কুষ্টিয়ায় প্রধান শিক্ষকের ওপর হামলায় গ্রেপ্তার ১
কুষ্টিয়া সদরের লাহিনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের ওপর হামলার ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে তিন জনের নামে মামলা করেন প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম।
মামলার পর রাতেই মো. তাছেরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পৌর কাউন্সিলর সোহেল রানা আশাসহ মামলার অন্য দুই বিবাদী পলাতক রয়েছেন।
গতকাল কুষ্টিয়ার লাহিনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলামকে লাঞ্ছনার অভিযোগে স্থানীয় কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশ এবং সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। পরে পুলিশের আশ্বাসে কাউন্সিলর আশাকে গ্রেপ্তারের জন্য ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে অবরোধ তুলে নেয় শিক্ষার্থীরা।
বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, কাউন্সিলর সোহেল রানা আশা কুষ্টিয়া সদর উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক। তিনি ঠিকাদারির কাজও করেন।
প্রায় এক মাস ধরে কাউন্সিলর সোহেল রানা বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বালু স্তূপ করে রেখেছেন। পাশাপাশি বিদ্যালয়ের ফটকের পাশে ইট রেখেছেন। বালু উড়ে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ দূষিত এবং ইট ভাঙানোর শব্দে লেখাপড়ার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছিল। এসব নির্মাণসামগ্রী রাখার ব্যাপারে প্রধান শিক্ষকের অনুমতিও নেওয়া হয়নি।
লাহিনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম জানান, প্রথমে তিনি ভেবেছিলেন, কয়েক দিন পর ওগুলো সরিয়ে নেবেন ঠিকাদার। কিন্তু, সরিয়ে না নেওয়ায় বিষয়টি কাউন্সিলরকে জানান। তাতে কর্ণপাত করেননি কাউন্সিলর।
নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বৃহস্পতিবার স্কুলে যখন জাতীয় সংগীত চলছিল, তখন বাইরে ইট ভাঙানোর যন্ত্র দিয়ে ইট ভাঙা হচ্ছিল। এ সময় ইট ভাঙানো বন্ধ রাখার কথা বললে শ্রমিকেরা কোনো কথা শোনেননি।’
প্রধান শিক্ষক অভিযোগ করেন, ‘কাউন্সিলর তাঁর শ্রমিকদের দিয়ে বিদ্যালয়ের বিদ্যুৎ ও পানি ব্যবহার করে কাজ করাচ্ছিলেন। এতে বাধা দেওয়া হয়। এরপর কাউন্সিলর মুঠোফোনে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন।’
নজরুল ইসলাম বলেন, ‘গালাগালির পরে ফের সকাল ১০টার দিকে ছয় থেকে সাত জন নিয়ে আমার কার্যালয়ে আসেন কাউন্সিলর আশা। এসেই আমার জামার কলার ধরে টানা-হ্যাচড়াসহ কিল-ঘুসি মারেন। এতে আমি গালে ও মাথায় আঘাত পাই। একই সঙ্গে শাসিয়ে যান তাঁরা। পরে ঘটনাটি বিদ্যালয়ের সভাপতি ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) জানানো হয়।’
প্রত্যক্ষদর্শী সহকারী প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম দাবি করেন, কাউন্সিলর কার্যালয়ে ঢুকে প্রধান শিক্ষকের জামার কলার ধরে কিল-ঘুসি মারতে থাকেন। চেয়ার-টেবিল ফেলে দেন। বাধা দিতে গেলে ধাক্কা দিয়ে তাঁকেও ফেলে দেওয়া হয়।
বিদ্যালয়ের সভাপতি ও কুষ্টিয়া পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র মতিয়ার রহমান বলেন, ‘কাউন্সিলর আশা খুবই অন্যায় কাজ করেছেন।’
সে সময় জানতে চাইলে পৌরসভার ২১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সোহেল রানা আশা বলেছিলেন, ‘লাহিনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলামসহ কয়েকজন মিলে আমার লোককে আহত করে আবার উল্টো আমার বিরুদ্ধে তাঁকে লাঞ্ছিত করার নাটক করছে।’