শুভ জন্মদিন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন

Looks like you've blocked notifications!
লিওনেল মেসি। ছবি : এএফপি

“একদিন ভালোবেসেছিলাম তোমায় / সেই ভালোবাসার রেশ আজও রয়ে গেছে / হয়তো এই অনুভূতি আজীবন রয়েই যাবে।”

রুশ সাহিত্যসম্রাট আলেকজান্ডার পুশকিনের লেখা কবিতার পঙক্তিগুলো লিওনেল মেসির ক্ষেত্রে যথার্থ। তা হবেই বা না কেন? ফুটবলের জাদুকরকে যারা ভালোবেসেছেন তাদের অন্তরে এই রেশ রয়ে যাবে আজীবন। ফুটবল মাঠে আনন্দ-হাসির জোয়ারে ভাসানো মহাতারকার জন্মদিন আজ। শুভ জন্মদিন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন লিওনেল আন্দ্রেস মেসি।

জীবনের পার করে আসা ৩৫টি জন্মদিনের চেয়ে এবারেরটি সম্পূর্ণ আলাদা। সেটি শুধু মেসির জন্যই নয়, বরং মেসিকে ভালোবাসা সারা পৃথিবীর কোটি ভক্তের জন্যই অন্যরকম। যে মেসিকে দেখার জন্য দীর্ঘ অপেক্ষায় ছিল পুরো পৃথিবী, সেই মেসিই এবার ধরা দিয়েছেন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়ে।

একজন খেলোয়াড়ের জীবনে যা যা জেতার স্বপ্ন তার সবটাই মেসি নিজের করে নিয়েছিলেন। বাকি ছিল শুধু বিশ্বকাপের সোনালি ট্রফি। মরুর বুকে সেটাও পূরণ হয়ে গেল। ১৮ ডিসেম্বর, ২০২২। রোমাঞ্চ, রুদ্ধশ্বাস, স্নায়ুক্ষয়ী—কোনো শব্দই যেন সেই ম্যাচটির জন্য যথেষ্ট নয়। কাতার বিশ্বকাপের হাইভোল্টেজ সেই ফাইনালে ভাগ্যের পরীক্ষায় জ্বলে উঠল আর্জেন্টিনার জয়ের মশাল। মেসির হাতে উঠল সোনালি ট্রফি, শেষ হয় আর্জেন্টিনার ৩৬ বছরের অপেক্ষা! আর্জেন্টিনার ৩৬ বছরের অপেক্ষা ঘুচিয়ে মেসি নিজেও পা বাড়ালেন ৩৬ বসন্তে।

বিশ্বকাপের স্বপ্ন পূরণ হওয়ার পর মেসি নিজেও জানান, ফুটবলে আর কিছু জেতার বাকি নেই তার। যা পাওয়ার তার সবটাই পেয়েছেন। জীবন হয়েছে পরিপূর্ণ। এবার শুধু উপভোগ করে যেতে চান। সেজন্য, ইউরোপের ফুটবলের আলো ছেড়ে মেসি পাড়ি জমাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টার মায়ামিতে। যেখানে সব প্রচারের আলো থেকে দূরে সরে শুধু ফুটবলটাকে উপভোগ করবেন। সময় কাটাবেন পরিবারের সঙ্গে।

ফুটবলের লম্বা ক্যারিয়ারে দেশের জার্সিতে শিরোপা জিততে না পারায় কম কথা শুনতে হয়নি মেসিকে। সেই মেসি ক্যারিয়ারের অন্তিম পর্যায়ে এসে জিতেছেন হ্যাটট্রিক শিরোপা। ২০২১ সালে প্রথমে কোপা আমেরিকার শিরোপা ছোঁয়া। এরপর ২০২২ সালে ফিনালিসিমা ও বিশ্বকাপ। এক বছরের মধ্যে এত সুখস্মৃতি নিয়ে জীবনের নতুন বছর শুরু করলেন আর্জেন্টাইন জাদুকর।

তার আগে ক্লাব ফুটবলের ক্যারিয়ারও পূরণ করেন পূর্ণতা দিয়ে। ১২টি লিগ আর ৪টি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ী মেসি ব্যক্তিগত অর্জনেও সেরা। ব্যক্তিগত অর্জনে ঝলমলে মেসি রেকর্ড সাতবার শুধু ব্যালন ডি’অরই জিতেছেন। সামনে ডাকছে আরেকটি ব্যালন ডি’অর। যার ধারে কাছেও নেই কেউ।

যার বাঁ পায়ের জাদুতে সবাই বুঁদ হয়ে আছে সেই মেসির ছোটবেলাটা এত মসৃন ছিল না। আর্জেন্টিনার রোজারিও শহরে ১৯৮৭ সালের ২৪ জুন জন্মগ্রহণ করেন মেসি। জর্জ মেসি ও সেলিয়া কুচেত্তিনির সংসারের তৃতীয় সন্তান মেসি। ছোট্ট থাকতেই তার ধরা পড়ে দৈহিক অস্বাভাবিকতা। মাত্র ১১ বছর বয়সে মেসির শরীরে গ্রোথ হরমোন জনিত জটিলতা দেখা দেয়। চিকিৎসা করানোর মতো সামর্থ্য ছিল না পরিবারের। ছেলের চিকিৎসার জন্য বাবা-মা ছুটে যান বার্সেলোনাতে। এর পরের গল্প সবারই জানা।   

২০০০ সালে বার্সার বিখ্যাত ‘লা মেসিয়া’ একাডেমির জন্য প্রতিভাবান ফুটবলার খুঁজে বের করার প্রক্রিয়া চলছিল। ফুটবলের ভাষায় যাকে বলে ‘স্কাউট’। তখনই নিউওয়েলস ওল্ড বয়েজের মাঠে ছোটখাটো গড়নের মেসির পায়ের কারিকুরি দেখে মুগ্ধ হন বার্সেলোনার সাবেক ফুটবলার ও তৎকালীন টেকনিক্যাল সেক্রেটারি কার্লোস রেক্সাস। আর দেরি না করে ‘টিস্যু পেপারে’ চুক্তি সেরে মেসিকে  বার্সেলোনায় ভেড়ানো হয়। নেওয়া হয় চিকিৎসার ভার। পরবর্তীতে সেই মেসিই হয়ে ওঠেন কাতালানদের প্রাণ ভোমরা। এরপর অনেক বছর পেরিয়েছে। হৃদয় উজাড় করে একের পর এক বার্সাকে সাফল্য এনে দিয়েছেন মেসি। আর্থিক জটিলতায় শেষ হয় বার্সেলোনা অধ্যায়। এরপর ফ্রান্স ঘুরে মেসির পরবর্তী গন্তব্য মায়ামি।

জীবনের এত পর্যায় পার করে মেসি যেন এখনও টগবগে তরুণ। বয়স বাড়ার বদলে যেন কমছে। ৩৬-এ পা দিয়েও মেসি ছুটছেন আপন গতিতে। সব পূর্ণতায় ভর্তি ঝুলি নিয়ে ভেসে ভেড়াচ্ছেন সুখের সাগরে। যে সুখের সাক্ষী পুরো ফুটবল দুনিয়া।

৩৬তম জন্মদিনে ভক্তরাও হয়তো কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মতো বলবেন—

“দাওনা ছেড়ে ওকে

স্নিগ্ধ-আলো শ্যামল-ছায়া বিরল-কথার লোকে,

                বেড়াহীন বিরাট ধূলি-পর,

সেই যেখানে মহাশিশুর আদিম খেলাঘর।”