চলুন যাই কবি বিজয় গুপ্তের মনসা মন্দিরে

Looks like you've blocked notifications!

কবি বিজয় গুপ্তের প্রতিষ্ঠিত সেই মনসা মন্দিরটি আজও আছে, আছে সেই ঘট, চলছে মন্দিরে পূজা-অর্চনা। বলছিলাম, মনসামঙ্গল রচয়িতা কবি বিজয় গুপ্তের স্মৃতি বিজড়িত সেই মনসা মন্দিরের কথা। বরিশাল জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা গ্রামে অবস্থিত উপমহাদেশের প্রখ্যাত এই মন্দির। এখানেই ছিল বিজয় গুপ্তের বসতভিটা। এখানে বসেই কবি বিজয় গুপ্ত লিখেছেন মনসামঙ্গল কাব্যের সেই অমর বাণী।

মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি বিজয় গুপ্ত। মনসাদেবী কর্তৃক স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে আনুমানিক ১৪৯৪ খ্রিস্টাব্দে বিজয় গুপ্ত এ মঙ্গলকাব্য রচনা করেন। দেবীর মাহাত্ম্য ও পূজা প্রচার এ কাব্যের প্রধান উপজীব্য। কবির ভাষায় এ কাব্য পাঠ করলে দরিদ্রের ধনলাভ ও সন্তানহীনের সন্তানলাভ হয় এবং রোগীর রোগমুক্তি ও বন্দির বন্ধনমুক্তি ঘটে। বেহুলা-লক্ষ্মীন্দরের কাহিনি অবলম্বন করে কবি লিখেছিলেন সেই কাব্য। তাঁর পিতা সনাতন গুপ্ত ও মাতা রুক্ষিণী দেবী। মনসাকুণ্ড নামে পরিচিত দিঘির দক্ষিণ পাড়ে কবির বসতভিটা ছিল। সেই বসতভিটার সন্নিকটে কবি প্রতিষ্ঠা করেন এই মন্দির। আজ থেকে প্রায় সাড়ে ৫০০ বছরের পুরোনো সেই মন্দির আজও বেঁচে আছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পরম ভালোবাসায়।

মনসাকুণ্ড দিঘির পূর্ব-দক্ষিণ কোণে মন্দিরটির অবস্থান। মন্দিরের সামনে দাঁড়ালেই চোখে পড়বে বিজয় গুপ্তের স্মৃতি বিজড়িত সেই সাইতান গাছ, আশ্রম, বিশ্রামাগারসহ অনেক কিছুই। মন্দিরে রয়েছে পিতলের তৈরি এক টন ওজনের মা মনসার প্রতিমা। জানা যায়, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মন্দিরের প্রতিমাসহ সবকিছু নষ্ট করে দেয়। এর বহু বছর পর বিদেশে অবস্থানরত সনাতন ধর্মের কিছু ভক্তের অর্থ অনুদানে ফের স্থাপন করা হয় পিতলের বর্তমান মনসা প্রতিমাটি।

বর্তমানে মন্দিরটির মূল বেদি- সাদা মার্বেল পাথরে তৈরি। সর্পদেবীর পূজা-অর্চনার স্থানটির চারদিক থেকে স্বচ্ছ কাচের দেয়াল দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। মন্দিরটি পরিচালনা করার জন্য স্থানীয়দের নিয়ে গঠন করা হয়েছে কবি বিজয় গুপ্তের স্মৃতি রক্ষা মনসা মন্দির সংরক্ষণ ও উন্নয়ন কমিটি। বর্তমানে মন্দিরবিষয়ক সব ধরনের দেখভালের দায়িত্ব ন্যস্ত রয়েছে উক্ত কমিটির হাতে। প্রতি বছরে বাংলা শ্রাবণ মাসের শেষ দিনে এ মন্দিরে বার্ষিক মনসা পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় দেশ-বিদেশের অনেক পর্যটক যায়। এ ছাড়া মাদারীপুর, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, টরকি থেকে প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থী মন্দিরটি দেখতে যায়। তাই আপনিও সময় করে দেখে আসুন কবি বিজয় গুপ্তের মনসা মন্দির।

যাতায়াত : ঢাকার সায়েদাবাদ বা গাবতলী থেকে গৌরনদীর বাসে যেতে পারেন গৌরনদী অবধি। এরপর লোকাল যানবাহনে গৈলা পর্যন্ত যেতে হবে। অথবা বরিশাল শহর থেকে বাসে চেপেই চলে যেতে পারবেন গৈলা বাসস্ট্যান্ডে। যেতে সময় লাগবে কমবেশি এক ঘণ্টা ২০ মিনিট। গৈলা বাজার থেকে স্থানীয় ভ্যানে চেপে আধা কিলোমিটার রাস্তা সামনে এগোলেই দেখা যাবে কবি বিজয় গুপ্ত প্রতিষ্ঠিত এই মন্দির।