ইউনিট কমিটিও নেই ছাত্রদলে, অসন্তোষ মাঠ পর্যায়ে
অপূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়েই পূর্ণাঙ্গ মেয়াদ শেষ হয়েছে আরও ছয় মাস আগে। তার পরেও সে কমিটিতেই চলছে বিএনপির ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠনটির গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট ঢাকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোও বহুদিন পাচ্ছে না কমিটি।
নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করতে সাংগঠনিক টিম গঠন করেও হয়নি শেষ রক্ষা। ফলে ছাত্রদলের ভেতরে দেখা দিয়েছে অসন্তোষ। হতাশ দলের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও। যদিও খুব দ্রুতই কমিটি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
বলা হয়ে থাকে, নব্বইয়ের দশকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন এবং ১৯৯১ সালে বিএনপিকে ক্ষমতায় আনতে অন্যতম ভূমিকা পালন করে ছাত্রদল। কিন্তু, দিন বদলের সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রদল যেন তার অতীত ঐতিহ্যকে হারিয়ে ফেলছে—এমনটাই মনে করছেন সংগঠনটির বেশ কয়েকজন নেতৃবৃন্দ।
যদিও পুরোনো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে ২০১৯ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সারা দেশের কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটে নির্বাচন করা হয় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। সে সময় সর্বোচ্চ ভোটে সভাপতি পদে নির্বাচিত হন ফজলুর রহমান খোকন এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন ইকবাল হোসেন শ্যামল। অপূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়েই দুই বছর ছয় মাস পার করছে খোকন-শ্যামল নেতৃত্বাধীন ছাত্রদল। এ সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, কবি নজরুল কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, তেজগাঁও কলেজ, মিরপুর বাঙলা কলেজের মতো ছাত্রদলের সুপার ইউনিট খ্যাত ইউনিটগুলোও পায়নি কমিটি।
এদিকে, কমিটির নেতৃত্বে থাকা ‘সুপার ফাইভ’ নেতাদের বিরুদ্ধে উঠেছে নানা অভিযোগ। ফলে পদপ্রত্যাশী এবং মাঠের কর্মীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে অসন্তোষ। তাঁরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করে, দলের বিপদের সময় মাঠে থেকে, কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে, পরিচয় দেওয়ার মতো কিছুই জোটেনি তাঁদের ভাগ্যে।
ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের পদপ্রত্যাশী এক নেতা বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করছি। আন্দোলন-সংগ্রামের মাঠে আছি। কিন্তু, অনেকদিন ধরে আমাদের কমিটি হচ্ছে না। কমিটি না হওয়ার কারণে ছাত্রদলের অনেক নেতাকর্মী মধ্যেই এখন হতাশা কাজ করছে।’
পদপ্রত্যাশী ওই নেতা বলেন, ‘বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটি দায়িত্ব নেওয়ার পর ছাত্রদলে ঢাকার বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোর কমিটি করার জন্য একটি টিম গঠন করে দেওয়া হয়। তার মেয়াদও শেষ হয়েছে। অথচ টিমগুলো কোনো কমিটি করে দিতে পারেনি।’
অভিযোগ আছে, ‘টিম করে যাঁদের কমিটি করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তাঁরা কেন্দ্রের কাছে নিজস্ব ও পছন্দের ব্যক্তিদের নেতৃত্বে আনতে প্রস্তাবনা দেন। সেটিও আলোর মুখ দেখেনি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মিরপুর বাঙলা কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক পদপ্রত্যাশী এক নেতা এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এখনও আমাদের ইউনিটের কোনো কমিটি না হওয়ায় কর্মীদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। এতে সাংগঠনিক কাজ ঝিমিয়ে পড়ছে। অথচ এখনই সময় দলকে চাঙা রাখা। কিন্তু, কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।’
সরকারি কবি নজরুল কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক পদপ্রত্যাশী আরেক নেতা এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে মাঠে থেকে আন্দোলন-সংগ্রাম করে দলের কর্মসূচি সফল করছি। অথচ কমিটির বেলায় কিছুই হচ্ছে না। এখন পর্যন্ত ছাত্রদলকর্মী ছাড়া পরিচয় দেওয়ার মতো কিছুই নেই আমাদের। ফলে আমাদের সঙ্গে যাঁরা রাজনীতি করছেন, তাঁরাও হতাশায় ভুগছেন।’
কবি নজরুল কলেজের এই ছাত্রদলকর্মী বলেন, ‘কেন্দ্র থেকে টিম গঠন করে দেওয়ার পর আমরা ভেবেছিলাম, এবার নতুন কমিটি আলোর মুখ দেখবে। কিন্তু, নির্ধারিত সময় পার হয়ে গেলেও সে টিম কোনো কমিটি করে দিতে পারেনি।’
জানতে চাইলে সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ঢাকার সুপার ইউনিটগুলো অত্যন্ত জরুরি বলে আমিও মনে করি। কারণ, আন্দোলন-সংগ্রামের কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য এসব সুপার ইউনিটগুলোই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।’
সাইফ মাহমুদ জুয়েল আরও বলেন, ‘কমিটিগুলো না হওয়ায়, নতুন নেতৃত্বের হাতে দায়িত্ব না আসায় অনেকেই ডিমোরালাইজ হয়ে যাচ্ছেন, অনেক নিষ্ক্রিয় হয়ে যাচ্ছেন। ফলে পেছনের অনেকেই নেতৃত্বে চলে আসছেন, আর যোগ্যরা রাজনীতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছেন। এটা আমরা বুঝতে পারছি।’
কবে নাগাদ কমিটি হতে পারে জানতে চাইলে সাইফ মাহমুদ জুয়েল বলেন, ‘কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ করাসহ ঢাকার সুপার ইউনিটের কমিটি গঠনের বিষয়ে কাজ চলছে, আশা করছি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা নতুন নেতৃত্বের হাতে দায়িত্ব দিতে পারব।’