জমিসহ নতুন ঘর পেয়ে খুশি ভিক্ষুক, প্রতিবন্ধীসহ ৫৫টি অসহায় পরিবার
ভিক্ষুক, প্রতিবন্ধী, ভ্যানচালক, দিনমজুর এবং অন্যের বাড়ি কাজ করা মানুষগুলোর মতো অসহায় পরিবারের কাছে জমি কিনে পাকা ঘর করে থাকাটা রীতিমতো অধরা স্বপ্ন। আর, এসব মানুষের কাছে সে স্বপ্ন এখন বাস্তবেই ধরা দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ঘরে স্বপ্নপূরণ হয়েছে অসহায় এসব মানুষের।
যাঁরা একসময়ে সরকারি জায়গায়, ভাড়াবাড়ি, অন্যের দয়ায় কারও রান্নাঘর বা বারান্দায় থাকতেন, তাঁরা এখন প্রত্যেকেই এক টুকরো জমি এবং একটি আধপাকা ঘরের মালিক। তাঁরা এখন সেখানে ভবিষ্যতের নতুন স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছেন। আগের চেয়ে অনেক ভালো আছেন এখন তাঁরা। তাই, প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ ও কতজ্ঞতা জানাতে ভুলে যাননি তাঁরা।
মুজিব জন্মশতবর্ষ উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ের দ্বিতীয় ধাপে মোংলায় ৫৫টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার পেয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের ঘর। প্রত্যেক পরিবারকে দেওয়া হয়েছে দুই শতক জমিসহ আধপাকা নতুন ঘর। ঘরে বিদ্যুৎ-সংযোগও রয়েছে। প্রকল্প এলাকায় রয়েছে মিষ্টি পানির পুকুর, প্রত্যেক ঘরের সাথে তিন হাজার লিটারের পানির ট্যাংক ও টিউবওয়েলও। উপজেলার চাঁদপাই ইউনিয়নের মাছমারা-নারকেলতলা এলাকায় নির্মাণ করা হয়েছে ঘরগুলো। এসব ঘর গড়ে তোলা হয়েছে বঙ্গবন্ধু মোংলা-ঘাষিয়াখালী আন্তর্জাতিক নৌ-ক্যানেলের পাড়ে। উপজেলার চাঁদপাই, সোনাইলতলা ও বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়নের মাঝখানে পড়েছে এ আশ্রয়ণ প্রকল্পটি। এর আগে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে ৩০০টি ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে এখানকার দরিদ্র পরিবারগুলোর মধ্যে। আর, তৃতীয় পর্যায়ে নতুন করে দেওয়া হয়েছে আরও ৫৫টি ঘর। এরই মধ্যে এসব ঘরে উঠে পড়েছেন বাসিন্দারা। সমাজের খুবই নিচু স্তরের অসহায় মানুষগুলোর চোখে-মুখে এখন প্রশান্তির ছাপ। ঘর পেয়ে আনন্দে আত্মহারা সবাই। তাই এত খুশির মধ্যেও প্রধানমন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা জানাতে ভুলে যাননি তাঁরা।
তৃতীয় পর্যায়ের দ্বিতীয় দফায় জমিসহ ঘর পাওয়া হাসিনা বেগম (৪৮) বলেন, ‘আমি পরের বাড়ি কাজ করে খাই। কোনোদিন চিন্তাও করিনি জমিসহ একটি নতুন পাকা ঘর পাব। খুব খুশি ও আনন্দ লাগছে ঘর পেয়ে। ধন্যবাদ জানাই প্রধানমন্ত্রীকে এবং তাঁর জন্য প্রাণ খুলে দোয়া করি।’
করিমন বেগম (৫০) বলেন, ‘আমি ভিক্ষা করে খাই। সে টাকা দিয়ে ভাড়া থাকতাম এর-ওর রান্নাঘর ও বারান্দায়। তাদের ভাড়ার টাকা ঠিকমতো দিতে না পারলে নামিয়ে দিত। কাঁদতে কাঁদতে নেমে যেতে হতো। আমি ঘর পেয়ে খুব খুশি, যা বলার মতো নয়। এমন ঘর করার সামর্থ্য তো কোনোদিন হতো না। সরকারের প্রতি শুকরিয়া, সরকার ভালো থাকুক দোয়া করি।’
শারিরীক প্রতিবন্ধী নজরুল ইসলাম (৪১) বলেন, ‘আগে ভাড়া থাকতাম, অনেক কষ্ট হতো। এখন ঘর পেয়ে খুব খুশি, ধন্যবাদ ইউএনও স্যার ও প্রধানমন্ত্রীকে।’
এদিকে এর আগে যাঁরা আশ্রয়ণের জমিসহ ঘরে উঠেছেন, তাঁরাও এখন ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। কারণ, মূল আয় থেকে এখন আর ঘরভাড়া দিতে হয় না তাঁদের। বেঁচে যাওয়া সে টাকা দিয়েই তাঁরা তাদের ঘরের পাশের জমিতে সবজির চাষাবাদ ও পশুপালনও করছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে সরকারের দেয়া অনুদানের টাকা দিয়ে নতুন নতুন কাজের মধ্য দিয়ে আয় বাড়িয়ে এখন সুখে-শান্তিতেই আছেন তাঁরা।
আশ্রয়ণের পুরানো বাসিন্দা ইউসুফ শেখ ও মো. মনির জানান, তাঁদের ঘরের চারপাশে সবজি চাষ, হাঁস-মুরগি ও ছাগল পালন করছেন। আগের মতো আর কষ্ট নেই। ঘরের নারীরাও সেলাই মেশিন দিয়ে এবং হাতের কাজ করে আয় করছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তাঁদের জমি ও ঘর দিয়েছেন, তাই খেয়ে পরে ভালো আছেন তাঁরা। তাঁরা বলেন, আমরা আশ্রয়ণবাসী প্রধানমন্ত্রীর জন্য দোয়া করি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কমলেশ মজুমদার বলেন, ঘরগুলো অত্যন্ত সুন্দরভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। ভালো মানের মালামাল ব্যবহার করা হয়েছে ঘরগুলোতে। জমির দলিল ও ঘরের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে তা তুলে দেওয়া হচ্ছে সুবিধাভোগীদের হাতে। মূলত যাচাই-বাছাই করেই ভিক্ষুক, প্রতিবন্ধী, ভ্যানচালক, দিনমজুর, অন্যের বাড়ি কাজ করে—এমন লোকজনকেই দেওয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের এ ঘরগুলো। ঘরগুলোতে রয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ, ঘরের সঙ্গে পানি সংরক্ষণের তিন হাজার লিটারের পানির ট্যাংকও দেওয়া হয়েছে। আর, আগে যাঁরা আশ্রয়ণে গেছেন, তাঁরাও ধীরে ধীরে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন। তিনি আরও বলেন, পর্যায়ক্রমে নতুন নতুন ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে, যা দেওয়া হবে সমাজের অবহেলিত-অসহায় ভূমি ও গৃহহীনদের মধ্যে। প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার—দেশের একটি মানুষও ভূমি ও গৃহহীন থাকা পর্যন্ত আশ্রয়ণ প্রকল্পের এ কার্যক্রম চলমান থাকবে।