ইসি গঠনে সংবিধান অনুযায়ী আইন চেয়েছে জাসদ
নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়নে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের ভূমিকা চেয়েছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)। দলটির সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেছেন, পাঁচ বছর পর পর যেন ইসি গঠন করতে গিয়ে বিব্রত হতে না হয়, সে কারণেই তারা এই আইন প্রণয়ন এবং আইন প্রণয়নে রাষ্ট্রপতির ভূমিকা প্রত্যাশা করছেন।
আজ বুধবার রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনবিষয়ক সংলাপে অংশ নেওয়ার পর বঙ্গভবনের সামনে অপেক্ষমাণ গণমাধ্যমকর্মীদের এ কথা বলেন জাসদ সভাপতি।
হাসানুল হক ইনু বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে পাঁচ বছর পর পর একটি বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। এ অবস্থা থেকে যেন স্থায়ী একটি সমাধান পাওয়া যায়, তার জন্য আমরা রাষ্ট্রপতির ভূমিকা প্রত্যাশা করছি। নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে ভবিষ্যতে আইনি কাঠামো করতে রাষ্ট্রপতি যেন সরকারকে দিক-নির্দেশনা দেন, আমরা সে কথা বলেছি।
এর আগে বিকেল ৪টায় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বঙ্গভবনে সংলাপে বসে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ। জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু এবং সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতারসহ দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির ছয় সদস্য এ সংলাপে অংশ নিয়েছেন।
এর আগে ইসি পুনর্গঠনের বিষয়ে আলোচনার জন্য সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে ২০ ডিসেম্বর থেকে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
এর আগে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন গণমাধ্যমকে জানান, আগামী ২৬ ডিসেম্বর বিকেল ৪টায় সংলাপের জন্য বঙ্গভবনে যাবে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) ও একই দিনে সন্ধ্যা ৬টায় যাবে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)।
২৭ ডিসেম্বর বিকেল ৪টায় সংলাপের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনকে। একই দিন সন্ধ্যা ৬টায় সংলাপের জন্য ডাকা হয়েছে খেলাফত মজলিশকে। এ ছাড়া ২৮ ডিসেম্বর বিকেল ৪টায় বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টিকে আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি।
রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব আরও জানান, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ফ্রন্টকে ২৯ ডিসেম্বর বিকেল ৪টায় সংলাপে যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে এবং একই দিন সন্ধ্যা ৬টায় ইসলামী ঐক্যজোটও আমন্ত্রণ পেয়েছে।
বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর এ সংলাপের মধ্য দিয়ে যে নতুন কমিশন গঠিত হবে, তার অধীনেই হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচন কমিশন নিয়োগে আইন প্রণয়ন না হওয়ায় গত দুইবার রাষ্ট্রপতি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সার্চ কমিটি গঠন করে ইসি গঠন করে আসছেন।
জানা গেছে, সংলাপে আমন্ত্রিত প্রতিটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সার্চ কমিটি এবং পরবর্তীকালে নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করছেন রাষ্ট্রপতি। ইসির নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলকে পর্যায়ক্রমে রাষ্ট্রপতির সংলাপে আমন্ত্রণ নেবে। গত দুইবার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারপতির নেতৃত্বে সার্চ কমিটি গঠন করেন রাষ্ট্রপতি। গত দুইবারের সার্চ কমিটির প্রধান ছিলেন বর্তমান প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। সার্চ কমিটির সাচিবিক দায়িত্ব পালন করে আসছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব।
আগামী ২০ জানুয়ারির মধ্যে নতুন সার্চ কমিটি গঠন করবেন রাষ্ট্রপতি। সার্চ কমিটি রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম ব্যক্তিসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের ব্যক্তির সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে নতুন কমিশন গঠনে সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রস্তুত করবেন। এর মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের জন্য দুজন, চারজন নির্বাচন কমিশনারের জন্য আটজনের নাম সার্চ কমিটি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রস্তাব করবে। রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটির প্রস্তাবিত ১০ জনের নামের তালিকা থেকে একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং চার জন নির্বাচন কমিশনার চূড়ান্ত করবেন।