চোখ বাঁধা যুবলীগ নেতা ও পুলিশ কর্মকর্তার কথোপকথন, ভিডিও ভাইরাল
ফরিদপুরে চোখ বাঁধা অবস্থায় এক ব্যক্তি এবং আহাদুজ্জামান নামের পুলিশের এক পরিদর্শকের কথোপকথনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় পুলিশ তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
ভিডিওতে দেখা গেছে, এক ব্যক্তি হাতে হাতকড়া এবং দুই চোখ গামছা দিয়ে বাঁধা অবস্থায় রয়েছেন। তাঁর সামনে চেয়ারে বসা এক ব্যক্তি বলছেন, ‘তোর কী হইছে? কে মারছে? আমি তো তোগে (তোদের) লোক না। তোগে লোক হলে থানায় থাকতে পারতাম। আমি তো নিক্সন চৌধুরীর লোক।
এর আগে ফরিদপুর ভাঙ্গা উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আরাফাত গত সোমবার ফেসবুকে ভিডিওটি আপলোড করে দাবি করেন, চোখ বাঁধা অবস্থায় থাকা ব্যক্তিটি তিনি। আর চেয়ারে বসা ব্যক্তি পরিদর্শক আহাদুজ্জামান, যিনি এর আগে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ছিলেন। তবে ভিডিওটি কে ধারণ করেছে বা কোথায় তিনি পেয়েছেন সে বিষয়ে কিছু বলতে পারেননি আরাফাত।
ভাঙ্গা উপজেলা যুবলীগ নেতা আরাফাত দাবি করেন, গত ৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় কাউলিবেড়া এলাকা থেকে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। তিনি বলেন, ‘হাতকড়া পরিয়ে গাড়ির মধ্যে চারজন পুলিশ সদস্য আমাকে মারধর করেন। পুখরিয়া এলাকায় আমাকে গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের গাড়িতে তুলে দেওয়া হয়। তখন আমার চোখ বেঁধে ফেলা হয়। নানাভাবে ভয় দেখানো হয়। বলা হয়, তোকে ক্রসফায়ারে দেব। সকালের সূর্য তুই দেখতে পারবি না। আজই তোর শেষ রাত। পরে আমাকে চেয়ারে পিছমোড়া করে বাঁধা হয়। এরপর আমার দুই পায়ে বেতের লাঠি দিয়ে অন্তত ৩০ মিনিট পেটানো হয়। ১০ মিনিট বিরতি দিয়ে আবার পেটানো হয়। পরে সেখানে আসেন জেলা ডিবি পুলিশের তৎকালীন ওসি আহাদুজ্জামান।’
এ ঘটনায় পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আলিমুজ্জামান জানান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) জামাল পাশাকে আহ্বায়ক করে গত মঙ্গলবার রাতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাশেদুল ইসলাম ও ভাঙ্গা সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গাজী রবিউল ইসলাম।
সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে গতকাল বুধবার চিঠি পেয়েছি। আজ থেকে বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করব আমরা। মূলত তদন্ত শেষে বলা যাবে মূল ঘটনাটি কী।’
আহাদুজ্জামান গত বছর ২০১৯ এর ১৭ নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ১২ মার্চ পর্যন্ত জেলা ডিবি পুলিশের ওসি ছিলেন। পরে তাঁকে সদরপুর উপজেলার চন্দ্রপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে বদলি করা হয়। বর্তমানে তিনি সেখানেই আছেন।
আহাদুজ্জামান বলেন, ‘আমি আরাফাতকে চোখ বাঁধা অবস্থায় পেয়েছি। তাঁকে মারধর করা হয়েছে কিনা জানি না। এর আগে আরাফাত আমাকে বলেছিলেন, আমি নাকি এমপি নিক্সন চৌধুরীর লোক। এর উত্তরে আমি বলেছি, নিক্সন চৌধুরীর লোক হলে আমি থানাতেই থাকতে পারতাম।’
মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা-সদরপুর-চরভদ্রাসন) আসনের সংসদ সদস্য। তিনি বলেন, ‘আরাফাত অনেক মামলার আসামি। বিষয়টি পরিকল্পনা করে হয়তো সাজিয়েছে। ওই ঘটনার ব্যাপারে আমি কিছু জানি না।’