চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলায় তিনজনের বিরুদ্ধে পরোয়ানা
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2019/12/18/sohail-chy-ed.jpg)
চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলায় তিনজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন ট্রাইব্যুনাল। আজ রোববার ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২-এর বিচারক জাকির হোসেন এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
পরোয়ানাপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই ওরফে আব্দুল আজিজ, ট্রাম্পস ক্লাবের মালিক আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম ও সেলিম খান।
আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) সৈয়দ শামসুল হক বাদল এসব তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এদিন আদালতে আসামিদের উপস্থিতির জন্য ধার্য ছিল। আসামিরা উপস্থিত না হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে এ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালতে। অপরদিকে এ মামলার আসামি সানজিদুল ইসলাম ইমন ও আশিষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী শুরু থেকে পলাতক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে আগে থেকেই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা রয়েছে।’
পিপি সৈয়দ শামসুল হক বাদল আরও বলেন, ‘আজ আদালতে এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ধার্য ছিল। আদালতে আজ মামলার বাদী নিহতের ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী সাক্ষ্য দিতে আদালতে হাজির হননি। এ ছাড়া জামিনে থাকা আসামি ফারুক আব্বাসী আদালতে হাজিরা দেন ও আরেক আসামি আদনান সিদ্দিকী অসুস্থ থাকায় আদালতে হাজির না হওয়ায় তাঁর আইনজীবী সময়ের আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক সময়ের আবেদন মঞ্জুর করেন।
পিপি আরও বলেন, ‘আদালতে আজ রোববার কারাগারে থাকা আসামি হারুন রশিদ ও তারেক সাঈদকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়নি। আদালত মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) দিন ধার্য করেছে।’
১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর রাজধানীর বনানীর ১৭ নম্বর রোডের আবেদীন টাওয়ারে ট্রাম্পস ক্লাবের নিচে নায়ক সোহেল চৌধুরীকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। ঘটনার দিনই নিহত সোহেল চৌধুরীর ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী গুলশান থানায় আদনান সিদ্দিকীকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সহকারী কমিশনার আবুল কাশেম ব্যাপারী আসামি আদনান সিদ্দিকীসহ নয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
অভিযোগপত্রে আজিজ মোহাম্মদ ভাই ওরফে আব্দুল আজিজ, ট্রাম্পস ক্লাবের মালিক আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম, তারিক সাঈদ মামুন, সেলিম খান, হারুন অর রশীদ ওরফে লেদার লিটন ওরফে বস লিটন, আশীষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী, ফারুক আব্বাসী ও সানজিদুল ইসলাম ইমনকে আসামি করা হয়।
অভিযোগপত্রে যা আছে
তদন্ত কর্মকর্তা অভিযোগপত্রে বলেন, “বনানী জামে মসজিদের পাশে আবেদীন টাওয়ার। সেই টাওয়ারের অষ্টম তলায় ‘সুপার ট্রাম্পস ক্লাব’। এই ক্লাবের মালিক বান্টি ইসলাম ও আশিষ কুমার রায় চৌধুরী। সেই ক্লাবে আসামাজিক কার্যকলাপ, নাচ গান, মদ্য পান ও মহিলা দ্বারা অশ্লীল নৃত্য হতো এবং সেখানে আপত্তিকর পরিবেশের সৃষ্টি হতো।”
তদন্ত কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘সোহেল চৌধুরী ট্রাম্পস ক্লাবে এমন আপত্তিকর পরিবেশ বন্ধ করার জন্য মসজিদ কমিটির লোকজন নিয়ে যায়। তিনি সেখানে ক্লাব বন্ধ করার চেষ্টায় ব্যর্থ হন। পরবর্তীতে ১৯৯৮ সালের ১৪ জুলাই সেই ক্লাবে গার্লফ্রেন্ড নিয়ে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ে সঙ্গে সোহেল চৌধুরীর গোলমাল হয়। সোহেল চৌধুরী আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে কুত্তার বাচ্চা বলে গালি দেয়। পরে সোহেল চৌধুরীর বন্ধু কালা নাসির আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে গুলি করতে গেলে তিনি বাথরুমে পালিয়ে আত্মরক্ষা করেন।’
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়েছে, ‘মেজর (অব.) হাফিজ তাদের অনুরোধ করে সোহেল চৌধুরীকে নামিয়ে দেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময় বান্টি ইসলাম ও আশিক কুমার চৌধুরীর সঙ্গে ট্রাম্পস ক্লাবে সোহেল চৌধুরীর গোলমাল হয়। সোহেল চৌধুরীর কারণে ট্রাম্পস ক্লাবের কর্মকাণ্ড ব্যহত হয়, তাঁরা তখন সোহেল চৌধুরীকে দেখাইয়া দিবে বলে ভয়ভীতি দেখায়। ঘটনার দিন সোহেল চৌধুরী বনানীর নেই ট্রাম্পস ক্লাবে যেতে চান। তখন তাকে প্রবেশের অনুমতি না দিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তিনি আবার রাত ৩টায় ট্রাম্পস ক্লাবের সম্মুখে আসলে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী পরিকল্পিতভাবে আসামিরা পেশাদার খুনীদের দিয়ে গুলি করে সোহেল চৌধুরীকে হত্যা করে বলে প্রমাণিত হয়েছে।’