অবৈধ অস্ত্রের প্রবেশ রোধে অভিযান চালানো হবে: মোজাম্মেল হক
অবৈধভাবে দেশে প্রবেশ করা অস্ত্র ও গোলাবারুদ জব্দ করতে অভিযান চালানো হবে বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, ‘গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী দেশে প্রচুর অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ আসছে। অবৈধ অস্ত্র অভিযান চালিয়ে ধরা হবে। যে এরিয়াতে চোরাকারবারী থাকবে, শুধু সেখানেই অভিযান চালানো হবে। শুধু সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই অভিযান চালানো হবে।’
গতকাল রবিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিপরিষদ সভা শেষে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কমিটির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
এসময় তিনি বলেন, অনেকে বন্দুকের জাল লাইসেন্স বানিয়ে নিয়েছে। এসব লাইসেন্স যাচাই বাছাই করা হবে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যেসব এনজিও কাজ করছে, তাদের বিষয়টি দেখা হবে। তাদের স্টাফদের বেতন দেওয়ার বাইরে অর্থ দিয়ে কি করছে। অভিযোগ রয়েছে উগ্রপন্থী ও টেররিস্টদের অর্থায়ণ করা হচ্ছে। উগ্রবাদীদের অর্থায়ন করার বিষয়টি সঠিক কি না দেখা হবে।
মন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গারা এ দেশ থেকে যেতে চায় না। এজন্য তাদেরকে নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে কূটনৈতিক তৎপরতার পাশাপাশি ক্যাম্পে যে মারামারি-হানাহানি সৃষ্টি হয় সেসব বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও তৎপর হতে হবে। এজন্য এমটিএমসির সদস্যদের মিটিংয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিভিন্ন এনজিও কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তারা কত টাকা পেলো তার স্টেটমেন্ট দিতে হবে। একই সঙ্গে কত টাকা রোহিঙ্গাদের জন্য ব্যয় করে এবং কত টাকা কর্মকর্তাদের জন্য ব্যয় হয় সে হিসেব দিতে হবে।
মোজাম্মেল আরও বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য কতো টাকা আসলো সেটা বিভিন্ন পত্রপত্রিকাতে দেখি। সেখানে একজন রোহিঙ্গা ১২ ডলার করে পায়। এরপর কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা বাদে কিছু খরচ করে কি না। কারণ অভিযোগ আছে তারা উগ্রবাদীদের অর্থায়ন করে। সেটা পরিস্কার হওয়ার জন্য এটা লাগবে। আইনানুগভাবে যেটা সম্ভব তাদের হিসেব পত্র জানতে চাওয়া।
এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, যারা ফান্ডিং করে তাদের কাছে হিসাব চাওয়ার এখতিয়ার আমার নেই। আমাদের সচেতনার জন্য আমরা তাদেরকে জানিয়েছি যে, যেসকল টাকা দেওয়া হয় তার সঠিক ব্যবহার হলে সবাই উপকৃত হবে। যে ফান্ড আসে সেটা ১২ লাখ দিয়ে ভাগ দিলে বেরিয়ে যায়। এরমধ্য থেকে ২৫ শতাংশ তাদের (এনজিওগুলোর) বিভিন্ন ব্যয় রয়েছে সেটা বাদ দেন, তাহলেতো মূল কতো টাকা দেয়া হচ্ছে তা বেরিয়ে যাবে। বাকি ৭৫ ভাগ টাকা রোহিঙ্গাদের কাজে ব্যয় হয় কিনা সেটা তদন্ত করে দেয়ার জন্য হিসাব চাওয়া হয়েছে।
মোজাম্মেল বলেন, সাইবার ক্রাইম নিয়ন্ত্রণে আমরা ব্যর্থ। আইনশৃঙ্খলা কমিটি বার বার চেষ্টা করেছে। যারা এগুলো নিয়ন্ত্রণ করে ফেসবুক ও ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নানা চ্যানেলকে চিঠি দেয়া হয়েছে। তবে তারা তেমন কোন সাড়া দেয় না। তার প্রধান কারণ হিসেবে আমরা ধরেছি, তাদের কোন হেড অফিস না থাকাতে আমরা তাদের নিয়ন্ত্রণ সেভাবে করতে পারি না।
মন্ত্রী বলেন, তাই আমরা চাই এইসকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর অফিস বাংলাদেশে স্থাপিত হোক। যাতে আমরা প্রচলিত আইনের মধ্যে থেকে মিথ্যাচার নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। তিনি বলেন, আমাদের পাশের দেশ ভারতে এসব চ্যানেলের অফিস আছে, সেখানে কোন অন্যায় হলে জবাবদিহি করতে হয়। অথচ আমাদের দেশে ফেসবুক আইডি ব্যবহার করে মিথ্যাচার করছে। তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না। যদি তাদের অফিস থাকতো তাহলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা যেতো। কিন্তু সেটা সম্ভব হচ্ছে না। তাই আমরা চাই এইসকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর অফিস বাংলাদেশে স্থাপিত হোক।
মাদক গোটা জাতির জন্য শঙ্কার বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, মাদক কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ইতোমধ্যে মাদক ব্যবসায়ী, সেবনকারী ও পাচারকারীদের তালিকা করে তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছেন। সেসকল তালিকা ক্রস চেক করা হবে। তারপর আমরা একটি স্থায়ী তালিকা করবো। সব সংস্থা আলাদা আলাদা তালিকা করবে, পরে সমন্বয় করা হবে। তবে এই তালিকা প্রকাশ করা যাবে না।
২১ ফেব্রুয়ারির বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ২১ ফেব্রুয়ারি পালন করা হয়। এখানে রাষ্ট্রীয় শিষ্টাচার অনুসারে বিদেশি কূটনীতিকদের জন্য সেফটি সিকিউরিটির ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাদের নিরাপত্তার জন্য কমিশনারকে বলা হয়েছে। তারা যাকে সুন্দরভাবে শহীদবেদিতে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করতে পারেন। এসময় যেন অতিরিক্ত ভিড় না হয়।