আমরা জেগে রইবো তোমার আদর্শ বুকে নিয়ে : প্রধানমন্ত্রী
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বঙ্গবন্ধুকে উদ্দেশ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তোমার কাছে আমাদের অঙ্গীকার, তোমার স্বপ্নের সোনার বাংলা আমরা গড়বোই। আর সেদিন বেশি দূরে নয়।’ তিনি বলেন, ‘তুমি ঘুমিয়ে আছো টুঙ্গিপাড়ার সবুজ ছায়াঘেরা মাটিতে পিতামাতার কোলের কাছে। তুমি ঘুমাও পিতা শান্তিতে। তোমার বাংলাদেশ অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা আরো বলেন, ‘আমরা জেগে রইবো তোমার আদর্শ বুকে নিয়ে। জেগে থাকবে এ দেশের মানুষ প্রজন্মের পর প্রজন্ম তোমার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশে। তোমার দেওয়া পতাকা সমুন্নত থাকবে চিরদিন। কবিগুরুর ভাষায় তাই বলতে চাই তোমার পতাকা যারে দাও, তারে বহিবারে দাও শকতি। তোমার সেবার মহৎ প্রয়াস সহিবারে দাও ভকতি।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ‘মুজিববর্ষ’-এর বিশেষ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাতির উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি বছরব্যাপী মুজিববর্ষের উদ্বোধনও ঘোষণা করেন। বঙ্গবন্ধুর বড় মেয়ে শেখ হাসিনা দেশের ভেতরে ও বাইরে অবস্থানরত বাংলাদেশের সব নাগরিক এবং একইসঙ্গে বিশ্ববাসীকে মুজিববর্ষের শুভেচ্ছা জানান।
‘মুক্তির মহানায়ক’ শীর্ষক অনুষ্ঠানটি একশ শিশুর কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে সারাদেশে একযোগে শুরু হয়। আজ মঙ্গলবার রাত ৮টায় আগে থেকে ধারণ করা অনুষ্ঠানটি দেশের সব সরকারি-বেসরকারি টেলিভিশনের মাধ্যমে প্রচার করা হয়। করোনাভাইরাস আতঙ্কের কারণে জনসমাগম এড়িয়ে এভাবে মূল অনুষ্ঠান পুনর্বিন্যাস করা হয়।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি এবং স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতির জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে রাত ৮টায় আতশবাজি প্রদর্শনীর মাধ্যমে মুজিববর্ষ উদযাপন শুরু হয়। উদ্বোধনের সময় রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদও জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন। একই অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা রচিত ‘বাবা’ শিরোনামের কবিতা পাঠ করেন। এ সময় দুবোন পাশাপাশি দাঁড়ান।
এ বাংলায় ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ নামের এই দেশটি তিনি উপহার দিয়েছেন। দিয়েছেন বাঙালিকে একটি জাতি হিসেবে আত্মপরিচয়ের মর্যাদা। তাই তো তিনি আমাদের জাতির পিতা।’
“বঙ্গবন্ধু দুঃখী মানুষকে ক্ষুধা-দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দিতে নিজের জীবনের সব সুখ-আরাম বিসর্জন দিয়ে সংগ্রাম করেছেন আজীবন। বারবার কারারুদ্ধ হয়েছেন। মানুষের দুঃখ-কষ্ট তাঁকে ব্যথিত করতো। অধিকারহারা দুঃখী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে তিনি দ্বিধা করেননি। এ বঙ্গভূমির বঙ্গ-সন্তানদের একান্ত আপনজন হয়ে উঠেছিলেন- তাই তিনি ‘বঙ্গবন্ধু’।”
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা ছোটবেলা থেকেই মানুষের দুঃখ-কষ্টে ব্যথিত হতেন। অকাতরে বিলিয়ে দিতেন তার জামাকাপড়, বই, ছাতা। যার যখন যা প্রয়োজন মনে করতেন, তাকে নিজের জিনিস দিয়ে দিতেন। নিজের খাবারও তিনি ভাগ করে খেতেন। দুর্ভিক্ষের সময় গোলার ধান বিলিয়ে দিতেন। মানুষের জন্য কিছু করতে পারার মধ্যেই তিনি আনন্দ পেতেন। নিজের জীবনের কোনো চাওয়া পাওয়া ছিল না।’
প্রধানমন্ত্রী গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে মহান নেতা বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যসহ ১৫ আগস্টের সব শহীদ, জাতীয় চার নেতা এবং মুক্তিযুদ্ধের সব শহীদকে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, ‘ঘাতকের নির্মম বুলেট বঙ্গবন্ধুকে কেড়ে নিয়েছে ও তাঁর দেহ রক্তাক্ত করেছে। তোমার নাম বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে মুছে ফেলতে চেষ্টা করেছে। কিন্তু ওরা পারেনি। ঘাতকেরা বুঝতে পারেনি তোমার রক্ত ৩২ নম্বর বাড়ির সিঁড়ি বেয়ে-বেয়ে ছড়িয়ে গেছে সারা বাংলাদেশে। জন্ম দিয়েছে কোটি কোটি মুজিবের।’
বাংলাদেশের মানুষ আজ সত্যের অন্বেষণে জেগে উঠেছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইতিহাস মুছে ফেলা যায় না। সত্যকে মিথ্যা দিয়ে ঢেকে রাখা যায় না। আজ শুধু বাংলাদেশ নয়, তোমার জন্মশতবার্ষিকী পালিত হচ্ছে বিশ্বব্যাপী। বাংলাদেশকে বিশ্ব চিনে নিয়েছে তোমার ত্যাগের মহিমায়।’
শেখ হাসিনা জানান, আজ থেকে শুরু হয়ে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত মুজিববর্ষ উদযাপন করা হবে। ২০২১ সালে উদযাপিত হবে দেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী।
বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসজনিত উদ্ভুত পরিস্থিতিতে মুজিববর্ষ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে কিছুটা পরিবর্তন আনতে হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তবে বছরব্যাপী নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে আমরা মুজিববর্ষ উদযাপন করব। একই কারণে বিদেশি অতিথিবৃন্দের সফর স্থগিত করা হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী মুজিববর্ষ উপলক্ষে ভিডিও বার্তা পাঠিয়ে শুভেচ্ছা জানানোই ভুটানের রাজা, নেপালের রাষ্ট্রপতি, ভারতের প্রধানমন্ত্রী, জাতিসংঘের মহাসচিব ও ওআইসি মহাসচিবকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শুধু বাংলাদেশ নয়, বিভিন্ন বন্ধুপ্রতীম দেশ, ইউনেসকো ও ওআইসিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা মুজিব বর্ষ উদযাপনে অংশীদার হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘আমরা মুজিববর্ষ পালনের সুযোগ পেয়েছি। এ যে আমাদের জীবনে কত বড় পাওয়া, তা ভাষায় বোঝাতে পারব না। আমি গভীর কৃতজ্ঞতা জানাই দেশবাসীর প্রতি- যারা আমার দল, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে, পরপর তিনবার সরকার পরিচালনার দায়িত্ব দিয়ে মুজিব বর্ষ উদযাপনের সুযোগ করে দিয়েছেন।’
শেখ হাসিনা তাঁর নিজের এবং ছোট বোন শেখ রেহানার পক্ষ থেকে দেশের সব বয়সের এবং শ্রেণি-পেশার মানুষকে কৃতজ্ঞতা জানান।