টাকার জন্য অটোচালক খুন, গ্রেপ্তার ২
নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলায় অটোভ্যানচালক মহসিন আলী (২৪) খুনের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। দুই হাজার টাকার জন্য খুন করা হয় বলে দাবি পুলিশের।
এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গতকাল বুধবার দুজনকে মহাদেবপুর উপজেলার কৃষ্ণপুর দক্ষিণপাড়া এবং বগুড়ার সান্তাহার পৌর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানান নওগাঁর পুলিশ সুপার (এসপি) আব্দুল মান্নান মিয়া।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন মহাদেবপুর উপজেলার কৃষ্ণপুর দক্ষিণপাড়ার সাখাওয়াত হোসেন ওরফে জিয়া (৩৫) এবং বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার পৌরসভার ইয়াড কলোনির বাসিন্দা প্রদীপ চন্দ্র (৪৫)।
পুলিশের দাবি, পাওয়ানা টাকা ফেরত না দেওয়ায় গ্রেপ্তারকৃত সাখাওয়াত হোসেন অটোভ্যানচালক মহসিন আলীকে হত্যা করে। এ সময় তিনি অটোভ্যান নিয়ে যান। পরে সেই অটোভ্যানটি সান্তাহার পৌরসভার বাসিন্দা প্রদীপ চন্দ্রের কাছে বিক্রি করেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এসপি আব্দুল মান্নান মিয়া জানান, মহাদেবপুর উপজেলার আটুরা পূর্বপাড়ার বাসিন্দা মহসিন আলী গত ১৩ জানুয়ারি দুপুর ১২টার দিকে অটোভ্যান নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন। রাতে বাড়িতে না ফেরায় পরিবারের লোকজন খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। কোনো সন্ধান না পেয়ে পরের দিন মহসিন আলীর বড় বোন মর্জিনা বেগম মহাদেবপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
নিখোঁজের আট দিন পর ২১ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৬টার দিকে স্থানীয়রা উপজেলার হোসেনপুর এলাকার একটি হলুদক্ষেতে মহসিন আলীর অর্ধগলিত লাশ দেখে পুলিশে খবর দেয়। পরে পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নওগাঁর সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
এ ঘটনায় পরের দিন ২২ জানুয়ারি নিহত মহসিন আলীর বড় বোন মর্জিনা বাদী হয়ে মহাদেপুর থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলার পর এ ঘটনার তদন্তে নামে মহাদেবপুর থানা পুলিশ।
পুলিশ সুপার বলেন, ‘তদন্ত কর্মকর্তা জানতে পারেন, হত্যার ঘটনার দুই মাস আগে উপজেলার কৃষ্ণপুর দক্ষিণপাড়ার সাখাওয়াত হোসেনের কাছ থেকে তিন হাজার টাকা ধার নেন মহসিন। পরে এক হাজার টাকা পরিশোধ করেন। অবশিষ্ট দুই হাজার টাকা পরিশোধ না করায় সাখাওয়াত তাঁকে চাপ দিতে থাকেন।
গত ১৩ জানুয়ারি দুপুরে সাখাওয়াত হোসেন মহসিনকে উপজেলার মাতাজিহাটে ডেকে নেন। সেখান থেকে তাঁরা অটোভ্যানে করে রাত ৯টার দিকে উপজেলার মহিষবাথান মোড়ের কাছে হোসেনপুর বালু পয়েন্ট এলাকায় যান। সেখানে তাঁদের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। একপর্যায়ে সাখাওয়াত ইট দিয়ে মহসিনের মাথায় উপর্যুপরি আঘাত করে হত্যা করেন।
পরে সেই বালু পয়েন্টের কাছে একটি হলুদক্ষেতের ভেতরে পাতা দিয়ে মরদেহ ঢেকে রেখে অটোভ্যানটি নিয়ে যান সাখাওয়াত।
হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে গতকাল বিকেলে সাখাওয়াতকে উপজেলার কৃষ্ণপুর দক্ষিণপাড়ার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে মহাদেবপুর থানা পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে সাখাওয়াত হত্যার কথা স্বীকার করেন এবং অটোভ্যানটি সান্তাহারে প্রদীপ চন্দ্র নামে এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দেওয়ার তথ্য দেন।
সাখাওয়াতের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বগুড়ার সান্তাহার পৌরসভার ইয়াড কলোনি এলাকার প্রদীপ চন্দ্রের বাড়ি থেকে ছিনতাই হওয়া অটোভ্যানটির খণ্ড খণ্ড অংশ উদ্ধার করে পুলিশ। আলামত নষ্ট করার অভিযোগে প্রদীপকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কে এম এ মামুন খান চিশতী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গাজিউর রহমান ও সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) সুরাইয়া হোসেন, নওগাঁ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আজ বিকেল ৪টার দিকে মুঠোফোনে মহাদেবপুর থানার ওসি আজম উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আসামিদের আদালতে পাঠানো হয়েছে। আসামিরা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি না দিলে তথ্যপ্রমাণ উদ্ধারের জন্য তাঁদের সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হবে।’