কারাগারেই রয়েছেন মুন্সীগঞ্জের সেই শিক্ষক
মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার পঞ্চসার ইউনিয়নের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের গণিত বিষয়ের সহকারী শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল ধর্ম অবমাননার মামলায় কারাগারে রয়েছেন।
হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলকে গত ২২ মার্চ আটক করে পুলিশ। ওই দিন রাতে বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী মো. আসাদ বাদী হয়ে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও কোরআন শরিফ অবমাননার অভিযোগ এনে শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা করেন।
পরদিন ২৩ মার্চ হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলকে আদালতে পাঠায় পুলিশ। ওই দিন আদালত তাঁকে জেল-হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এ ছাড়া গত সোমবার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ওই শিক্ষকের জামিন আবেদন করা হয়। আদালত জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে আগামী ১০ এপ্রিল শুনানির দিন ধার্য করেন।
গত ২০ মার্চ দশম শ্রেণির ক্লাস নিচ্ছিলেন হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল। এদিন তিনি বিজ্ঞান বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। এ সময় তাঁকে নানা রকম প্রশ্ন করে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলও প্রশ্নের উত্তর দেন। শিক্ষার্থীরা হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের কথাবার্তা মোবাইল ফোনে রেকর্ড করে। পরে শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তা ছড়িয়ে দেয়।
পরদিন ২১ মার্চ শিক্ষার্থীরা আপত্তিজনক কথাবার্তার অভিযোগ এনে হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছে লিখিত অভিযোগ করে। এতে প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন তিন দিনের মধ্যে জবাব চেয়ে ওই শিক্ষককে শোকজ করেন। শোকজের জবাব দেওয়ার জন্য বেঁধে দেওয়ার সময় না পেরোতেই ২২ মার্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বহিরাগতরা জোটবদ্ধ হয়ে শিক্ষকের অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ-মিছিল বের করে। ওই দিন আধবেলা পর্যন্ত বিদ্যালয় চত্বরে এবং পাশের রিকাবীবাজার এলাকায় মিছিল করে বিক্ষোভকারীরা। এ অবস্থায় প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন সদর থানায় ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ঘটনাটি অবহিত করেন।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আনিসুজ্জামান আনিস, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ হাসিব সরকার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মিনহাজ-উল-ইসলাম। এ সময় পুলিশ শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলকে সদর থানা হেফাজতে নিয়ে যায়। এতে শিক্ষার্থীদের উত্তেজনা প্রশমিত হয়।
সদর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মো. রাজিব খান জানিয়েছেন, ২২ মার্চ দিবাগত রাতে বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী মো. আসাদ বাদী হয়ে শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মন্ডলের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা করেন। এ মামলায় ২৩ মার্চ তাঁকে আমলী আদালত-১-এ পাঠায় পুলিশ। আদালত তাঁর জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে জেল-হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। একদিন পর ২৫ মার্চ শুক্রবার ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ-মিছিল করার খবরে সতর্ক অবস্থায় থাকে পুলিশ। বিনোদপুর রামকুমার বিদ্যালয় এবং বিদ্যালয়ের কোয়ার্টারে শিক্ষকের বাসভবন ঘিরে পর্যাপ্ত পরিমাণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকে। ফলে ওইদিন সেখানে কোনো আন্দোলন হয়নি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ওই ঘটনার পর বিদ্যালয়ের পরিবেশ স্বাভাবিক রয়েছে এবং ক্লাস চলছে। শিক্ষকের বিরুদ্ধে করা মামলার বিষয়টি আদালত দেখবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সহযোগিতা চাইলে আমরা সহযোগিতা করার চেষ্টা করব।’
মুন্সীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি শহীদ-ই-হাসান তুহিন বলেন, ‘আমরা যে অডিও ক্লিপ শুনেছি, তাতে নির্দিষ্ট ধর্মীয় অবমাননার তেমন কিছু পাওয়া যায়নি। যে শিক্ষার্থী গোপনে শ্রেণিকক্ষে মোবাইল ফোন নিয়ে শিক্ষকের আলাপচারিতা রেকর্ড করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়েছে, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কাজেই শিক্ষার্থীকেও আইনের আওতায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে রহস্য উদঘাটন করা উচিত।’
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট অজয় কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘ওই শিক্ষকের নিযুক্ত আইনজীবী আগামী ১০ এপ্রিল মামলার শুনানির প্রস্তুতি নিচ্ছেন। শ্রেণিকক্ষে পরিকল্পিতভাবে শিক্ষার্থী প্রশ্ন করলে তিনি শিক্ষকসুলভভাবেই উত্তর দেন। কিন্তু, ছাত্ররা তা রেকর্ড করে।’