জেলায় জেলায় বাড়ছে ডায়রিয়ার প্রকোপ
দেশের জেলায় জেলায় বাড়ছে ডায়রিয়ার প্রকোপ। হঠাৎ গরম বেড়ে যাওয়ায় এমনটি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। কোথাও কোথাও রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। বেডের তুলনায় রোগী বেড়ে যাওয়ায় মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে রোগীদের। এরই সুযোগে বেড়েছে দালালদের দৌরাত্ম্য। তবে, সব রোগীকে সাধ্যমতো চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি সব জেলার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। মজুদ আছে স্যালাইনও। এদিকে ডায়রিয়া থেকে বাঁচতে রাস্তার পাশের খাবার পরিহার, পানি খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
খুলনা স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক ডা. মনজুরুল মুরশিদ এনটিভি অনলাইনের প্রতিনিধি মুহাম্মদ আবু তৈয়বকে জানান, ফেব্রুয়ারি মাসে ডায়রিযা রোগীর সংখ্যা ছিল ৩১ হাজার ৬৩৯ এবং মার্চ মাসে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৩৬ হাজার ২০৯ জন হয়। হাসপাতালে ভর্তি ছাড়াও প্রাথমিক চিকিৎসা নেওয়া সংখ্যা আরও বেশি। তবে পরিস্থতি নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।
ময়মনসিংহ বিভাগে গত ফেব্রুয়ারিতে রোগীর সংখ্যা ছিল চার হাজার ৭৮৪ জন। এর আগের মাসে জানুয়ারিতে ছিল চার হাজার ৮৭৪ জন। চলতি মাসে এ সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
ময়মনসিংহের সিভিল সার্জন মো. নজরুল ইসলাম বলেন, গরম বেশি হলে রোগটি বাড়ে। তাই এসময় রাস্তার পাশের খোলামেলা খবার না খাওয়াই ভালো। একই সঙ্গে আক্রান্ত হলেই স্যালাইন পান করা ও চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
বরিশাল প্রতিনিধি আকতার ফারুক শাহিন জানান, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে বিভাগের ছয়টি জেলায় মোট ১২ হাজার ২৭৩ জন রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। এর মধ্যে দুজন মারা গেছেন। জানুয়ারিতে আক্রান্ত হন চার হাজার ৮১১, ফেব্রুয়ারিতে এক হাজার ৮১০ জন এবং মার্চে পাঁচ হাজার ৬৫২ জন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন।
বরিশাল সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা মলয় কৃষ্ণ বড়াল জানান, গত সাত দিনে ৭৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
আক্রান্তের দিক দিয়ে বরিশাল বিভাগের শীর্ষে আছে ভোলা জেলা। সব থেকে কম আক্রান্ত পটুয়াখালীতে উল্লেখ করে বিভাগীয় স্বাস্থ্য উপপরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, ‘চৈত্র-বৈশাখে এ রোগটি বাড়ে। এ পর্যন্ত বিভাগের যে চিত্র দেখা গেছে, আক্রান্তের সংখ্যা তার থেকে বেশি হতে পারে। কারণ, খুব জটিল পরিস্থিতির সম্মুখীন না হলে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে রোগী ভর্তি হন না। বাসায় থেকে চিকিৎসা নেন।’
রাজশাহী জেলায় মার্চে এক হাজার ৩৬৫ জন এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন আমাদের প্রতিনিধি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি শিহাব উদ্দিন বিপু জানান, হঠাৎ করে গরম বেড়ে যাওয়ায় বেড়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপ, বলছে জেলার স্বাস্থ্যবিভাগ। তবে, ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণে পর্যাপ্ত ওষুধ ও স্যালাইন মজুদ রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তাঁরা।
জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় ১৩৫ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। আজ রোববার সকালে নতুন আরও ১৫ রোগী ভর্তি হয়েছেন। সে হিসাবে শুধু জেলা সদর হাসপাতালেই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ১৫২ জন ভর্তি রয়েছেন। ২০ মার্চের পর থেকে জেলায় বেড়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপ।
এরই মধ্যে জেলা সদর হাসপাতালে বাড়ছে দালালদের দৌরাত্ম্য। কাঙ্ক্ষিত সেবাবঞ্চিত রোগীর স্বজনদের রয়েছে নানা অভিযোগ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিভিল সার্জন ডা. মো. একরামউল্লাহ বলেছেন, ‘জেলায় ডায়রিয়ার প্রকোপ কিছুটা বেড়েছে। এ পর্যন্ত ১৩৫ জনের মতো আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ৫৫ জন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিচ্ছেন। রোগী বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালে চাপ বেড়েছে। চিকিৎসক, নার্সরা সাধ্যমতো সেবা দিচ্ছেন। যেকোনো পরিস্থিতি তাঁরা মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত আছেন।’
নরসিংদী প্রতিনিধি বিশ্বজিৎ সাহা জনান, জেলায় ডায়রিয়া রোগীর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় চিকিৎসকরা হিমিশিম খাচ্ছেন। হাসপাতালের মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে রোগীদের। রোগীর সেবায় নিয়জিত সেবক-সেবিকারা যাথাসাধ্য চেষ্টা করলেও রোগীর স্বজনদের রয়েছে নানা অভিযোগ।
নরসিংদীর সিভিল সার্জন মো. নূরুল ইসলাম বলেন, ‘ডায়রিয়ার সার্বিক পরিস্থিতি পরিবর্তন হচ্ছে। রোগী বাড়ছে। চিকিৎসকরা সেবা প্রদান করে যাচ্ছেন।’ তিনি রাস্তার পাশের খাবার না খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘পানি খাওয়ার বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।’