ঈদযাত্রা : উত্তরবঙ্গ-খুলনাগামী ট্রেনে শিডিউল বিপর্যয়
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে বাড়ি ফিরছে মানুষ। কিন্তু, এ যাত্রা সহজ নয়। বিশেষ করে ট্রেনের সূচি বিপর্যয়ের কারণে সে ভোগান্তি আরও চরমে। আজ শনিবার বেশির ভাগ রুটের ট্রেন প্রায় নির্ধারিত সময়ে ছাড়লেও উত্তরবঙ্গ ও খুলনাগামী ট্রেনে শিডিউল বিপর্যয় ঘটেছে৷
শেষ দিনের ঈদ যাত্রায় সীমাহীন ভোগান্তি আর দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে বেশ কয়েকটি রুটের ট্রেনের যাত্রীদের। ট্রেনের জন্য ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে অনেককে। ভয়াবহ শিডিউল বিপর্যয়ের কারণে আজ রাতে ঢাকা ছাড়ার কথা থাকলেও, দুটি ট্রেনের যাত্রা বাতিল করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
দেশের সব অঞ্চলের যাত্রীদের এ দুর্ভোগ পোহাতে হলেও সবচেয়ে বেশি বিপাকে পরেছে উত্তরবঙ্গের মানুষ। উত্তরবঙ্গগামী সবগুলো ট্রেনই শিডিউল বিপর্যয়ে পড়েছে। পঞ্চগড়গামী দ্রুতযান এক্সপ্রেস, খুলনাগামী চিত্রা এক্সপ্রেস, কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস, রাজশাহীগামী পদ্মা এক্সপ্রেস নির্ধারিত সময়ের কয়েক ঘণ্টা পর ঢাকা থেকে রওনা দেয়। এ কারণে কমলাপুর রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মে শুয়ে বসে অপেক্ষায় সারা রাত কাটিয়েছেন যাত্রীরা। এ দুর্ভোগের জন্য রেল কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনাকেই দায়ী করছেন তাঁরা। তবে, রেল কর্তৃপক্ষ বলছে—অতিরিক্ত যাত্রী বহনের কারণে ধীরগতিতে চলায় ট্রেন যথাসময়ে গন্তব্যে পৌছাতে পারছে না। আর, সে কারণেই কমলাপুরে ফিরতেও অনেক সময় লাগছে।
আজ মানুষের ঈদ যাত্রার চতুর্থ দিন। আর, সরকারি ছুটির দ্বিতীয় দিন। ঈদের ছুটি শুরু হওয়ার পর গতকাল শুক্রবার ঈদযাত্রার প্রথম দিনে রাজধানী ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশনে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় ছিল। তবে, আজ তেমন ভিড় নেই৷
সবচেয়ে বড় শিডিউল বিপর্যয় ঘটেছে উত্তরের জেলা নীলফামারীগামী ট্রেন নীলসাগর এক্সপ্রেসের৷ সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে ট্রেনটি ছাড়ার কথা থাকলেও শিডিউল বিপর্যয়ের কারণে এখনও তা ছাড়েনি৷ ট্রেনটি ছেড়ে যাওয়ার সময় হিসেবে রেলওয়ের পক্ষ থেকে বেলা ৩টা ১০ মিনিটের কথা বলা হয়েছে৷ খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস সকাল সোয়া আটটায় ছাড়ার কথা ছিল৷ কিন্তু, বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ট্রেনটি ছেড়ে যায়নি৷ যদিও রেলওয়ের পক্ষ থেকে ট্রেনটি ছাড়ার সম্ভাব্য সময় হিসেবে বেলা ১১টা ৩৫ মিনিটের কথা বলা হয়েছে৷
সুন্দরবন এক্সপ্রেসের অপেক্ষায় থাকা খুলনার এক যাত্রী বলেন, ‘সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কমলাপুরে এসে শুনি ট্রেন ছাড়তে দেরি হবে৷ কয়েক ঘণ্টা ধরে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছি৷’
এ ছাড়া জামালপুরগামী অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস বেলা ১১টায়, পঞ্চগড়গামী একতা এক্সপ্রেস সকাল ১০টা ১০ মিনিটে, সিলেটগামী জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস বেলা সোয়া ১১টায় এবং কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস বেলা পৌনে ১১টায় ছাড়ার কথা থাকলেও যথাসময়ে ট্রেনগুলো ছেড়ে যায়নি।
বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) সরদার সাহাদাত আলী বলেন, ‘আজ সব ট্রেন শিডিউল অনুযায়ী চলছে না৷ উত্তরবঙ্গের ট্রেনগুলোতে কিছুটা শিডিউল বিপর্যয় ঘটেছে৷ তবে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে ঢাকা-কিশোরগঞ্জ রুটের ট্রেনগুলো মোটামুটি শিডিউল অনুযায়ী চলছে৷ শুধু উত্তরবঙ্গগামী ট্রেনগুলোয় শিডিউলের কিছুটা বাইরে চলছে৷’
শিডিউল বিপর্যয় ও যাত্রীর চাহিদা বেশি থাকায় দ্রুতযান এক্সপ্রেসের শনিবার রাত ৮টা ও পঞ্চগড় এক্সপ্রেসের রাত ১০টা ৪৫ মিনিটের ট্রেনের যাত্রা বাতিলের ঘোষণা দেয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু, অল্প সময়ের ব্যবধানে সে ঘোষণা থেকে সরে আসে কর্তৃপক্ষ।
আজ বেলা ১১টায় কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার জানান, ঈদযাত্রায় বাড়িমুখী মানুষের চাপ বেশি। এই জনস্রোত ঠেকানো কঠিন। তাই শিডিউল বিপর্যয় ও মানুষের চাপকে সামনে রেখে দুটি ট্রেনের যাত্রা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
পরে বেলা ১১টা ৩৫ মিনিটের দিকে অবশ্য মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার জানান, কোনো ট্রেনের যাত্রা বাতিল হচ্ছে না।