চুরি হওয়া ৩৮৬০০ ডলার উদ্ধার, ৬ প্রতারক গ্রেপ্তার
দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলায় সাবেক বিজিবি সদস্যের বাড়িতে ঢুকে ইউএস ডলার ও নগদ টাকা চুরির দায়ে প্রতারক চক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় চুরি হওয়া ৩৮ হাজার ৬০০ ইউএস ডলার ও নগদ দেড় লাখ টাকাও উদ্ধার করা হয়।
আজ বুধবার (২৬ এপ্রিল) এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সদরের সার্কেল অফিসার শেখ মোহাম্মদ জিন্না আল মামুন। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন ফুলবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশ্রাফুল ইসলাম ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) আরিফুল ইসলাম। পরে প্রতারকদের আজ দুপুরে আদালতে সোপর্দ করা হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামিরা হলেন মোছা. রেনু, নাহিদ হাসান শুভ, সোহানুর রহমান সোহাগ, সুজন, মেনাজুল ও আব্দুল জলিল। তাদের বাড়ি ফুলবাড়ীর হাজির মোড় ও পশ্চিম গৌরীপাড়া এলাকায়।
ফুলবাড়ী থানার ওসি বলেন, ‘ঘটনা জানার পর তাৎক্ষণিক অভিযান শুরু করি এবং শক্ত হাতে আসামিদের গ্রেপ্তার ও নগদ অর্থসহ ডলার উদ্ধার করি। এই ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করা হয়েছে।’
থানায় করা অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার শিবনগর ইউনিয়নের দক্ষিণ বাসুদেবপুরের হাজির মোড়ে ফেতরার টাকা নিতে এসে সাবেক বিজিবি সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা জহির উদ্দিনের বাড়িতে ঢুকে ৩৮ হাজার ৬০০ ইউএস ডলার (যার বাংলাদেশি টাকায় মূল্য ৪০ লাখ ৯১ হাজার ৬০০) ও বাংলাদেশি এক লাখ ৫০ হাজার টাকা চুরি করে নেয় প্রতারক চক্র।
প্রতারক চক্রের মূল হোতা স্থানীয় গড় ইসলামপুর (জোলাপাড়ার) বাসিন্দা মোছা. রেনু প্রথমে জহির উদ্দিনের বাড়িতে প্রবেশ করেন ফিতরার টাকা নিতে। এরপর ফেতরার টাকা নিয়ে চলে যান তিনি।
কিছুক্ষণ পর ওই এলাকার ১০ জনকে সঙ্গে নিয়ে আবারও সেই বাড়িতে প্রবেশ করেন প্রতারক চক্রের মূল হোতা মোছা. রেনু। এরপর তিনি অভিযোগ করেন, ৮৯ বছর বয়সী জহির উদ্দিন তাঁকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছেন এই মর্মে তাঁর কাছ থেকে এক লাখ টাকা দাবি করেন প্রতারক চক্রের অন্য সদস্যরা।
জহিরদ্দিন টাকা দিতে অস্বীকার করলে প্রতারকরা তাঁর বিরুদ্ধে থানায় মামলা করবেন মর্মে হুমকি দেন। একপর্যায়ে তাঁরা তাঁর ঘরে লুটপাট শুরু করেন। সেখান থেকে ১২ হাজার টাকা লুট করে প্রতারক চক্রের সদস্যরা। এরপর তাঁর ছোট ছেলে সালাউদ্দিন রিপনের ঘরে গিয়ে আলমারিতে রাখা ৩৮ হাজার ৬০০ ইউএস ডলার লুট করে নেন তাঁরা। এ সময় চিৎকার-চেঁচামেচি শুনে স্থানীয় দুজন এগিয়ে এলে তাঁদেরও মারধর করে পালিয়ে যান প্রতারক চক্রের সদস্যরা।
এরপর মোবাইল ফোনে ঘটনার খবর পেয়ে তৎক্ষণিক ছুটে আসেন জহির দিনের পরিবারের সদস্যরা, প্রত্যক্ষদর্শীদের মুখে ঘটনার সত্যতা জেনে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং সাক্ষীদেরকে নিয়ে ফুলবাড়ী থানায় অভিযোগ করেন জহিরদ্দিনের বড় ছেলে মহিউদ্দিন।
অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চুরি হওয়া ডলার ও টাকা উদ্ধার করতে মাঠে নামেন ফুলবাড়ী থানা পুলিশের একদল চৌকস অফিসার।
ঘটনার খবর জেনে পুলিশ সুপার তৎক্ষণিক সদর সার্কেলের অফিসার শেখ মো. জিন্নাহ্ আল মামুনকে ঘটনা পরিদর্শনের নির্দেশ দেন।
পুলিশ সুপারের নির্দেশে সদর সার্কেল ঘটনা পরিদর্শন করেন এবং দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ফুলবাড়ী থানা পুলিশকে নির্দেশ দেন।
পরে ফুলবাড়ী থানার ওসি আশ্রাফুল ইসলামের নেতৃত্বে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ফুলবাড়ী থানার এসআই আরিফুল ইসলাম সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে কিছু ডলার ও টাকা উদ্ধার করতে সক্ষম হন। চলমান অভিযানে গতকাল মঙ্গলবার রাতেই সব ডলার ও টাকা উদ্ধার করে ফুলবাড়ী থানা পুলিশ। পাশাপাশি অভিযুক্ত ছয় প্রতারককে গ্রেপ্তার করা হয়।