বিশ্বসেরা আম্পায়ার হওয়ার স্বপ্ন দেখেন জেসি

Looks like you've blocked notifications!

ছিলেন জাতীয় দলের ক্রিকেটার। ধারাভাষ্য দিয়েছেন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে। এখন ধ্যানজ্ঞানের পুরোটা আম্পায়ারিং নিয়ে। বাংলাদেশের প্রথম আন্তর্জাতিক স্বীকৃতপ্রাপ্ত নারী আম্পায়ার সাথিরা জাকির জেসি। মাঠের মানুষ মাঠে থাকবেন বলেই বেছে নিয়েছেন এই পেশাকে। এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে কথা বলেছেন নিজের ভবিষ্যৎ ভাবনা, দেশের নারী ক্রিকেটের সেকাল-একালসহ আরও নানা বিষয়ে।

ক্রিকেটার থেকে ধারাভাষ্যকার, ধারাভাষ্যকার থেকে আম্পায়ার, তিনটি আলাদা ভূমিকা। হোয়াট নেক্সট?

সাথিরা জাকির জেসি : বিশ্বের সেরা আম্পায়ার হওয়া। গত দুটি বছর আমি শুধু আম্পায়ারিংয়ে সময় দিয়েছি। ধারাভাষ্যটা আমি মাঝেমধ্যে করি। তবে, আম্পায়ারিংয়েই থাকতে চাই। এখানেই পুরো মনোযোগ আমার। ক্যারিয়ার শেষে বিশ্বের সেরা আম্পায়ার হতে চাই। 

বাংলাদেশের প্রথম আন্তর্জাতিক নারী আম্পায়ার হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। খেলার মানুষ খেলার মধ্যেই আছেন, কতটা উপভোগ্য মনে হয়?

উত্তর : আম্পায়ারিং আমার কাছে বেশ উপভোগ্য মনে হয়। আমি গত বছর খেলা ছাড়ার পর তাই খারাপ লাগেনি। আমার কাছে মনে হয়েছে, আমি তো আরও ভালো জায়গায় যাচ্ছি। মাঠের মধ্যেই থাকতে পারছি। উইকেটের ঠিক মাঝখানে, মাঠের স্বাদ পুরোপুরি নিতে পাচ্ছি। খেলার যে উত্তেজনা, সেটি সম্পূর্ণ পাচ্ছি।

আম্পায়ার হিসেবে কাদের ভালো লাগে?

উত্তর : নারীদের মধ্যে ভারতের ব্রিন্ধা রাঠি, শ্রীলঙ্কার নিমালি পেরেরা। বাংলাদেশের মধ্যে সৈকত ভাই, ‍মুকুল ভাই, গাজী ভাইসহ সবাইকেই ভালো লাগে। কারও হাঁটার স্টাইল, কারও ডিসিশন দেওয়া, কারও মাঠের পার্সোনালিটি— একেকজনের কাছ থেকে একেকটা জিনিস শিখছি।

ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আম্পায়ারিংয়ের মূল পার্থক্যটা কোথায়?

উত্তর : ডমেস্টিক (ঘরোয়া) ক্রিকেটে চাপ তুলনামূলক কম থাকে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে চাপটা বেশি। আপনার ওপর অনেকগুলো চোখ থাকে। এরর অব জাজমেন্ট বলে একটি কথা আছে আম্পায়ারিংয়ে। ভুল করার কোনো সুযোগ নেই সেখানে। ঘরোয়া হোক কিংবা আন্তর্জাতিক, আমার কাছে সবখানে চ্যালেঞ্জ একই রকম। প্রতিটি ম্যাচই আমার জন্য নতুন।

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) আপনাদের প্রতি কতটা সদয়?

উত্তর : বিসিবি আম্পায়ারদের প্রতি যথেষ্ট সদয়। আর্থিক সুবিধাসহ নানাবিধ সুবিধা দিচ্ছে, ঠিকঠাক দেখভাল করছে। আমাদের বেতনভুক্ত করেছে। আগে আম্পায়ারিংকে পেশা হিসেবে অনেকেই নিতে চাইত না। এখন সময় বদলেছে। বিসিবির আম্পায়ার্স কমিটি, বোর্ড সভাপতি পাপন ভাই (নাজমুল হাসান পাপন) আমাদের প্রতি অনেক আন্তরিক। মাত্র দুই বছরে এতদূর আসার পেছনে তাদের আন্তরিকতা অবশ্যই কাজে দিয়েছে।

অনেক সিদ্ধান্তই আম্পায়ারদের বিরুদ্ধে যায়। প্রতিপক্ষ রিভিউ নেয়। আপনার ক্ষেত্রেও হয়েছে নিশ্চয়ই? তখন কি খারাপ লাগে?

উত্তর : একদমই না। এখন পর্যন্ত আমার সিদ্ধান্তের বিপরীতে যতগুলো রিভিউ করা হয়েছে, সবগুলোতে আমার সিদ্ধান্তই শেষ অবধি বহাল ছিল। তবে, আমি মনে করি আম্পায়ারদের ভুল হওয়ার ব্যাপারটি স্বাভাবিক। এতে বরং নতুন কিছু শেখা যায়। পরবর্তীতে সেটি কাজে লাগে।

আপনারা যখন খেলতেন তখন দেশের নারী ক্রিকেট আর এখন নারী ক্রিকেটের পার্থক্য?

উত্তর : এখন তো মেয়েরা অনেক ভালো ক্রিকেট খেলছে। সম্প্রতি ভারত-পাকিস্তানকে হারিয়েছে। একটা সময় আমরা এসব ভাবতেও পারতাম না। সেখানে এখন মেয়েরা পাকিস্তানের সঙ্গে বলে-কয়ে জিতছে। ভারতকে হারানো অনেক বড় অর্জন। মেয়েদের প্রতি খুব বেশি চাপ দেওয়ার কিছু নেই। আমাদের মেয়েরা একটু একটু করে এগিয়ে চলছে, অভিজ্ঞতা তৈরি হচ্ছে। নিগার সুলতানার জ্যোতির নেতৃত্বে এই দলটা ভালো করছে।

আপনার দেখানো পথ ধরে অনেক নারীই এখন আম্পায়ারিংয়ে আসছে। দেশের নারী আম্পায়ারিংয়ের অগ্রপথিক হিসেবে তাদের প্রতি আপনার পরামর্শ?

উত্তর : আমি বলব, আম্পায়ারিং মেয়েদের জন্য বেশ ভালো পেশা। এখানে অনেকদিন পর্যন্ত কাজ করার সুযোগ আসে। খেলোয়াড়দের বয়স হলে ধীরে ধীরে চাহিদা কমতে শুরু করে। আম্পায়ারিংয়ের ক্ষেত্রে উল্টো। যত দিন গড়াবে, অভিজ্ঞতা বাড়বে, আপনার মূল্যায়ন হবে। ফিট থাকলে অনায়াসে ৬০-৬৫ বছর বয়স পর্যন্ত চালিয়ে যেতে পারবে। আমার মতে, খেলা ছাড়ার পর বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একজন নারী ক্রিকেটারের জন্য এটি বেস্ট চয়েস।

নিজের পরিচালিত ম্যাচগুলোর মধ্যে সেরা মুহূর্ত?

উত্তর : লিজেন্ডস লিগের (লিজেন্ডস লিগ টি-টোয়েন্টি) একটা ম্যাচে ক্রিস গেইলকে লেগ বিফোরের ঘোষণা দেওয়া। এক ম্যাচে শ্রীশান্তের বলে আউট দেইনি। তারা রিভিউ নিয়েছিল, সেটি আমার পক্ষে এসেছে। আরও কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, সবই বহাল ছিল। ইরফান পাঠান, ইউসুফ পাঠানরা আমাকে ব্যক্তিগতভাবে এসে জানিয়েছে—ম্যাম আপনি তো খুব ভালো করছেন। তারা অনুপ্রেরণা দিয়েছে। এসব আসলে আমার কাছে খুব বড় পাওয়া। চাপের মুখেও ভালোভাবে ম্যাচ পরিচালনা করতে পারার তৃপ্তি পেয়েছি।

ধন্যবাদ আপনাকে। ঈদের শুভেচ্ছা রইল।

উত্তর : এনটিভি অনলাইনকেও ধন্যবাদ। ঈদ মোবারক।