ঘরে ঘরে করোনার প্রাথমিক চিকিৎসায় দরকার ভ্রাম্যমাণ দল
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল দল গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এই দলের কাজ হবে ঘরে ঘরে গিয়ে করোনার রোগীদের প্রাথমিক সেবা দেওয়া। এজন্য সরকারের কাছে বরাদ্দ চেয়েছেন তিনি।
আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় ‘করোনা পরিস্থিতি ও জনজীবনের সংকট’ বিষয়ে এক নাগরিক সংবাদ সম্মেলনে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা এই আহ্বান জানান। ভার্চুয়াল এই সংবাদ সম্মেলনটি পরিচালনা করেন রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য দিদারুল ভূঁইয়া। এ সময় ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী করোনা মোকাবিলায় সবাইকে নিয়ে কাজ করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
করোনা মোকাবিলায় হিংসা-বিদ্বেষ ত্যাগ করে সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘শুধু আইসিইউর সংখ্যা বৃদ্ধি করলে চলবে না। ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। তাঁরা যেন প্রয়োজন অনুযায়ী সেবা দিতে পারেন। পাশাপাশি পর্যাপ্ত অক্সিজেনের ব্যবস্থা করতে হবে এবং রোগীদের সুবিধার্থে অক্সিজেনের ওপর ভ্যাটের পরিমাণ কমিয়ে আনতে হবে।’
ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল টিমের মাধ্যমে করোনার প্রাথমিক চিকিৎসা ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার আশা ব্যক্ত করে এই চিকিৎসক বলেন, শুধু টাকা-পয়সা নয়, ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে বিপুল সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবকেরও প্রয়োজন।
সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী ও বেলার নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান করোনা মোকাবিলায় পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণে সরকারকে ব্যর্থ বলে অভিহিত করেন। তাঁরা জনসাধারণের করোনার চিকিৎসার ব্যয়ভার সরকারের পক্ষ থেকে মেটানো উচিত বলেও অভিমত দেন। পাশাপাশি, প্রান্তিক পর্যায়ে অনলাইন শিক্ষাকার্যক্রম নিশ্চিত করার প্রতিও গুরুত্বারোপ করেন।
বাঁশখালীর ঘটনা বিনাবিচারে হত্যার শামিল
চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে বিদ্যুৎকেন্দ্রের চীনা ঠিকাদারদের সঙ্গে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে গত শুক্রবার শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করেন। এরই সূত্র ধরে গতকাল শনিবার সকালে শ্রমিকদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলে পুলিশ তাদের থামানোর চেষ্টা করে। একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারী শ্রমিকদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় গুলিতে পাঁচ শ্রমিক নিহত হন। আহত হন কয়েকশ শ্রমিক।
আজকের সংবাদ সম্মেলনে বাঁশখালীর ঘটনাকে বিনাবিচারে হত্যার শামিল উল্লেখ করে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী সর্বস্তরের জনগণকে অন্যায়-অবিচারের প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান।
গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী নিহতদের তালিকা প্রকাশ ও অপরাধীদের বিচারের দাবি করেন। এ ছাড়া লকডাউনে প্রান্তিক ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর খাদ্যের নিশ্চয়তার আহ্বান জানান। তিনি কারখানার শ্রমিকদের বেতন নিশ্চিত করা, মোদিবিরোধী আন্দোলনে গ্রেপ্তারকৃদের মুক্তি ও শিক্ষার্থীদের বেতন মওকুফের দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, প্রেসিডিয়াম সদস্য নাঈম জাহাঙ্গীর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর, রাষ্ট্রচিন্তার অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইউম প্রমুখ।
অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, জবাবদিহিতা নেই বলেই সরকার জনগণের প্রতি এমন দায়িত্বহীন আচরণ করতে পারছে। নির্বিচারে গুলিবর্ষণের ঘটনায় তিনি আইজিপি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেন।
ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, হেফাজতে ইসলামের অনুসারীরা সমাজের অংশ। তাদের কথা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। সরকারকে কর্তৃত্ববাদী আখ্যা দিয়ে তিনি সরকারের বিরুদ্ধে লকডাউনের নামে দমন-পীড়নের অভিযোগ করেন।
ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু সংবাদ সম্মেলনে তিনটি দাবি তুলে ধরেন। এগুলো হচ্ছে- এক. অসহায়-সামর্থহীনদের জন্য বিনামূল্যে করোনার চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
দুই. গরিব ও কর্মহীনদের দ্রুত বিনামূল্যে খাদ্যের ব্যবস্থা করা।
তিন. ২৬ মার্চ ও ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর দিবসে গুলি করে সাধারণ মানুষকে হত্যার ঘটনায় আইজিপিকে পদত্যাগ করতে হবে।