ইউনিয়ন পরিষদের জায়গা দখল করে পাকা স্থাপনা
নওগাঁর মহাদেবপুরের রাইগাঁ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) জায়গা দখল করে পাকা স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগের সাবেক এক নেতার বিরুদ্ধে। ওই আওয়ামী লীগনেতার নাম ফেরদৌস আলম কাজল। তিনি রাইগাঁ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক আইনবিষয়ক সম্পাদক।
এদিকে স্থাপনা নির্মাণ বন্ধের দাবিতে জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন রাইগাঁ ইউপি কার্যালয়ের সচিব শাহ আলম।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার মাতাজিহাট এলাকায় রাইগাঁ ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় সংলগ্ন ৬ শতাংশ জমি ইউনিয়ন পরিষদের মালিকানাধীন। যা জনগণের যাতায়াতের রাস্তা হিসেবে রেকর্ডভুক্ত। সম্প্রতি সেই জমি দখল করে আওয়ামী লীগনেতা ফেরদৌস আলম কাজল দোকানঘর নির্মাণের উদ্দেশে পাকা স্থাপনা নির্মাণের কাজ শুরু করেন। এতে ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃপক্ষ বাধা দিলেও তিনি জোরপূর্বক নির্মাণকাজ চালিয়ে যেতে থাকেন।
স্থানীয় ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার দিয়ে প্রাথমিকভাবে পরিমাপ করে দেখা যায়, ওই জমি ইউনিয়ন পরিষদের। সেখানে স্থাপনা নির্মাণ করা হলে জনগণের চলাচলের রাস্তা বন্ধ হয়ে যাবে। এর পরও তিনি সেখানে স্থাপনা নির্মাণ কাজ অব্যাহত রেখেছেন। নির্মাণাধীন স্থাপনের পাশেই ইউনিয়ন পরিষদের নামে থাকা আরও ৬ শতাংশ জমি দখল করে স্থানীয় আতোয়ার রহমান দুটি ও সামসুজ্জামান (সামু) একটি দোকানঘর নির্মাণ করেন।
সরেজমিন রাইগাঁ ইউপি কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, কার্যালয় সংলগ্ন পূর্বদিকে পাকা স্থাপনা নির্মাণের জন্য সিসি পিলার তোলার কাজ চলছে এবং বিরোধপূর্ণ জায়গাটি ইট দিয়ে দেয়াল তুলে সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে।
মাতাজীহাট বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্থাপনা নির্মাণকারী ফেরদৌস আলম রাইগাঁ ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ও মহাদেবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি মঞ্জুর আলমের চাচাতো ভাই। তাঁর ইন্ধনেই তিনি জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করছেন বলে অভিযোগ করেছেন তারা। এ ছাড়া তিনি চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় তাঁর চাচা আতোয়ার রহমান ও চাচাতো ভাই সামসুজ্জামান ইউনয়ন পরিষদের জায়গা দখল করে পাকা স্থাপনা নির্মাণ করেন।
রাইগাঁ ইউপি চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান বলেন, ‘চেয়ারম্যান হিসেবে জনগণের স্বার্থরক্ষা করা আমার সর্বোচ্চ দায়িত্ব। দখল করা জায়গা উদ্ধারের জন্য আমার যা যা করণীয় তাই করব। দখলকারীদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় থাকতে পারে না। আমি জায়গা উদ্ধারের জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
অভিযোগের বিষয়ে ফেরদৌস আলম বলেন, ‘যে জায়গাটি নিয়ে বিরোধ—সেটি আমাদের বাপ-দাদাদের আমলে কেনা। পৈত্রিক সূত্রে জায়গাটি আমি, আমার চাচা ও চাচাতো ভাইয়েরা পেয়েছি। এখন ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃপক্ষ বলছে, সেই জায়গা না কি তাদের। বিষয়টি নিয়ে ইউএনও সাহেব আমাকে ডেকেছিলেন। বিরোধপূর্ণ জায়গার সুরাহার জন্য অধিকতর তদন্ত ও মাপজোক করা হবে। ওই জায়গা ইউনিয়ন পরিষদের হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’
মহাদেবপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নুসরাত জাহান বলেন, ‘অভিযোগ পাওয়ার পর বিরোধপূর্ণ জায়গাটি মাপজোক করে দেখা হয়েছে। পরিমাপ করে দখল করা জায়গার মধ্যে যতটুকু ইউনিয়নের পরিষদের জমি পাওয়া গেছে, তা দখলমুক্ত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’