলিং পরামর্শক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন মুরালি। সেটাও আবার নিজ দেশ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের জন্য। শ্রীলঙ্কারই মাটিতে! ব্যাপারটা হজম করা বেশ কঠিনই হচ্ছে শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট বোর্ড ও সমর্থকদের জন্য।
খেলোয়াড়ি জীবনে অস্ট্রেলিয়াই ছিল মুরালিধরনের অন্যতম প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। কিংবদন্তি এই অফস্পিনারের বিরুদ্ধে চাকিংয়ের অভিযোগ বেশ কয়েকবার এসেছিল অস্ট্রেলিয়ার পক্ষ থেকে। আর এ জন্য অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বেশ কয়েকবার দ্বন্দ্বে জড়াতে হয়েছিল শ্রীলঙ্কাকে। একবার তো খেলার মাঝখানে মাঠ থেকেই বেরিয়ে গিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটাররা। আর এখন মুরালিধরনের বিরুদ্ধে বাজে আচরণের অভিযোগ এনে অস্ট্রেলিয়ার কাছেই বিচার দিতে যাচ্ছে শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট বোর্ড।
তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজ শুরুর আগে অনুশীলন করা নিয়ে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন মুরালি। গত শনিবার পাল্লেকেল্লে স্টেডিয়ামে তিনি এমন একটা সময়ে অনুশীলন করতে গিয়েছিলেন যখন কোনো দলেরই সেখানে অনুশীলনের অনুমতি ছিল না। এই ঘটনায় চটে গিয়ে মাঠকর্মীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছেন বলে অভিযোগ মুরালির বিরুদ্ধে। পরে তিনি নাকি বাজে আচরণ করেছেন শ্রীলঙ্কার টিম ম্যানেজারের সঙ্গেও। এ নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার টিম ম্যানেজমেন্টের কাছে নালিশ জানানো হবে বলে জানিয়েছেন শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি থিলাঙ্গা সুমাথিপালা। তিনি বলেছেন, ‘মুরালিধরনের আচরণ একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। আমরা ব্যাপারটা অস্ট্রেলিয়ার টিম ম্যানেজমেন্টকে জানাব। এমনটা হওয়া উচিত না। আমরা খুবই আঘাত পেয়েছি।’
যে অস্ট্রেলিয়ার জন্য ক্রিকেট ক্যারিয়ারটাই শেষ হয়ে যেতে বসেছিল, সেই অস্ট্রেলিয়ার হয়েই মুরালির কাজ করাটাকে মেনে নিতে পারছেন না সুমাথিপালা। তিনি বলেছেন, ‘পেশাগতভাবে চিন্তা করলে মুরালি যে কোনো বিদেশি দলের কোচ হিসেবেই কাজ করতে পারেন। কিন্তু এটা খুবই আশ্চর্যজনক যে, তিনি অস্ট্রেলিয়ার হয়ে কাজ করছেন। যারা তাঁকে ক্রিকেট থেকে বের করে দেওয়ার অনেক চেষ্টা করেছে। দীর্ঘমেয়াদে তিনি তাঁর সমর্থকদের কাছে নিজের ভাবমূর্তিই ক্ষুণ্ণ করছেন।’
তীব্র সমালোচনার মুখে মুরালিও সম্প্রতি নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন ইউটিউবে। যেখানে তিনি বলেছেন, ‘আমি একটা পেশাগত দায়িত্ব পালন করছি। আমি বিশ্বাসঘাতক না। শ্রীলঙ্কা কখনো আমাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করেনি। কাজেই এখন আমি অস্ট্রেলিয়াকে সাহায্য করছি, যারা আমার কাজের মূল্যায়ন করে।’
মুরালিধরনের এই ব্যাখ্যা শ্রীলঙ্কার সমর্থকদের কাছে কতটা গ্রহণযোগ্য হবে, তা নিশ্চিত করে বলা মুশকিল। তবে মাঠে না থাকলেও পুরো সিরিজজুড়ে মুরালি যে আলোচনার কেন্দ্রে থাকবেন, তা অনুমান করাই যায়।
আগামী মঙ্গলবার থেকে শুরু হবে অস্ট্রেলিয়া-শ্রীলঙ্কার মধ্যকার তিন ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথম টেস্ট।