আশীষ রায়ের বিচার শুরু
চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হন আশীষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী। তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলায় অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত। আজ রোববার (২১ মে) বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১৩-এর বিচারক কুদরত-ই-এলাহী এই আদেশ দেন। এদিন এ মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য দিন ধার্য ছিল। আশীয় রায় তার আইনজীবীর মাধ্যমে এ মামলায় অভিযোগের দায় হতে অব্যাহতির আবেদন করেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারক অব্যাহতির আবেদন নাকচ করে অভিযোগ গঠন করেন। এই অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে আলোচিত মামলার বিচার শুরু হলো। এ ছাড়া এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য বিচারক আগামী ১৭ জুলাই দিন ধার্য করেছেন।
গত বছরের ৬ এপ্রিল রাত ৯টার দিকে আশীষ রায় চৌধুরীর বাড়িতে অভিযান চালায় র্যাব। রাত ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে কালো কাচ ও সাদা একটি গাড়িতে করে তাকে র্যাব সদর দপ্তরের দিকে নিয়ে যাওয়া হয় আশিষ রায় চৌধুরীকে।
অভিযান শেষে র্যাবের মুখপাত্র খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘আশীষ রায় চৌধুরীর বিরুদ্ধে গত বছরের ২৮ তারিখে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। তিনি এখানে আত্মগোপন করে ছিলেন। তাঁর পরিবারের কোনো সদস্য এখানে ছিল না।’
খন্দকার আল মঈন জানান, অভিযান চলাকালীন ২৩ বোতল মদ পেয়েছেন তাঁরা। এ ছাড়া এ সময় তাঁরা দুই নারীকেও আটক করেন। ওই দুজনের সঙ্গে আশীষ চৌধুরীর কী সম্পর্ক, তা জানার সেটার জানার জন্য জেরা করা হবে বলেও জানান তিনি।
র্যাব সূত্রে জানা গেছে, আশীষ চৌধুরীকে যে বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তা তার নামে নয়, একটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের নামে ভাড়া নেওয়া হয়েছিল। সেটি আশীষ চৌধুরী নেননি। ওই বাসায় একাধিক নারীর যাতায়াত ছিল বলে জানা গেছে।
১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর রাজধানীর বনানীর ১৭ নম্বর রোডের আবেদীন টাওয়ারে ট্রাম্পস ক্লাবের নিচে নায়ক সোহেল চৌধুরীকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। ঘটনার দিনই নিহত সোহেল চৌধুরীর ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী গুলশান থানায় আদনান সিদ্দিকীকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। পরবর্তী সময়ে ১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সহকারী কমিশনার আবুল কাশেম ব্যাপারী আসামি আদনান সিদ্দিকীসহ নয় জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
অভিযোগপত্রে আজিজ মোহাম্মদ ভাই ওরফে আব্দুল আজিজ, ট্রাম্পস ক্লাবের মালিক আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম, তারিক সাঈদ মামুন, সেলিম খান, হারুন অর রশীদ ওরফে লেদার লিটন ওরফে বস লিটন, আশীষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী, ফারুক আব্বাসী ও সানজিদুল ইসলাম ইমনকে আসামি করা হয়।
অভিযোগপত্রে যা আছে
তদন্ত কর্মকর্তা অভিযোগপত্রে বলেন, “বনানী জামে মসজিদের পাশে আবেদীন টাওয়ার। সেই টাওয়ারের অষ্টম তলায় ‘সুপার ট্রাম্পস ক্লাব’। এই ক্লাবের মালিক বান্টি ইসলাম ও আশিষ কুমার রায় চৌধুরী। সেই ক্লাবে আসামাজিক কার্যকলাপ, নাচ গান, মদ্য পান ও মহিলা দ্বারা অশ্লীল নৃত্য হতো এবং সেখানে আপত্তিকর পরিবেশের সৃষ্টি হতো।”
তদন্ত কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘সোহেল চৌধুরী ট্রাম্পস ক্লাবে এমন আপত্তিকর পরিবেশ বন্ধ করার জন্য মসজিদ কমিটির লোকজন নিয়ে যায়। তিনি সেখানে ক্লাব বন্ধ করার চেষ্টায় ব্যর্থ হন। পরবর্তীতে ১৯৯৮ সালের ১৪ জুলাই সেই ক্লাবে গার্লফ্রেন্ড নিয়ে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ে সঙ্গে সোহেল চৌধুরীর গোলমাল হয়। সোহেল চৌধুরী আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে কুত্তার বাচ্চা বলে গালি দেয়। পরে সোহেল চৌধুরীর বন্ধু কালা নাসির আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে গুলি করতে গেলে তিনি বাথরুমে পালিয়ে আত্মরক্ষা করেন।’
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়েছে, ‘মেজর (অব.) হাফিজ তাদের অনুরোধ করে সোহেল চৌধুরীকে নামিয়ে দেন। পরে বিভিন্ন সময় বান্টি ইসলাম ও আশিক কুমার চৌধুরীর সঙ্গে ট্রাম্পস ক্লাবে সোহেল চৌধুরীর গোলমাল হয়। সোহেল চৌধুরীর কারণে ট্রাম্পস ক্লাবের কর্মকাণ্ড ব্যহত হয়, তাঁরা তখন সোহেল চৌধুরীকে দেখাইয়া দিবে বলে ভয়ভীতি দেখান। ঘটনার দিন সোহেল চৌধুরী বনানীর সেই ট্রাম্পস ক্লাবে যেতে চান। তখন তাকে প্রবেশের অনুমতি না দিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তিনি আবার রাত ৩টায় ট্রাম্পস ক্লাবের সম্মুখে এলে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী পরিকল্পিতভাবে আসামিরা পেশাদার খুনিদের দিয়ে গুলি করে সোহেল চৌধুরীকে হত্যা করে বলে প্রমাণ হয়েছে।’