ছক্কায় নতুন ইতিহাসের দুয়ারে আইপিএল
ক্রিস গেইলকে নিয়ে একটা কথা বেশ প্রচলিত ছিল, তিনি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ছক্কা মারতেন। এরপর আসেন এ বি ডি ভিলিয়ার্স। মিস্টার ৩৬০ ডিগ্রির বেলায় বলা হতো, মাঠের প্রতি কোণায় কোণায় ছক্কা হাঁকাতেন তিনি। গ্লে ম্যাক্সওয়েলকে ম্যাড ম্যাক্স কিংবা ডেভিড মিলারকে কিলার মিলার তকমা দেওয়ার কারণও ওই ছক্কা মারার কারণে।
এবারের আইপিএলে প্রথম দুজন খেলছেন না। ম্যাক্সওয়েল তো ফর্মে নেই বলে নিজেকেই সরিয়ে নিয়েছেন। মিলার এখনও নিজেকে সেভাবে মেলে ধরতে পারেননি। তাই বলে আইপিএলে ছক্কা মারা থেমে নেই। যেভাবে ছক্কার ফুলঝুরি ছুটছে তাতে আগের ১৬ আসরকে বোধহয় টপকে যাবে এবার। ৪৬ ম্যাচে এখন পর্যন্ত ছক্কা হয়েছে ৮৫২টি। গড়ে ম্যাচ প্রতি ১৮.৫২টি ছয় হয়েছে। যা অন্য যে কোনো আসরের চেয়ে বেশি।
দিল্লি ক্যাপিটালসের কোচ রিকি পন্টিং সম্প্রতি বলেছিলেন, এবারের আইপিএলের শিরোপা এনে দেবে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং। দলগুলো কেমন আক্রমণাত্মক, কতটা মারকুটে তা বোঝা যাবে কয়েকটি ইনিংস দেখলেই। সানরাইজার্স হায়দরাবাদের তিনটি ইনিংস ২৮৭, ২৭৭ ও ২৬৬। মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের তিনটি ইনিংস ২৪৭, ২৪৬, ২৩৪। কলকাতা নাইট রাইডার্সের আছে ২৭২ ও ২৬১ রানের বিশাল দুটি ইনিংস। এ ছাড়া— রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু ও পাঞ্জাব কিংসের ২৬২, দিল্লি ক্যাপিটালসের ২৫৭ রানের সংগ্রহগুলো বোঝায় বোলারদের ওপর দিয়ে কেমন ঝড় বয়ে গেছে। আসরে ৪৬ ম্যাচের ৯২ ইনিংসে দুইশ ছাড়ানো রান হয়েছে ২৯টি। এর মধ্যে ১১ ম্যাচে দুদলই ২০০-এর বেশি রান করেছে।
এমন পুঁজি তুলতে দলগুলোর আস্থা উড়িয়ে মারায়। বোলাররা যেভাবে বল করছে, ব্যাটাররা কোনো তোয়াক্কাই করছে না। আইপিএলের এক আসরে সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ড এখন পর্যন্ত ২০২৩ এর আসরে। সেবার ৭৪ ম্যাচে ছক্কা হয়েছিল এক হাজার ১২৪টি, গড়ে ম্যাচপ্রতি ১৫.১৮ করে। ২০২২ এর আসরেও ছক্কার হাজার পূর্ণ করেছিলেন আইপিএলের ব্যাটাররা। সেবারই প্রথম এক আসরে হাজার ছক্কা দেখে দর্শক। সেবার ৭৪ ম্যাচে ব্যাটাররা মেরেছিলেন এক হাজার ৬২টি, গড়ে ম্যাচপ্রতি সংখ্যাটা ১৪.৩৫।
চলতি আসরে এখন পর্যন্ত ছক্কা হয়েছে ৮৫২টি। ৪৬ ম্যাচের হিসেবে গড়টা ১৮.৫২টি ওভার বাউন্ডারি হয়েছে প্রতি ম্যাচে। এরই মধ্যে আইপিএলের ইতিহাসে এক আসরে সর্বোচ্চ ছক্কার তালিকায় চতুর্থ স্থানে উঠে এসেছে ২০২৪ এর আসর। ২০১৮ সালে ৬০ ম্যাচে ৮৭২টি ছক্কা হয়েছিল।
আইপিএল ২০২৪ এ এখনও বাকি আছে ২৮ ম্যাচ। সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ড ছুঁতে প্রয়োজন ২৭২টি, নতুন রেকর্ড গড়তে একটি বেশি। গড়ে ম্যাচপ্রতি ব্যাটারদের মারতে হবে ৯.৭১ (প্রায় ১০টি)। গড়ে ১৮টি করে ছক্কা মেরে আসা দলগুলো আসরের পরের ধাপে যে আরও আগ্রাসী হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বরং, এক হাজার ১২৪টি ছক্কার রেকর্ড ভেঙে কতদূর গড়ায়, তা নিয়ে ঝড় উঠতে পারে চায়ের কাপে।