করোনা সনদ নিয়ে প্রতারণা, গ্রেপ্তার ৩
রাজশাহী জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়কে ঘিরে গড়ে ওঠা করোনা সনদ প্রতারণাচক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গতকাল বুধবার দিবাগত রাতে ও বৃহস্পতিবার সকালে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন রাজশাহী জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে অফিস সহকারী তারেক আহসান (৪১), রাজশাহী বক্ষব্যাধি হাসপাতালের গাড়িচালক রফিকুল ইসলাম (৪২) ও তাঁর স্ত্রী শামসুন্নাহার শিখা (৩৮)। গতকাল দিবাগত গভীর রাতে রফিকুল ও শিখাকে নগরীর হেতমখাঁ এলাকার তাদের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। একই এলাকা থেকে আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে তারেক আহসানকেও গ্রেপ্তার করা হয়। তবে তারেক নগরীর উপকণ্ঠ কাপাসিয়া এলাকার বাসিন্দা।
জানা যায়, এই চক্রটি করোনার নেগেটিভ রিপোর্টকে পজিটিভ বলে বিদেশগামী ও চাকরিজীবীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিতেন টাকা। চক্রের সদস্যরা গত চার মাসে এভাবে হাতিয়ে নিয়েছে মোটা অঙ্কের টাকা।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে মহানগর গোয়েন্দা কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ডিবির উপকমিশনার আরেফিন জুয়েল জানান, সরকারের উচ্চপর্যায়ের একটি গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে করোনা সনদ জিম্মিকারী প্রতারকচক্রের ব্যাপারে ডিবি পুলিশ তদন্ত শুরু করে। এরপর এ চক্রের সন্ধান পাওয়া যায়। মূলত রাজশাহী সিভিল সার্জন কার্যালয়কে কেন্দ্র করে এ প্রতারকচক্রটি তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল।
গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, সিভিল সার্জন কার্যালয়ের অফিস সহকারী তারেক আহসান বক্ষব্যাধি হাসপাতালের গাড়িচালক রফিকুল ইসলামের কাছে বিদেশগামী ব্যক্তিদের করোনা টেস্টের তথ্য সরবরাহ করতেন। এরপর রফিকুলের স্ত্রী শামসুন্নাহার শিখা টেস্টের ফরমে উল্লেখ করা মোবাইল নম্বরে ফোন দিতেন।
গ্রেপ্তারের পর ডিবি কার্যালয়ে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রফিকুলের স্ত্রী শিখা জানান, ফোন করে টেস্টের জন্য স্যাম্পল দেওয়া ব্যক্তিদের রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে বলে জানাতেন তিনি। তাদের রিপোর্ট নেগেটিভ দেওয়া হবে এমন কথা বলে যোগাযোগ করতে বলতেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরেফিন জুয়েল জানান, যেসব ব্যক্তিকে ফোন দেওয়া হতো তাদের সবার করোনা রিপোর্টই নেগেটিভ থাকতো। মিথ্যা তথ্য দিয়ে তাদের কাছে তিন থেকে ১৫ হাজার পর্যন্ত টাকা নেওয়া হতো। দ্রুত নেগেটিভ রিপোর্ট পাওয়ার জন্য বিদেশগামীরা ওই চক্রের কাছে টাকা দিতে বাধ্য হতেন। এভাবে গত চার মাসে চক্রটি মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
এই প্রতারকচক্রের হাতে বিদেশগামী অসংখ্য মানুষ প্রতারিত হয়েছেন বলে জানান ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা।
ডিবির উপকমিশনার জানান, আজ দুপুরে গ্রেপ্তারকৃত তিনজনসহ অজ্ঞাত আরও তিনজনের বিরুদ্ধে প্রতারণামূলক মামলা করা হয়েছে। প্রতারকচক্রের আরও সাত থেকে আট সদস্যকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে মাঠে নেমেছে গোয়েন্দা পুলিশ।