ঢাকার কাছে বিজ্ঞানীর বাড়িতে
নগরজীবনের ব্যস্ততার মাঝে মন চায় একটু স্বস্তির নিশ্বাস নিতে। তাই তো আপনার একঘেয়েমি ব্যস্ত জীবনের ক্লান্তি দূর করতে আপনি ঘুরে আসতে পারেন মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলায় অবস্থিত বাংলাদেশের অন্যতম একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। এটি স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুর পৈতৃক বাড়ি থেকে।
স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু কে বলা হয় বিশ্বের অন্যতম বিজ্ঞান পথিকৃৎ। বলা হয়ে থাকে তিনি নাকি সময়ের আগেই পৃথিবীর আলো দেখেছিলেন। তার যথার্থ বৈজ্ঞানিক মূল্যায়ন এখনো করা সম্ভব হয়নি।
জগদীশ চন্দ্র বসু সাধারণ মানুষের মাঝে পরিচিত “গাছের প্রাণ আছে” এই আবিষ্কারের মাধ্যমে। এছাড়াও বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় তার নিঃশঙ্ক পদচারণা আমাদের অবাক করে দেয়। একাধারে জগদীশ চন্দ্র বসু ছিলেন পদার্থবিদ এবং উদ্ভিদ বিজ্ঞানী।
আমরা সাধারণত ভেবে থাকি, এই দুটি বিষয়ের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য আছে। জগদীশ চন্দ্র বসু কিন্তু প্রমাণ করেছিলেন বিজ্ঞানের সব বিষয়গুলি একে অন্যের সঙ্গে গভীরভাবে সংযুক্ত। আমাদের দুর্ভাগ্য, পরাধীন দেশের বিজ্ঞানী হওয়াতে বিজ্ঞান সভা আছে তাকে ঠিকমতো মূল্যায়িত করা হয়নি। এখন অবশ্য সারা পৃথিবী জুড়ে আবার নতুন করে ওই বিজ্ঞান শুরু তাপসের বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের পর্যালোচনা হয়েছে।
অনেকে বলেছেন, কেবল মার্কোনীকে আমরা বেতার তরঙ্গ উদ্ভাবনের জনক হিসেবে স্বীকৃতি দেবো না, এরই পাশাপাশি আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু্র নামও মনে রাখতে হবে। স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু কে নিয়ে এই কথা গুলো বলার কারণ হলো আজ আমরা ঘুরতে ঘুরতে চলে এসেছি আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু্র বাড়ির প্রবেশ দ্বারে।
স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুর বাড়ি মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলায় অবস্থিত বাংলাদেশের অন্যতম একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। এটি স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুর পৈতৃক বাড়ি। এটি শ্রীনগর উপজেলার রাঢ়ীখাল গ্রামে অবস্থিত। ঢাকা থেকে এর দুরুত্ব প্রায় ৩৫ কিলোমিটার । মূল প্রবেশ দ্বার অবশ্য অন্য দিকে ছিল আমরা রাস্তা ভুল করে পেছনের পথে প্রবেশ করি। চারপাশের গাছ গাছালির উপস্থিতি প্রথমে আপনার মনে হতে পারে আপনি কোনো ফরেস্টে এসে উপস্থিত হয়েছেন। আমরা এগিয়ে চললাম দেখা পেলাম পশু-পাখির ম্যুরাল । একটু সামনে এগিয়ে যেতেই দেখতে পেলাম কৃত্রিম ঝর্না। লেকের ওপর তৈরী করা হয়েছে কাঠের ব্রিজ, বসার ছাউনি। আমাদের মত অনেকেই এসেছেন ঘুরে দেখতে।
দেখা পেলাম সান বাঁধানো পুকুর ঘাট। দেখে মনে হয়ে গেলো আগের আমলের রাজা বাদশা দের জমিদার কথা। আমরা পুকুর ঘাটে গিয়ে বসলাম। শান্ত , নিরিবিলি পরিবেশ যেখানে নেই কোনো নাগরিক কোলাহল। আমরা এগিয়ে চললাম গাছের ফাঁকে ফাঁকে সূর্যদেব খেলা করছিলো। দেখা পেলাম বাচ্চা দের খেলার জন্য ব্যবস্হা। ভেতরে আরো শানবাঁধানো পুকুর ঘাঁটের দেখা পেলাম। অনেকেই পুকুর ঘাটে বসে আছেন কেউ আবার ছবি তুলছেন। আমরা ও ছবি তুলছি মাঝে মধ্যে। একে একে ছয়টি দিঘীর দেখা পেলাম আমরা। কিছু দূরত্বে যাওয়ার পর দেখা পেলাম স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুর বাড়ি। তবে বাড়ির ভেতরে প্রবেশের আগে বড় করে লেখা অনুমতি বিহীন প্রবেশ নিষেধ। ভেতরে প্রবেশের অভিপ্রায় নিয়ে একটু এগিয়ে যেতেই ভেতরের জীর্ণদশা দেখে খুব খারাপ লাগলো। কয়েক পরিবার হয়তো এখানে থাকেন । তাই আর ভেতরে প্রবেশ করলাম না। কিছু সামনে যেতেই দেখা পেলাম জাদুঘরের আর স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু কমপ্লেক্সের প্রবেশদ্বারের । আমরা পেছন দিকে প্রবেশ করেছি তাই ।
জাদুঘরে প্রবেশ করতেই দেখতে পেলাম জগদীশ চন্দ্র বসুর পোট্রেট, গবেষণাপত্র, হাতে লেখা পান্ডুলিপি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নোবেল প্রাপ্তিতে তাকে লেখা চিঠি ও রবীন্দ্রনাথের বসুকে লেখা চিঠি, তেল রং দিয়ে আঁকা ১৭টি দুর্লভ ছবি, রয়্যাল সোসাইটিতে দেওয়া বক্তিতার কপি এবং নানা দুর্লভ জিনিস। তবে মনে মনে প্রশ্ন জাগল এতো বড় মাপের একজন বিজ্ঞানীর দুর্লভ জিনিষ গুলো ছোট্ট একটি রুমের মাঝে গাদাগাদি করে রাখা হয়েছে। কিন্তু কেন এর প্রশ্নের উত্তর কেউ দিতে পারলেন না। সংস্কারের অভাবে ভেঙে পড়েছে মিউজিয়াম ঘরটি। স্থানীয় একজন বললেন , প্রায় শত বছর আগে জে. সি. বোস ও তার স্ত্রীর ইচ্ছায় এখানে চালু করা হয়েছিলো মন্দিরভিত্তিক পাঠশালা। পরবর্তীতে সেটি কলেজ হয়েছে কিন্তু দীর্ঘদিন সংস্কারের উদ্যোগ না নেওয়ায় পুরনো ভবনগুলো ভেঙে পড়ার দশা। কমপ্লেক্স এর পাশেই আছে স্যার জগদীশচন্দ্র বসু ইনস্টিটিউশন ও কলেজ।
যেভাবে যাবেন:
ঢাকা গোলাপ শাহর মাজারের কাছা কাছি ঢাকা-দোহার বাসে উঠবেন আর নামবেন রাড়িখাল তিনদোকান। অথবা পোস্তাগোলা ব্রীজ থেকে মাওয়াগামী যে কোনো বাসে উঠে শ্রীনগর বাজার। সেখান থেকে অটোতে রাড়ীখাল জগদীশ চন্দ্র বসু কমপ্লেক্স। ঢাকা থেকে দিনে দিনে মুন্সিগঞ্জ ভ্রমণ শেষ করে ফিরে আসা সম্ভব।