ঘোরাঘুরি
ফিনল্যান্ডের তাম্পেরেতে
আমি অনেকদিন ধরে ভাবছিলাম ফিনল্যান্ডের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর তাম্পেরেতে ঘুরতে যাব। অবশেষে গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে তাম্পেরেতে ঘুরতে যাওয়ার সুযোগ এলো। তুরকু শহর থেকে তাম্পেরে শহরের দূরত্ব ছিল ১৬০ কিলোমিটার।
আমাদের দেশের আবাহনী ও মোহামেডানের মতো, তুরকু ও তাম্পেরে শহরের মধ্যে দ্বন্দ্ব পুরো ফিনল্যান্ডবাসীর কাছে জানা। ফিনল্যান্ডে আইস হকি খুব জনপ্রিয় খেলা আর এই খেলা নিয়ে তুরকু ও তাম্পেরের মধ্যে বেশ রেষারেষি আছে।
১৭৭৫ সালে তাম্পেরের গোড়াপত্তন হয় মূলত সুইডিশদের মাধ্যমে। নাসিইয়ারভি ও পায়হাইয়ারভির দুই লেকের পাড়ে অবস্থিত তাম্মারস্কি চ্যানেল দ্বারা যুক্ত তাম্পেরে। লেক দুটির উচ্চতার পার্থক্য প্রায় ১৮ মিটার। নরডিক দেশ গুলোর মধ্যে তাম্পেরেতে সবচেয়ে বড় ইনল্যান্ড সিটি অবস্থিত। এখানে মেটাল, পেপার, আইটি এবং টেলি কমিউনিকেশন-এর অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থাকায় একে ‘ম্যানচেস্টার অব নর্থ "বলা হয়। ফিনল্যান্ডের স্বাধীনতা ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তাম্পেরের গুরুত্ব ছিল অনেক।
সাজানো-গোছানো এই শহরে অনেক দর্শনীয় স্থানের মধ্যে সারকিনিয়ামি অন্যতম। সারকিনিয়ামির রাইডগুলো ছিল রীতিমতো ভয়ংকর। ঘূর্ণি আর অভিকর্ষের বিরুদ্ধে শুন্যে তুলে আন্দোলিত করে এবং আমার মতো ভীতু বাঙালির জন্য তা অত্যাচারের সামিল। তবে এই অত্যাচারের মাঝে দারুণ মজা পেয়েছি। এ ছাড়া ভ্লাদিমির ইলিচ লেলিন মিউজিয়াম, ক্যাথেড্রালসহ আছে আরো অনেক কিছু আছে এখানে।
১৯০৫ সালে লেলিন এই শহরে আসেন এবং তাম্পেরে ওয়ার্কার্স হলে বলশেভিক পার্টির কনফারেন্সে প্রথম স্তালিনের সঙ্গে দেখা হয়। মূলত তখন ফিনল্যান্ড রাশিয়ার অংশ ছিল। ১৯০৭ সালে লেলিন তাম্পেরে ছেড়ে সুইডেন পালিয়ে যান। সবুজ উদ্যান, তাম্মারকস্কি চ্যানেল ,পথে পথে ভাস্কর্য আর ছিমছাম গুছানো এই শহরের পাশেই সাগরের মতো বিশাল দুটি লেক করেছে আরো মনোমুগ্ধকর। ফেরার সময় ভাবছিলাম আহা আমার কৈশোর, তারুণ্যের প্রাণের ঢাকাও তো এমন হতে পারত।