রাবির সবুজ ক্যাম্পাসে একদিন

Looks like you've blocked notifications!
ছবি : রাবি প্রতিনিধি

রাজশাহী শহরের দর্শনীয় ও আকর্ষণীয় স্থানগুলোর মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) অন্যতম। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সবুজ প্রকৃতিকে উপভোগ করতে এখানে প্রতিদিন বহু স্থানীয় পর্যটক আসেন। মূলত, ক্যাম্পাসটি একটি বৃহৎ বাগানের মতো। বাগানটির ভেতরে আছে বহু প্রজাতির গাছ। এর মধ্যে প্যারিস রোডের মনোমুগ্ধকর ও আকাশচুম্বী গগন শিরিশ গাছ পর্যটকদের খুব কাছে টানে। এ ছাড়া, আম বাগান তো আছেই।

প্রশাসনিক ভবন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

সবুজে ঘেরা এই সুবিশাল ক্যাম্পাসে হেঁটে ঘুরে বেড়াতে সারাদিন লেগে যেতে পারে। তাছাড়া, অটোরিকশায় করেও বেড়ানো যায়। দিন, সন্ধ্যা বা রাত যখনই হোক না কেন, ক্যাম্পাসে অটোরিকশা পাওয়া যায়। স্থানীয় অনেকেই বাইসাইকেল, মোটরবাইক ও ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে আসেন ক্যাম্পাস ঘুরে বেড়ানোর জন্য।

শীতের সকালে প্যারিস রোড, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

ক্যাম্পাসের জনপ্রিয় জায়গা যেমন—টুকিটাকি চত্বর, পরিবহন চত্বর, ক্যাফে গ্রিনভিউ, কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়া ও চারুকলা চত্বরে খাবারের দোকান আছে। এসব দোকানগুলোতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খাবার পাওয়া যায়। শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও বহিরাগতদের ভিড় সারাদিন লেগেই থাকে। এসব দোকানগুলোতে সকালের নাশতা, দুপুরের খাবার ও বিকালের নাশতা পাওয়া যায়। যে কোনো সময় চা পাওয়া যায়। সম্প্রতি কিছু ফাস্টফুডের চলন্ত দোকানও দেখা যাচ্ছে। রবীন্দ্রনাথ অ্যাকাডেমিক ভবনের সঙ্গে ক্যাফে গ্রিনভিউ নামের একটি খাবারের দোকান আছে। সেখানেও সুস্বাদু খাবার পাওয়া যায়।

প্যারিস রোডের পাশের আমবাগান

আরো একটি খাবারের জায়গা আছে, যেটি সবার কাছে খুবই প্রিয়। সেটি হচ্ছে সিলসিলা রেস্তোরাঁ। রেস্তোরাঁটি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেডিয়াম মার্কেটে অবস্থিত। রেস্তোরাঁটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের খুবই কাছে। রেস্তোরাঁটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এখানে সাধারণ খাবার থেকে শুরু করে নিজস্ব প্রস্তুতকৃত মিষ্টি, ভেজিটেবল রোল ও সবজি চপ পাওয়া যায়। সব খাবারই টাটকা। রেস্তোরাঁটির চমৎকার একটি আয়োজন হচ্ছে–গাছের নিচে সাজিয়ে রাখা খাবার খাওয়ার টেবিল ও বসার জন্য বেঞ্চ।

সিলসিলা রেস্তোরাঁ

গাছের ছায়া, পাখির ডাক ও রেস্তোরাঁর সাথে লাগোয়া পুকুর যে কাওকে আকৃষ্ট করে সেখানে লম্বা সময় ধরে বসে থাকার জন্য। এখানে সারাদিনই টাটকা খাবার পাওয়া যায়। আমি মাঝে মাঝে সিলসিলা রেস্তোরাঁয় সকালে নাশতা করে বিভাগে যাই। সকালের নাশতায় পাওয়া যায় মচমচে পরোটা, মুগ ডাল, আলু ভাজি, ডিম ও নানা পদের মিষ্টি। পরোটার সাথে মুগ ডাল ও আলু ভাজার মিশ্রণ আমার খুবই পছন্দের একটি খাবার। বিকালে বাসায় ফিরে আসার পথে সিলসিলা থেকে গরম ভেজিটেবল রোল ও সিঙ্গারা নিয়ে আসি। রেস্তোরাঁটি সবচেয়ে বেশি ব্যস্ত ও জমজমাট থাকে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তঃবিভাগীয় ফুটবল ও ক্রিকেট প্রতিযোগিতা হয়। সে সময় নিয়মিত খাবারগুলো বাদেও কলা ও সেদ্ধ ডিম পাওয়া যায়।

হবিবুর রহমান হল, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা অনেকেই এই জায়গাটিতে পরিবার নিয়ে আসেন। রেস্তোরাঁর পাশেই গাড়ি পার্কিং করা যায়। তাই গাড়ি পার্কিং করা নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হয় না। আমার কোনো অতিথি এলে তাদের সিলসিলায় নিয়ে যাই। বিশেষ করে রাত আটটার পর। কারণ, তখন গরম গরম মিষ্টি পাওয়া যায়। আমার মতো অনেকেই আছেন যারা গরম মিষ্টি, অর্থাৎ চুলা থেকে কেবল নামিয়ে ঠান্ডা করা হচ্ছে—এমন মিষ্টি পছন্দ করেন। এ ছাড়াও আছে সন্দেশ ও ছানার জিলাপি।

বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা সংক্রান্ত ও নানাবিধ কাজে দেশের ও বিদেশের বহু মানুষ আসেন। তাঁদের অনেকেই ভোরে কিংবা সকাল বেলা ক্যাম্পাসের প্যারিস রোড দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে সিলসিলায় গিয়ে সেখানকার সকালের নাশতা উপভোগ করেন। অনুরূপভাবে, সন্ধ্যায় হেঁটে ক্লান্ত হয়ে সিলসিলার ভেজিটেবল রোল, সন্দেশ ও চা পান করাও অতিথি ও স্থানীয়দের কাছে খুবই প্রিয়। আশা করি, রাজশাহী শহরে যারা বেড়াতে আসেন, তাঁদের কাছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ ক্যাম্পাস ও সিলসিল রেস্তোরাঁয় খাবার ভাল লাগবে।