এবারও দুই বাংলার প্রতিমা ভাসছে না ইছামতিতে
এবারও দুই বাংলার প্রতিমা ভাসছে না সীমান্ত নদী ইছামতিতে। অনুষ্ঠিত হচ্ছে না দুই দেশের অসাম্প্রদায়িক মিলন মেলা। এরইসঙ্গে হারিয়ে যেতে বসেছে বাংলাদেশ ও ভারতের সীমানা বিভাজনকারী নদী ইছামতির ঐতিহ্যবাহী প্রতিমা বিসর্জন মেলা।
তবে আজ শুক্রবার সীমিত আকারে এ মেলা বসবে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
এর আগে ২০০ বছর ধরে দেড় কিলোমিটারেরও বেশি চওড়া ইছামতির দুই তীরে দেবী দুর্গার বিসর্জনকে ঘিরে নৌকায় শত শত প্রতিমা নিয়ে লাখ জনতার মেলা বসতো। তারা নদীতে ভাসমান নৌকায় মাইক বাজিয়ে ঢাকঢোল কাঁসর ঘণ্টা শঙ্খ আর উলুধ্বনি দিয়ে ভক্তিগীতির তালে তালে নেচে গেয়ে আনন্দ স্রোতে ভাসিয়ে দিতেন নিজেদের। এ সময় স্লোগান ভেসে আসতো দুই দেশের জনগণকে ‘ঈদ ও পূজার শুভেচ্ছা’। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে দেওয়া হতো ইলিশ উপহার। আর ভারতীয়রা দিতেন মিষ্টি ও ফুল আর উত্তরীয়। এভাবেই দুই বাংলার অসাম্প্রদায়িক মানুষের মধ্যে শুভেচ্ছা বিনিময় হতো বহুকাল ধরে।
নদীর এপারে ব্রিটিশ আমলের অতি প্রাচীন দেবহাটার টাউন শ্রীপুর পৌরসভার জমিদার বাড়ি, ওপারে ভারতের বসিরহাটের টাকী পৌরসভার টাকী জমিদার বাড়ি। দুই পারের দুই জমিদাররা যৌথ উদ্যোগে এই মিলনমেলার গোড়াপত্তন করেছিলেন। এতে দুই দেশের মানুষ অন্তত এক দিনের জন্য নদীতে ভাসমান অবস্থায় কুশল বিনিময় করে শান্তি লাভ করতো। বিজিবি ও বিএসএফ ছাড়াও দুই প্রান্তের প্রশাসনের কর্মকর্তারা এতে সহযোগিতা করে আসছিলেন।
জানা গেছে, ২০১৩ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর এই মিলন মেলা সাড়ম্বরে বসলেও সে সময় জঙ্গি তৎপরতার কারণে মিলনমেলা খানিকটা থমকে যায়। তখন থেকে প্রতিবারের মেলা হতে থাকে সীমিত আকারে। এর পরের বছর নদীতে প্রতিমা দর্শনকালে একটি শিশুর সলিল সমাধির ঘটনা ঘটে। তার পরের বছর ২০১৭ সালের অক্টোবরে বিসর্জনের সময় ইছামতিতে আনন্দ ভ্রমণকালে সান্ধ্যকালীন আলো আঁধারিতে ভাসমান নৌকা থেকে পড়ে গিয়ে নদীতে ডুবে প্রাণ হারান কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গবেষক শিক্ষক। সেই থেকে ইছামতিতে মিলনমেলায় ভাটা পড়ে। ভারতীয়রা তাদের জলসীমায় থেকে এবং বাংলাদেশিরা বাংলাদেশের জলসীমায় ভেসে ভেসে সীমিতভাবে এই মিলন মেলা করে থাকেন। এতে ভারতীয় পারের কিংবা বাংলাদেশ পারের প্রতিমা অনেক দূরে থাকে। কেউই নদীর শূন্যরেখা অতিক্রম করে না।
এবার সেই একই ধারায় ইছামতিতে বসছে প্রাণহীন মিলনমেলা।
বিজিবি জানিয়েছে, ইছামতির শূন্যরেখায় বিজিবি ও বিএসএফ নিজ নিজ জলরাশিতে যৌথ টহলে থাকবে। কোনো পক্ষের কেউ এই শূন্যরেখা অতিক্রম করতে পারবে না। এছাড়া বিকেল সাড়ে ৫টার মধ্যে বিসর্জন কার্যক্রম শেষ করতে হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। নিজ জলরাশিতে প্রতিমা বিসর্জনের জন্য প্রতি নৌকায় পাঁচজনের বেশি থাকতে পারবেন না বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এভাবেই দিন দিন নিষ্প্রভ হয়ে পড়ছে দুই বাংলার ঐতিহাসিক মিলন মেলা।

সুভাষ চৌধুরী, সাতক্ষীরা