ইভিএম : বিশেষজ্ঞরা বললেন চমৎকার, অপেক্ষা করতে বললেন সিইসি
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) দেখার পর এটিকে চমৎকার ও ত্রুটিহীন মেশিন বলে উল্লেখ করেছেন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা। আর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বললেন, ‘মেশিনের ভালো-খারাপ নিয়ে কিছু বলব না, আপনাদের আর একটু অপেক্ষা করতে হবে। ইভিএম মেশিন নিয়ে আমরা কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাইনি।’
আজ বুধবার কারিগরি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ইভিএম নিয়ে মতবিনিময় করে কমিশন। মতবিনিময় সভা শেষে এমন অনুভূতি ব্যক্ত করেন সিইসি। এর আগে বিশেষজ্ঞরা দাবি করেন—ইভিএম চমৎকার ও ত্রুটিহীন মেশিন।
ইভিএম প্রদর্শন শেষে অধ্যাপক মোহাম্মদ জাফর ইকবাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘একটা মেশিন খুলে দেখেছি। এটা অত্যন্ত চমৎকার একটা মেশিন। আমার মনে হয়, পৃথিবীর কম দেশেই এই মূল্যবান জিনিসটা আছে। যারা এটি তৈরি করেছেন আমি তাদের কনগ্রাচুলেশনস করি। অত্যন্ত সহজভাবে এটা চালানো সম্ভব।’
চাইলেই নিজের মত করে ইভিএম কাস্টমাইসড করা যায় কি না? সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জাফর ইকবাল বলেন, ‘যারা এই কথাটা বলছে, তাদের আমি অনুরোধ করব, তারা যেন সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগ আমাদের জানান এবং আমাদের এই জিনিসটা করে দেখান। টেকনিক্যাল দিক থেকে অন্য কিছু করা সম্ভব না। অন্য যে কোনো মেশিন থেকে এটা আধুনিক। এটি এমনভাবে করা যে, এটি মেনুপুলেট করার সম্ভাবনা নেই।’
ব্রাক ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এম কায়কোবাদ বলেন, ‘কোনো মেশিনকে শতভাগ বিশ্বাস করা যাবে না। তবে, এখানে যেটা করা হয়েছে, এর প্রত্যেকটা অংশ এমনভাবে কাস্টমাইজড করা হয়েছে যে, একজন ইচ্ছে করলেই সেটাকে পরিবর্তন করতে পারবেন না।’
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমরা কারও মতামতকে উপেক্ষা করিনি। বিরোধীদল থেকে যে মতামত এসেছে, আমরা তা উড়িয়ে দিইনি। আমরা অনেকগুলো মিটিং করেছি। আজকেও বিশিষ্টজনদের সঙ্গে বসেছি। যাঁরা প্রযুক্তিবিদ, তাঁদের সঙ্গে বসেছি। এই মেশিনের (ইভিএম) ব্যাপারে উনাদের বক্তব্যের পরে কোনো কিছু বলতে চাচ্ছি না। আমি শুধু বলতে চাচ্ছি এই মেশিনের বিষয়ে আরও কয়েকটা মিটিং করব। সেখানে পলিটিক্যাল পার্টিকে ডাকা হবে।’
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘একজন টেকনিক্যাল ব্যক্তি পারবে মেশিন নিয়ে মূল্যায়ন করতে। আমরা সেই পার্সপেক্টিভ থেকে টেকনিক্যাল পারসনদের ডেকেছি। পলিটিক্যাল ব্যক্তিদেরও আমরা অনুরোধ করব, তাদের যে টেকনিক্যাল টিম আছে বা যদি থাকে, তাঁদের দিয়ে যাচাই করার জন্য।’
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘ইভিএমে নিয়ে প্রযুক্তিবিদরা বলেছেন—মেনিপুলেশন করার সুযোগ নেই। আমাদের ওইসব মানুষের ওপর আস্থা রাখতে হবে, যাঁরা এই জিনিসগুলো বোঝেন, যাঁরা প্রোডাক্টগুলো তৈরি করেছেন।’
‘প্রযুক্তিবিদরা আশ্বস্ত হয়েছেন’ উল্লেখ করে সিইসি বলেন, ‘আমরা আরও কয়েকটি বড় মিটিং করব। পলিটিক্যাল পার্টি যেহেতু মাঠে বলছেন—এটা মন্দ মেশিন, ভালো মেশিন না। আমরা লিখিতভাবে জানতে চাইব যে তাঁরা কী কী সমস্যা পাচ্ছেন।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘ইভিএম মেশিন নিয়ে আমরা কোনো সিদ্ধান্তে পৌছাইনি। আমরা দ্বাদশ জাতীয় সংদস নির্বোচনে ৩০০ আসনে করব, না ১০০ আসনে করব, না মোটেই করব না; এগুলো যখন পরীক্ষা-নিরীক্ষা হবে, তখন সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
মতবিনিময় সভায় নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবিব খান (অব.), বেগম রাশেদা সুলতানা, মো. আলমগীর, মো. আনিছুর রহমান, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক মতিন সাদ আবদুল্লাহ, ড. মো. মাহফুজুল ইসলাম, বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির (বিএমটিএফ) পরিচালক মেজর জেনারেল সুলতানুজ্জামান মো. সালেহ উদ্দিন, সেনাকল্যাণ সংস্থার চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলামসহ ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।