কলা চাষ করে ভাগ্য বদল করছেন জয়পুরহাটের চাষিরা
‘কলা রুয়ে না কেটো পাত, তাতেই কাপড় তাতেই ভাত’- খনার ওই বচনটি কাজে লাগিয়ে ভাগ্য বদল করছেন জয়পুরহাটের কলা চাষিরা। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ভৈরবসহ দেশের ৩৫ জেলায় যাচ্ছে জয়পুরহাটের কলা।
কলা চাষিদের পরিবারে কেবল ভাত-কাপড়ের ব্যবস্থাই নয়, পরিবারের অন্যান্য ব্যয়ের সংস্থানও হয়েছে কলা চাষ করে। আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ায় জেলায় বর্তমানে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে কলার চাষ। জয়পুরহাট জেলার প্রধান অর্থকরী ফসল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এ কলা। জেলায় বিশেষ করে জামালগঞ্জ ও ভাদসা এলাকার অনেক পরিবার কেবল কলা চাষ করেই স্বাবলম্বী হয়েছেন।
জেলার কৃষকরা জানিয়েছে, অন্য যেকোনো ফসলের চেয়ে বেশি লাভ হয় কলা চাষে। বিশেষ করে যমুনা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে জয়পুরহাট জেলার জামালগঞ্জে ও ভাদসা ইউপি ভবনের সামনে দুর্গাদহ বাজার এলাকায় কলার বিস্ময়কর বাজার সৃষ্টি হয়েছে। অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি এখন কলার চাষও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে জয়পুরহাটে। দুই বা তিন ফুট লম্বা কলা গাছের চারা লাগানোর অল্প দিনেই ফল পাওয়া যায়। সাধারণত বৈশাখ মাসে কলার চারা রোপণ করলে অগ্রহায়ণ মাস থেকে কলা পাওয়া শুরু হয়। যেসব জমিতে বর্ষার পানি সাধারণত এক সপ্তাহের বেশি থাকে না সেসব জমিতে কলার চাষ ভালো হয়।
কৃষকরা জানান, একবিঘা জমিতে কলার জাত ভেদে তিনশ থেকে সাড়ে তিনশ কলার চারা রোপণ করা হয়ে থাকে। যত্ন নিয়ে কলা চাষ করলে একটি গাছে দুই থেকে আড়াই মন কলা পাওয়া যায়। এক বিঘা জমিতে কলা চাষ করতে ১৫ বা ২০ হাজার টাকা খরচ পড়লেও প্রতি বিঘা জমি থেকে কলা বিক্রি হয় এক লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা। যা অন্য কোনো ফসলে সম্ভব নয়। কলার জমিতে তেমন লেবার প্রয়োজন হয়না। ফলে উৎপাদন খরচ খুবই কম।
স্থানীয় কৃষি বিভাগ জানায়, জয়পুরহাট জেলায় এবার ৮৫০ হেক্টর জমিতে এবার কলার চাষ হয়েছে। এতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪০ হাজার মেট্রিক টন।
জামালগঞ্জ এলাকার মাতাপুর গ্রামের কলাচাষী আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘এবার পাঁচবিঘা জমিতে কলার চাষ করেছেন। খরচ বাদে প্রতি বিঘায় ৯০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত লাভ হয়েছে।’
নুনুজ গ্রামের কলা চাষি নূর আলম বলেন, ‘কলা বিক্রিতে কোনো ঝামেলা হয় না। পাইকাররা জমি থেকেই কলা কেটে নিয়ে যায়। এ ছাড়াও জামালগঞ্জে ও ভাদসা ইউপি ভবনের সামনে দুর্গাদহ বাজারে কলার বিশাল হাট বসে প্রত্যেক দিন সকালে ৬০-৬৫ জন আড়ৎদার কলা কিনে ট্রাকে লোড দেন। প্রতি কাইন (স্থানীয় নাম ঘাউর) বিক্রি হচ্ছে চাপা কলা ২৫০-৩৫০ টাকা, সবরি কলা ৫০০-৬০০ টাকা, সাগর ও রঙিন মেহের সাগর কলা প্রতি কাইন বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। প্রায় পাঁচ শতাধিক লোক প্রতিদিন কলা কেনা-বেচার সঙ্গে জড়িত থাকেন। প্রতিদিন কোটি টাকার কলা কেনাবেচা হয়ে থাকে।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ রাহেলা পারভীন বলেন, ‘জয়পুরহাটে উৎপাদিত কলার মধ্যে রয়েছে ঔষধি কলা হিসেবে চিহ্নিত চাম্পা কলা, সবরি কলা, রঙিন মেহের সাগর ও সাগর কলা। বর্তমানে জয়পুরহাটের হাটবাজারে প্রকার ভেদে বা সাইজ অনুযায়ী সবরি কলা ৩৫ থেকে ৪০ টাকা হালি এবং চাম্পা ও সাগর কলা ১৫ থেকে ২০ টাকা হালি বিক্রি হচ্ছে। কলা চাষ বেশ লাভজনক ফসল। জেলার প্রায় ২০ হাজার পরিবার কলা চাষের সঙ্গে জড়িত। কলা চাষ করে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি ভাগ্য বদল করছেন জয়পুরহাটের কলা চাষিরা।’