কিশোরগঞ্জের হাওরে তলিয়ে যাচ্ছে বোরো ধান, দুশ্চিন্তায় কৃষকরা
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2022/04/05/kishoreganj-haor-picture-tham.jpg)
কয়েকদিন আগে ভারতের আসাম ও মেঘালয়ে প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ায় কিশোরগঞ্জের হাওরে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে চরাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী নিচু এলাকার প্রায় ৩০০ হেক্টর জমির আধা-পাকা বোরো ধান তলিয়ে গেছে।
কোনো উপায় না দেখে কৃষকরা বাধ্য হয়ে পানির নিচ থেকে আধাপাকা ধান কেটে আনছে। তবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে রছরের একমাত্র ফসল বোরো ধান কেটে ঘরে তোলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষকরা।
কিশোরগঞ্জের হাওর অধ্যুষিত চারটি উপজেলার কৃষকদের সারা বছরের একমাত্র ফসল বোরো ধান। এ ধান বিক্রির অর্থ দিয়ে কৃষকরা পরিবারের সারা বছরের ব্যয় নির্বাহ করে থাকে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য মতে, চলতি বছর জেলায় এক লাখ ৬৪ হাজার ৪৮৫ হেক্টর জমিতে বোরো দান চাষ করা হয়েছে। এরমধ্যে ইটনা উপজেলায় বোরো ধান আবাদ হয়েছে ২৫ হাজার ৮৩০ হেক্টর জমিতে। ধানকাটা শুরু হতে এখনো আরো ১৫ থেকে ২০ দিন বাকি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. ছাইফুল আলম জানান, ভারতের আসাম ও মেঘালয়ে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে। ফলে কিশোরগঞ্জের হাওরে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে ইটনা উপজেলার ধনু, বৌলাই ও কালনী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে চরাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী নিচু এলাকার আধা-পাকা বোরো ধান তলিয়ে গেছে। তবে এখনও মূল হাওরে পানি প্রবেশ করেনি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ইটনা উপজেলার বাদলা হাওর, এরশাদনগর, আলালের বন, ধনপুর, বেতেগাসহ কয়েকটি এলাকার নিচু এলাকায় আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে ফসল তলিয়ে গেছে। কৃষকরা মজুর না পেয়ে পরিবারের লোকজন নিয়ে আধাপাকা ধান কেটে ঘরে তোলার চেষ্টা করছে।
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2022/04/05/kishoreganj-haor-picture.jpg)
স্থানীয় কৃষক মোহন মিয়া বলেন, আমার চরের জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। কাটার কোনো পরিস্থিতি নেই। ঋণ করে চাষাবাদ করেছি। এখন কীভাবে দিন কাটবে, কীভাবে খাব এবং ঋণ পরিশোধ করব—এ চিন্তায় দিশেহারা আমি।
কৃষক মইজ উদ্দিন বলেন, হঠাৎ করে জমি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় দান কাটার লোক পাচ্ছি না। তাই পরিবারের লোকজন নিয়ে পানির নিচ থেকে আধাপাকা ধান কেটে আনছি।
কৃষক ফজর আলী বলেন, ধান কিছুটা পাকলে হয়তো এসব ধান আমাদের কাজে লাগত।
কৃষক মোতালেব মিয়া বলেন, পানি আরও বাড়তে থাকলে আমাদের বড় ধরনের ক্ষয়-ক্ষতি হবে। কারণ আমরা অনেকেই বর্গা নিয়ে এবং ঋণ করে ধান চাষ করেছি।
তবে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. ছাইফুল আলম জানান, মূল হাওরে এখনো পানি ঢুকেনি। তবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে ফসল তলিয়ে বড় ধরনের ক্ষয়-ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে কৃষকদের আশি ভাগ পাকলেই ধান কেটে ফেলার জন্য বলা হয়েছে। পাশাপাশি বন্যা মোকাবিলায় নির্মিত বাঁধ যেন অক্ষত থাকে সে লক্ষে পানি উন্নয়ন বোর্ড, জন প্রতিনিধি, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়সহ কৃষকদের সতর্ক থাকার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মতিউর রহমান বলেন, সেখানে আমাদের বাঁধ নেই। প্রকল্প এলাকার বাইরে নদী ও খালের তীরবর্তী নিচু এলাকায় পানি ঢুকেছে। মূল হাওরে পানি ঢোকেনি এবং আমাদের বাঁধ অক্ষুণ্ণ আছে। পানির স্তর এখনো স্বাভাবিক রয়েছে। আজ রাত থেকে পানি কমতে শুরু করার সম্ভাবনা রয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম জানান, উজানের পাহাড়ি ঢলে হাওরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। মূলত ধনু নদী পলি পড়ে ভরাট হওয়ায় পাহাড়ি ঢলের পানি নিম্নাঞ্চলসহ নদীর মোহনায় ছড়িয়ে পড়ছে। নদী ড্রেজিং ব্যতিত অকাল বন্যা রোধ সম্ভব নয়। নদীর গভীরতা ফিরিয়ে আনতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।