গ্রামীণ টেলিকমের অর্থ অন্য কোথাও পাচার হয়েছে কি না তদন্তের নির্দেশ
গ্রামীণ টেলিকমের অর্থ অন্য কোথাও পাচার হয়েছে কি না, সে বিষয়ে দুদক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তদন্ত করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আজ বৃহস্পতিবার বিচারপতি খুরশীদ আলম সরকারের কোম্পানি বেঞ্চ বলেন, প্রয়োজনে আইনজীবীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে দুদক।
এদিকে রাষ্ট্রপক্ষ বলেন, গ্রামীণ টেলিকমের হাজার কোটি টাকা দুর্নীতি ধামাচাপা দিতে শ্রমিকদের টাকা দিয়েছে ড. ইউনূসের গ্রামীণ টেলিকম। সেই সঙ্গে গ্রামীণ টেলিকমের মামলা জিততে লবিস্ট নিয়োগ করেছিলেন ড. ইউনূস।
রাষ্ট্রপক্ষ এ বিষয়ে ব্যবস্থা না নিলে দুর্নীতিবাজরা প্রশ্রয় পাবে। ইউসুফ আলীর আইনজীবী বলেন, নিয়ম মেনেই ট্রেড ইউনিয়নে টাকা দেওয়া হয়েছিল। গত মঙ্গলবার গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিকদের কাছ থেকে ১৬ কোটি টাকা ফি নেওয়ার কথা প্রতিবেদন আকারে হাইকোর্টে জানান ইউসুফ আলীর আইনজীবী। বলা হয়, অবশিষ্ট ১০ কোটি টাকা রয়েছে ট্রেড ইউনিয়নের কাছে।
গত ৩০ জুন নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় রিটকারীদের আইনজীবীকে ১২ কোটি টাকার বিনিময়ে সমঝোতার প্রসঙ্গ তোলেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চ বলেন, আমরা শুনেছি শ্রমিকদের আইনজীবীকে অর্থের বিনিময়ে হাত করে তাদের মামলায় আপস করতে বাধ্য করা হয়েছে।
হাইকোর্ট বলেন, আদালতকে ব্যবহার করে অনিয়ম যেন না হয়। যদি সবকিছু আইন অনুযায়ী না হয়, তবে বিষয়টি সিরিয়াসলি দেখা হবে। কোর্ট ও আইনজীবীর সততা নিয়ে যেন কোনো প্রশ্ন না ওঠে।
এ সময় আদালত বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশ কেন উপমহাদেশের এমন কোনো আইনজীবী জন্ম নেননি, যার ফি ১২ কোটি টাকা হবে। এক পর্যায়ে আদালত ড. ইউনূসের আইনজীবীকে বলেন, আপনি কত টাকা ফি নিয়েছেন? তখন আইনজীবী বলেন, আমি ২০ লাখ টাকা নিয়েছি। আদালত বলেন, শ্রমিকদের আইনজীবী কীভাবে ১২ কোটি টাকা নেন?
পরে শ্রমিকরা কে কত টাকা ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন সেই তালিকা দাখিল করার নির্দেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে এ সংক্রান্ত নথিও দাখিল করতে বলা হয়। এ সময় আইনজীবীরা আদালতকে জানান, চাকরিচ্যুত শ্রমিকরা এখন পর্যন্ত ৩৮০ কোটি টাকা পেয়েছেন। বাকি ৮ শ্রমিকের মধ্যে ৪ জন দেশের বাইরে থাকায় তাদের টাকা পরিশোধ করা হয়নি। আর ৪ জন শ্রমিক মারা যাওয়ায় তাদের ওয়ারিশ জটিলতা নিরসন না হওয়ায় অর্থ পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মালিকানাধীন গ্রামীণ টেলিকমের অবসায়ন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়। গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের পক্ষে এ আবেদন দায়ের করা হয়।
২০২০ সালের বিভিন্ন সময়ে গ্রামীণ টেলিকমে ছাঁটাইকে কেন্দ্র করে শ্রমিক অসন্তোষ শুরু হয়। শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন (বি-২১৯৪) সিবিএর সঙ্গে আলোচনা না করেই এক নোটিশে ৯৯ কর্মীকে ছাঁটাই করে গ্রামীণ টেলিকম কর্তৃপক্ষ। গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আশরাফুল হাসানের সই করা এক নোটিশের মাধ্যমে এ ছাঁটাই করা হয়। এরপর সেই নোটিশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করেন ২৮ জন কর্মী। ছাঁটাইকে কেন্দ্র করে ড. ইউনূসকে তলব করেছিলেন হাইকোর্ট। এরপর ২০২১ সালের ৪ এপ্রিল শ্রমিকদের পুনর্বহালের নির্দেশ দেন আদালত।
এদিকে গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করে ঢাকার কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তর। ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে এ মামলা করেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক আরিফুজ্জামান। বিবাদীদের আদালতে হাজির হওয়ার জন্য সমনও জারি করেন আদালত। মামলার অন্য আসামিরা হলেন- গ্রামীণ টেলিকমের এমডি আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুর জাহান বেগম ও শাহজাহান।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ড. ইউনূসের গ্রামীণ টেলিকম পরিদর্শনে যান। সেখানে গিয়ে তারা শ্রম আইনের লঙ্ঘন দেখতে পান। ১০১ জন শ্রমিক-কর্মচারীকে স্থায়ী করার কথা থাকলেও তাদের স্থায়ী করেনি গ্রামীণ টেলিকম। শ্রমিকদের অংশগ্রহণে কল্যাণ তহবিলও গঠন করা হয়নি। এ ছাড়া, কোম্পানির লভ্যাংশের ৫ শতাংশ শ্রমিকদের দেওয়ার কথা থাকলেও তা তাদের দেওয়া হয়নি। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে মামলাটি দায়ের করা হয়।