বাঁ পায়ের জাদুকর ম্যারাডোনার জন্মদিন আজ
দিয়াগো আরমান্দো ম্যারাডোনা—বিশ্বকে প্রথম দেখিয়েছিলেন, একাই জেতানো যায় বিশ্বকাপ। যার বাম পায়ে প্রথম আটকেছিল ফুটবলপ্রেমীদের চোখ। আজকের আর্জেন্টিনার বিশ্বব্যাপী তুমুল জনপ্রিয়তার মূল কারিগর যিনি। ফিফার বিচারে সর্বকালের সেরা পেলে, তবে জনতার রায়ে ম্যারাডোনাই সর্বকালের সেরা। এমনকি সময়ের সীমানা ছাড়িয়ে যাওয়া লিওনেল মেসির চেয়েও এগিয়ে তিনি।
ম্যারাডোনা জন্মেছিলেন ১৯৬০ সালের ৩০ অক্টোবর। কে জানত তখন, বুয়েন্স আয়ার্সের লানুস শহরে জন্ম নেওয়া এক শিশু শাসন করবে বিশ্ব ফুটবল। ম্যারাডোনার বয়স যখন দুই, ততদিনে ব্রাজিলের হয়ে দুটি বিশ্বকাপ জিতেছেন পেলে। একমাত্র ফুটবলার হিসেবে তিনটি বিশ্বকাপ জিতেছেন পেলে, তবে কেবল একটি বিশ্বকাপ জিতেই পেলের সঙ্গে এক কাতারে চলে আসা মানুষটা ম্যারাডোনা।
তাকে ডাকা হয় ফুটবল ঈশ্বর নামে। নশ্বর পৃথিবীতে দিয়াগো ম্যারাডোনা যেন হয়ে উঠেছিলেন অবিনশ্বর। ১৯৮৬ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ম্যারাডোনার বিখ্যাত সেই ‘হ্যান্ড অব গড’ গোল নিয়ে যত আলোচনা হয়, তারচেয়ে বেশি আলোচনার দাবি রাখে একই ম্যাচে ছয় জনকে কাটিয়ে দেওয়া অবিস্মরণীয় গোলটি। ইতালির ক্লাব নাপোলির আকাশি জার্সিকেই কিংবদন্তি বানিয়ে দিয়েছিলেন ম্যারাডোনা। তাকে দুহাত ভরে ভালোবাসাও দিয়েছে নেপলসের মানুষজন। তিনি একবার বলেছিলেন, ‘আমি মরে গেলে আবার জন্ম নিতে চাই। ফুটবলার দিয়াগো আরমান্দো ম্যারাডোনা হয়ে জন্মাতে চাই। এক জীবনে যা ভালোবাসা পেয়েছি, ভোলার নয়।’
ম্যারাডোনা না ফেরার দেশে চলে গিয়েছেন ২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর। তার মৃত্যুতে মুহূর্তের জন্য থমকে যায় ফুটবল। তার মৃত্যুতে যেন সেদিন থেমে যায় গেছে রেফারির হুইসেল, আটকে যায় গোলরক্ষকের দস্তানা, নিশ্চল হয় ফুটবলের চলাচল।
আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের হয়ে ম্যারাডোনা ৯১ ম্যাচে ৩৪টি গোল করেছিলেন। পরিসংখ্যান দিয়ে অবশ্য তাকে মাপা যাবে না। পরিসংখ্যান নিছক সংখ্যা মাত্র। এসবের ঊর্ধ্বে গিয়ে ফুটবলে আবেগ ও ভালোবাসার এক সম্মোহন তৈরি করেছিলেন এই জাদুকর। যার মোহ কখনও কাটানো সম্ভব নয়। না ইতিহাসের পাতা থেকে, না ভক্তদের হৃদয় থেকে।
ম্যারাডোনাকে ভালোবেসে ভক্তরা নাম দিয়েছিলেন ‘এল পিবে দে অরো’, বাংলায় যার অর্থ সোনালি বালক। বেঁচে থাকলে এই সোনালি বালক আজ পা দিতেন ৬৪ বছরে। তিনি নেই, কিংবদন্তিদের অবশ্য দৈহিক প্রস্থান ঘটে কেবল। না থেকেও তাই ম্যারাডোনা আছেন।
ভক্তদের হৃদয়ে অমরত্ব পেয়ে বসা সোনালি বালক ম্যারাডোনাকে ৬৪তম জন্মদিনের শুভেচ্ছা। শুভ জন্মদিন বাঁ পায়ের প্রথম জাদুকর।