অনিন্দ্য গুলিয়াখালি সৈকত

Looks like you've blocked notifications!
অনিন্দ্যসুন্দর গুলিয়াখালি সৈকত। ছবি : সংগৃহীত

অনিন্দ্য সুন্দর গুলিয়াখালি সমুদ্র সৈকতকে সাজাতে প্রকৃতি কোনো কার্পণ্য করেনি। তাই সমুদ্রকে নতুন করে দেখতে হলে আপনাকে আসতে হবে গুলিয়াখালি। একদিকে দিগন্তজোড়া সাগরের জলরাশি আর অন্যদিকে কেওড়া বন সৈকতকে করেছে অনন্য।

কেওড়া বনের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট ছোট খালের চারদিকে উঁকি দিয়ে আছে কেওড়ার শ্বাসমূল। সবুজ গালিচার বিস্তৃত ঘাস এই সৈকতকে দিয়েছে ভিন্নতা। সাগরের পাশে সবুজ ঘাসের উন্মুক্ত প্রান্তর চোখ জুড়াবেই। সৈকতের পাশে সবুজ ঘাসের এই মাঠে প্রাকৃতিকভাবেই জেগে উঠেছে আঁকাবাঁকা নালা।

মানুষের কাছে এখনও তেমন পরিচিত নয় বলে লোকজনের আনাগোনা কম। তাই তো আপনি চাইলেই উপভোগ করতে পারবেন নিরবিলি পরিবেশ। সাগরের গর্জন না থাকলেও এই নিরবিলি পরিবেশে গুলিয়াখালি সৈকত আপনার কাছে ধরা দিবে ভিন্ন রূপে।

গুলিয়াখালি কোথায়

চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলায় অবস্থিত গুলিয়াখালি সৈকত। মুরাদপুর ইউনিয়নের পশ্চিমে এটির অবস্থান। স্থানীয়দের কাছে অবশ্যই এটি মুরাদপুর বিচ নামেই বেশি পরিচিত। সীতাকুণ্ড বাজার থেকে এই গুলিয়াখালি বিচের দূরত্ব মাত্র ৫ কিলোমিটার।

যেভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী যেকোনো বাসে যেতে পারেন সীতাকুণ্ড। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কটি এ উপজেলার মধ্য দিয়ে যাওয়ায় সহজেই নামা যাবে সীতাকুণ্ড বাজারে। ঢাকা থেকে এসি ও নন এসি বাসের ভাড়া হতে পারে ৫০০-১২০০ টাকা। ঢাকা থেকে সীতাকুণ্ড মেইল ট্রেনেও যাওয়া যায়। এতে জনপ্রতি খরচ ১৫০-২০০ টাকা। কিন্তু আন্তঃনগর কোনো ট্রেন সীতাকুণ্ড স্টেশনে না দাঁড়ানোয় ফেনী স্টেশন অথবা চট্টগ্রামে স্টেশনে নামতে হবে। এতে শ্রেণিভেদে খরচ পড়বে  ২৬৫-৮০০ টাকা। ফেনী থেকে লোকাল বাসে সীতাকুণ্ড এবং চট্টগ্রাম থেকেও লোকাল বাসে সীতাকুণ্ড আসা যায়। এতে ভাড়া পড়তে পারে ৭০ থেকে ১২০ টাকা।

সীতাকুণ্ড বাজার থেকে সরাসরি সিএনজিচালিত অটোরিকশাযোগে যাওয়া যায় গুলিয়াখালি সৈকতের বাঁধ পর্যন্ত। আগে রাস্তাঘাট তেমন একটা উন্নত না থাকলেও বর্তমানে সামান্য উন্নতি হয়েছে। তবে বেড়িবাঁধের পর থেকে চলাচলের রাস্তা সামান্য খারাপ রয়েছে। রিজার্ভ ভাড়া নিলে ১৫০-২৫০ টাকা খরচ হবে। তবে অবশ্যই দরদাম করে নেওয়া ভালো। সীতাকুণ্ড ফিরে আসার জন্য আগে থেকে অটোরিকশাচালকের নম্বর নিয়ে রাখতে পারেন। অথবা যাওয়া-আসাসহ রিজার্ভ করে নিতে পারেন। এ ছাড়া লোকাল সিএনজিচালিত অটোরিকশায় যাওয়া-আসা করা যেতে পারে। এতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা খরচ হবে।

খাবারের ব্যবস্থা

এখনও এ স্থানটির তেমন একটা পরিচিতি না বাড়ায় এই বিচে খাওয়া-দাওয়ার তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। তবে বেড়িবাঁধের আশপাশে কয়েকটি ভ্রাম্যমাণ দোকান রয়েছে। যদি তাদের খাবারের অর্ডার দেওয়া হয়, তাহলে তারা রান্না করে দেবে। তবে অবশ্যই তাদের সময় দিতে হবে।

থাকার ব্যবস্থা

সৈকত বা তার আশপাশে থাকার কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই দিনে দিনে গিয়েই আবার ফিরে আসা ভালো। কিন্তু সীতাকুণ্ড বাজারে বেশ কয়েকটি আবাসিক হোটেল রয়েছে। যদি থাকার পরিকল্পনা থাকে, অবশ্যই ৫ কিলোমিটার দূরে বাজারে এসে হোটেলে থাকতে হবে।

সতর্কতা

যেহেতু সৈকতটি অতটা পরিচিত নয়, তাই পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়া হুট করে পানিতে না নামাই ভালো। তাছাড়া গোসল করা ইচ্ছে হলে অবশ্যই মিঠা পানি এবং কাপড় চেঞ্জ করার স্থান জেনে পানিতে নামা ভালো। আরও একটি বিষয় লক্ষ রাখা জরুরি, এই সৈকতের পানি কক্সবাজার বা সেন্টমার্টিন সৈকতের পানির মতো অতটা স্বচ্ছ নয়। কারণ, এই এলাকার আশপাশের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে শিপ ইয়ার্ড রয়েছে। যেখানে প্রতিনিয়ত ভাঙা হচ্ছে পুরোনো জাহাজ। জাহাজের বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য প্রতিনিয়ত মিশছে পানিতে। তাই পানিতে নামার আগে অবশ্যই জেনেশুনে নামা উচিত।