কাঁচামালে ভয়াবহ হয় আগুন, ছড়ায় ইমারজেন্সি গেটে : ফায়ার সার্ভিস
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ভুলতা কর্ণগোপ এলাকায় হাশেম ফুডস অ্যান্ড বেভারেজ গ্রুপের কারখানার ছয়তলা ভবনজুড়ে বিভিন্ন কাঁচামাল থাকায় আগুন ভয়াবহ হয়ে উঠে। সেই লেলিহান শিখা দ্রুতই কারখানার দুটি ইমারজেন্সি গেট (জরুরি বা বিকল্প বহির্গমন পথ) পর্যন্ত প্রবলভাবে ছড়িয়ে পড়ে। আর এর ফলে শ্রমিকরা যেমন কারখানার উপরতলা বা নীচতলায় উঠতে-নামতে পারেনি। ঠিক তেমনি ইমারজেন্সি গেট ব্যবহার করে বেরও হতে পারেনি। অবরুদ্ধ অবস্থায় থেকেই ধোঁয়া আর অগ্নিকাণ্ডে তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের।
অগ্নিনির্বাপক এই সংস্থা আরও বলছে, এসব কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে নিতে তাদের বেগ পেতে হয়েছে এবং হতাহতের ঘটনা বেড়েছে।
আজ শুক্রবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জের ভুলতায় বেভারেজ গ্রুপের কারখানার সামনে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন) লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিল্লুর রহমান গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, গতকাল আগুন লাগার পর ৬টা ১০ মিনিট থেকে অপারশেন শুরু হয় এবং এখন পর্যন্ত তা অব্যাহত আছে।
জিল্লুর রহমান বলেন, ‘আগুন লাগার পরে প্রথমে প্রথমতলা থেকে তৃতীয়তলা পর্যন্ত প্রচণ্ড লেলিহান শিখা ছিল। পরবর্তীতে চারতলা পর্যন্ত এই আগুনটা ছড়িয়ে পড়ে। তখন আমরা রাত ১২টা পর্যন্ত সেই আগুন সম্পূর্ণভাবে নিবারণ করে ফেলতে পারি।’
‘পরবর্তীতে দেখেছি, এখনও ছোট ছোট আগুনের লেলিহান শিখা। বিষয়টা হলো- ছয়তলা ভবনে যে আগুনটা লেগেছিল এটা মূলত তাদের কাঁচামালের গোডাউন হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। প্রথমতলা থেকে প্রতিটা ফ্লোরে মেটেরিয়ালে (কাঁচামাল) বোঝাই ছিল। ফলে এই আগুন নিভাতে আমাদের অনেক বিপাকে পড়তে হয়েছে।’
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘কাঁচামালের কারণে ভিতরে আমাদের লোকজন খুব বেশি ভেতরে ঢুকতে পারছিল না। কারণ সবাই স্পেস পাচ্ছিল না এবং সব সরঞ্জাম একসঙ্গে জ্বলতে ছিল। এটা অন্যতম কারণ। এর ফলে ভেতরে যারা আটকে ছিল, তারা আর বের হতে পারেনি।’
লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিল্লুর রহমান বলেন, ‘এ ধরনের ক্ষেত্রে প্রথমে যেটা সবাই প্র্যাকটিস করে থাকে, সবাই ইমারজেন্সি দিয়ে বাহির হয়ে যায়। কিন্তু এত বড় ভবনে মাত্র ইমারজেন্সি বহির্গমন ছিল মাত্র দুটি। আপনারা দেখেছেন, যেদিক থেকে ডেডবডি হস্তান্তর হলো, প্রথম বহির্গমন ছিল সেদিকে এবং গতকালে আগুনের লেলিহান শিখা ছিল বহির্গমনের দিকে। আগুনের লেলিহান শিখা থাকার কারণে এখান থেকে কেউ বাহির হতে পারে নাই।’
ফায়ারসার্ভিস কর্মকর্তা বলেন, ‘আগুন লাগার পরে উপরের ফ্লোরে ছিল ২৫ জনের অধিক। তাদের আমরা নিচে নামিয়ে আনতে পেরেছি। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক মৃত ব্যক্তিরা ছাদেও যেতে পারেনি এবং একতলাতে নেমেও আসতে পারেনি। তাদের বহির্গমনে আগুন থাকার কারণে।’
জিল্লুর রহমান বলেন, ‘একতলা থেকে চারতলা পর্যন্ত আমরা সম্পূর্ণভাবে তল্লাশি করেছি এবং পাঁচতলা ও ছয়তলায় আমরা আশা করি না কোনো ডেডবডি থাকবে। কিন্তু ভেতরে এখনও প্রচণ্ড ধোঁয়া আছে। যেহেতু মেটেরিয়ালগুলো (কাঁচামাল) এখনও আছে। এবং বেশ কয়েক ঘণ্টা পার হওয়ার পরেও ধোঁয়া আছে, সেই কারণে এখনও শতভাগ দেখা যাচ্ছে না। আমরা আর কিছুটা সময় নিব, আমরা চেষ্টা করছি ধোঁয়াটা যখন সম্পূর্ণভাবে নিভে যাবে তখন আমরা ডিটেইলভাবে তল্লাশি করব।’
জিল্লুর রহমান আরও বলেন, ‘আমরা ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স ৪৯টা ডেডবডি শনাক্ত করেছি। তাদের সবাইকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়েছে। কোনো আত্মীয়-স্বজন যদি নিঁখোজ মনে করেন, তাদের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এবং ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে অনুরোধ থাকবে, তারা যেন ঢাকা মেডিকেলে যোগাযোগ করেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজে লাশ শনাক্ত করার জন্য আমাদের ফায়ার সার্ভিস, জেলা প্রশাসন, পুলিশ সবার পক্ষ থেকে প্রতিনিধি আছে। ওখানে আমাদের যে সরকারি নিয়ম রয়েছে সেগুলো সম্পন্ন শেষে আত্মীয়-স্বজনের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হবে।’
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে এই কারখানায় অগ্নিকাণ্ড ঘটে। আগুন লাগার পর পরই গোটা ভবনে লেলিহান শিখা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে।
আজ শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত ৫২ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে তিনজন এবং আজ শুক্রবার দুপুরের পর আরও ৪৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এসব লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।