লালাখালের নীল জলে

Looks like you've blocked notifications!
সিলেটের লালাখাল। ছবি : লেখক

ভোর ৫টায় হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায়। তুমুল বৃষ্টির শব্দে ভেন্টিলেটর দিয়ে প্রবাহিত ঠাণ্ডা হাওয়ায় গরম কাপড় আরেকটু টেনে নিলাম। তবুও জবুথবু অবস্থা কাটছে না। হঠাৎ ঘড়ির কাঁটায় চোখ পড়ল। শুয়ে থাকার সময় নেই, এখনই শয্যা ত্যাগ করতে হবে। সকাল ৭টায় আমরা গন্তব্যের দিকে যাত্রা শুরু করলাম। হরিপুর বাজারে গাড়ি থামাতে হবে, সেখানে আমাদের জন্য স্পেশাল সকালের নাশতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। গাড়ি থামানো হলো হরিপুর বাজারে। চালের গুঁড়ার রুটি আর সাথে মুরগির মাংস। প্রথমে একটু খারাপ লাগছিল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়ে, পরে খাবার মুখে দিয়ে সে ধারণা ভুল প্রমাণিত হলো। অসাধারণ স্বাদ। দেশি মুরগির মাংস আর এতে ব্যবহার করা হয়েছে বাটা মসলা।

যা হোক, পথঘাট পেরিয়ে আমরা পৌঁছালাম সারিঘাট। সারিঘাটে এসে সবার মনোযোগ নদীর মনোলোভা দৃশ্য দেখতে। আমরা ভাসিয়ে দিলাম আমাদের তরি লালাখালের নীল জলে। সারি নদী ও দুধারের সৌন্দর্য দেখার জন্য আমরা নৌকার ছইয়ের ওপর উঠে বসলাম। এখন চারদিকে শুধু দুচোখ ভরে দেখার পালা। চোখে পড়ছে দূরে মেঘালয়ের পাহাড়গুলো। নদীর সবুজ পানি, বালিবোঝাই নৌকা, মাঝেমধ্যে গ্রামীণ মানুষের কর্মব্যস্ততা, নদীকেন্দ্রিক মানুষের জীবনযাত্রা; সবই উপভোগ্য হবে লালাখাল যাত্রায়। নয়নাভিরাম এ জায়গাটি যে কারো মন ভরিয়ে দেবে। স্বচ্ছ রঙিন জলরাশি আর দুধারের অপরূপ সৌন্দর্য, নৌকা ভ্রমণ যেকোনো পর্যটকের কাছে আকর্ষণীয়। তেমনই এক নির্জন মনকাড়া স্থান লালাখাল। আমরা নদীর পাড়ের মানুষের জীবনধারা দেখতে লাগলাম। এটি আবার লালাখাল চা-বাগানের একটি অংশ।

প্রথমেই আমাদের নিয়ে নৌকা চলে এলো জিরো পয়েন্টে, যেখানে রয়েছে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত চৌকি। একটা পাথর দেখিয়ে আমাদের নৌকার মাঝি বলল, এটা সীমান্ত। আমরা নৌকা থেকে নেমে ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে গেলাম। সেখানে ছবি তুলে আমরা এলাম পরবর্তী গন্তব্য লালাখাল চা-বাগানে। এই সেই সীমানা পাথর, এটা দেখে কীভাবে কেউ বুঝবে এটা দুই দেশের সীমান্ত চিহ্নিত করার পাথর? চোখের সামনে টিলা আর তার মাঝে মেঘের ভেলা যেকোনো সৌন্দর্যপিপাসুর জন্য স্পেশাল কিছু। যেমন—নিচের এই গাছটা, যার সৌন্দর্য আমাকে মোহিত করেছিল। নীলাকাশের নিচে চোখধাঁধানো সবুজ, চা-বাগানের চারপাশটা তখন অপার্থিব মনে হচ্ছিল আমাদের কাছে। আমরা নিঃশব্দে ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম। এমন সুন্দরের মাঝে বারবার ফিরে যেতে চাই। সেই প্রকৃতির মাঝে ঘণ্টাখানেক কাটিয়ে আমরা ফিরে এলাম নৌকায়, এবার যে ফিরতে হবে। তো আর কী, আবার সেই মায়াবি নীল জলের বুক চিরে এগিয়ে যাওয়া আর মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে থাকা।

যেতে চাইলে

লালাখালে যেতে হলে ঢাকা থেকে বাস বা ট্রেনযোগে সিলেটে যেতে ভাড়া ৪০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা। পরে মাইক্রোবাস বাস ভাড়া করে সরাসরি যেতে পারবেন সারিঘাটে, ভাড়া নেবে দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা অথবা সিএনজিচালিত অটোরিকশা করে সিলেটের শিশুপার্কের সামনে থেকে লেগুনা অথবা জাফলংয়ের বাসে চেপে সিলেট-তামাবিল সড়ক ধরে যেতে হবে সারিঘাট, ভাড়া নেবে জনপ্রতি ২০০ টাকা। এরপর নৌকা করে লালাখালে সারা দিনের জন্য দেড় হাজার থেকে এক হাজার ৮০০ টাকা ভাড়া নেবে।

সাবধানতা

যেকোনো ভ্রমণে নিরবচ্ছিন্ন আনন্দ উপভোগের জন্য প্রয়োজন দুর্ঘটনা এড়ানো। অদ্ভুত নীল পানি আর ঘন জঙ্গলবেষ্টিত লালাখালে গেলে তাই চাই বাড়তি সতর্কতা। পানিতে নামার সময় খেয়াল রাখবেন, পানির গভীরতা কতটুকু। প্রয়োজনে গাইড কিংবা সঙ্গে যাওয়া কারো সঙ্গে পরামর্শ করা যেতে পারে। আর ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে নিতে হবে বাড়তি সতর্কতা। সন্ধ্যার আগে-পরে তাদের পানিতে না নামাই ভালো।