জন্মাষ্টমীর বক্তব্যে হিন্দু নেতৃবৃন্দকে প্রধানমন্ত্রী দোষারোপ করেছেন : মির্জা ফখরুল
জন্মাষ্টমীর শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে আগত হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দকে উদ্দেশ্য করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন্মাষ্টমীর দিনে চট্টগ্রামে যে বক্তব্যে রেখেছেন, সেটি মনে রাখলেও আরেকটি বক্তব্য সম্ভবত আপনারা মনে করতে পারেননি। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী তিনি জন্মাষ্টমীর দিনে বক্তব্যে রেখেছেন, সেই বক্তব্যের মধ্যে তিনি আপনাদের (হিন্দু নেতৃবৃন্দ) নেতৃবৃন্দকে দোষারোপ করেছেন।
গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আজ শনিবার জন্মাষ্টমীর শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিজন কান্তি সরকার এবং পরিচালনা করেছেন অমলেন্দু দাস অপু। ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
মির্জা ফখরুল বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন- একটা কিছু ঘটলেই আপনারা ঝাঁপিয়ে পড়েন, এমন মনে হয় যে, আপনারা হিন্দু সম্প্রদায়ের সবাই অত্যাচারিত হচ্ছেন। অর্থাৎ আপনাদের ওপর যখন আঘাত করা হয়, মন্দির বাড়িঘর ভাঙচুর করা হলে যখন প্রতিবাদ করেন, সেই প্রতিবাদটাকে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) মনে করছেন আপনারা ভুল করছেন, অন্যায় করছেন। বাড়িয়ে বলছেন, অতিরঞ্জিত করছেন। কিন্তু এটাই সত্যি আজকে বিগত বছরগুলোতে আমরা সবাই অত্যন্ত দুঃখ ও ঘৃণার সঙ্গে লক্ষ্য করেছি যে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই আমাদের ভাই, যাদেরকে আমাদের আপন ভাই মনে করি, তাদের ওপর অত্যাচার হয়েছে, তাদের মন্দির-উপাসনালয়ে আক্রমণ হয়েছে। শুধু হিন্দু নয় বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সকলের ওপর সমানভাবে আক্রমণ করা হচ্ছে। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, সেই দেশে কখনোই শান্তি আসবে না, কোনো সম্প্রদায়ের মানুষ, ব্যক্তি নিরাপদে থাকবে না যতক্ষণ, না সেই দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। আজকে সেই গণতন্ত্রই এখানে অনুপস্থিত।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, আজকে বাংলাদেশে যে অবস্থা বিরাজ করছে, এই অবস্থার সঙ্গে শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাবের সময়ের বহুলাংশে মিল আছে। একইভাবে আজকে মানুষের অধিকারগুলোকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। আমরা অত্যন্ত ভারাক্রান্ত হৃদয়ে দেখছি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যিনি তার সারাটা জীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন, তাকে অন্যায়ভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে। লক্ষ্য করেছি আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে বিদেশে নির্বাসিত করে রাখা হয়েছে। ৩৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, ৬শর বেশি নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে, খুন করা হয়েছে প্রায় হাজারের ওপর মানুষকে। তার স্বীকৃতি জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার তিনি এসে নিজেই বলে গেছেন যে, এই দেশে গুম করা হচ্ছে, বিচারবর্হিভূত হত্যা চলছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে সকল মানুষের অধিকারকে ক্ষুণ্ন করা হয়েছে, ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এই অবস্থার প্রেক্ষিতে আজকে জন্মষ্টমীতে শ্রীকৃষ্ণের যে কাজ ছিল তা স্মরণ করতে চাই। অর্থাৎ আমরা ৭১ সালে একসাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান মুসলমান যুদ্ধ করেছিলাম। লক্ষ্য ছিল একটি সুস্থ-মুক্ত সমাজ গড়ে তুলবো, গণতান্ত্রিক সমাজ গড়ে তুলবো, সেই লক্ষ্য থেকে সম্পূর্ণভাবে দূরে সরিয়ে নিয়ে গেছে বর্তমান সরকার।
আওয়ামী লীগ আমাদের ভোটাধিকার ও বেঁচে থাকার অধিকার হরণ করেছে দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ক্ষমতায় টিকে থাকবার জন্য, একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা করবার জন্য আজকে তারা সমস্ত অধিকারগুলো কেড়ে নিয়েছে, ধ্বংস করে দিয়েছে। বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থেই একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এখন আমাদের প্রয়োজন অটুট ঐক্য। হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খ্রিস্টান সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমাদের সেই অধিকার যে অধিকারের জন্য ৭১ সালে যুদ্ধ করেছিলাম সে অধিকারগুলো প্রতিষ্ঠা করা। স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের অধিকারকে ফিরিয়ে নিয়ে আসা। তাই আসুন আজকে আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া যিনি আমাদের অধিকারের জন্য লড়াই করছেন এবং লড়াই করার জন্য এখনও অন্ত্যরীণ আছেন তার মুক্তির জন্য, বিদেশ থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাকে দেশে ফিরিয়ে আনবার জন্য এবং অসংখ্য যুবক তরুণরা যারা মামলার শিকার হয়েছেন; তাদের মামলা প্রত্যাহার, দেশে সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করবার জন্য এই সরকারকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা। পদত্যাগের পর নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর, জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করা এবং নতুন একটি নির্বাচন কমিশন গঠনের মধ্যে দিয়ে আমাদের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে এনে একটা পার্লামেন্ট-সরকার গঠন করা। এই লক্ষ্য নিয়ে আমরা এগিয়ে যাব, এটা হোক জন্মাষ্টমীর প্রার্থনা।
এসময় ফুলের তোড়া দিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মাধ্যমে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জন্মাষ্টমীর শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রয়াত সাবেক মন্ত্রী ও হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য ফ্রন্টের প্রতিষ্ঠাতা গৌতম চক্রবর্তীর স্ত্রী দীপালি চক্রবর্তী।
জন্মাষ্টমীর শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্যে দেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, ড. আব্দুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, নিতাই রায় চৌধুরী, ড. সুকোমল বড়ুয়া, সুব্রত চৌধুরী, সুশীল বড়ুয়া, জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু, রামকৃষ্ণ মিশনের পূর্ণধানন্দ, ইসকন ঢাকার দ্বিজমণি দাস ব্রহ্মচারী, বিশ্বনাথ সরকার, গৌরাঙ্গ দাস, পুরোহিত বিজয় পাণ্ডে, স্বাধীন কুণ্ডু, সুকৃতি মণ্ডল, মিলটন বৈদ্য, তরুণ দে, কামাক্ষা চন্দ্র দাস, দেবাশীষ রায় মধু, রমেশ দত্ত, সুরঞ্জন ঘোষ প্রমুখ।