ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদন পক্ষপাতদুষ্ট : তথ্যমন্ত্রী
তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বাংলাদেশ নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) দুর্নীতি প্রতিবেদন পক্ষপাতদুষ্ট, ভুল তথ্যে প্রণীত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
আজ বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তথ্যমন্ত্রী টিআই প্রকাশিত প্রতিবেদন প্রসঙ্গে বলেন, ‘গতকাল টিআই দুর্নীতি সূচক প্রকাশ করেছে। আগের ধারাবাহিকতায় তারা যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তা গতানুগতিক ছাড়া কিছু নয়।’ তিনি বলেন, ‘টিআই একটি এনজিও। এটি জাতিসংঘের অ্যাফিলিয়েটেড কোনো সংস্থা নয়।’
টিআইকে ‘নিছক একটি এনজিও’ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘এটাকে আমাদের দেশে অনেক গুরুত্ব দেওয়া হয়। পাশের দেশ ভারতসহ অনেক দেশে এদের প্রতিবেদনকে গুরুত্বই দেয় না।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা মনে করি, এ ধরনের সংগঠন থাকা ভালো। কিন্তু সেই সংগঠনের কোনো প্রতিবেদন যদি ভুল তথ্য-উপাত্তের ওপর হয়, ফরমায়েশি হয়, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কিংবা গতানুগতিক হয়, তখন সেই সংস্থাটির মান-মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়। তাদের সাম্প্রতিক রিপোর্টও গতানুগতিক, একপেশে।’
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘কয়েকদিন আগে নির্বাচন কমিশন আইন নিয়ে টিআইবি একটি বিবৃতি দিয়েছিল। টিআইবি কাজ করে দুর্নীতি নিয়ে। আর নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়টি রাজনৈতিক। এ বিষয়ে টিআইবি বিবৃতি দিয়ে প্রমাণ করেছে, টিআইবি রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহৃত হয়। তিনি বলেন, ‘টিআইবির বিবৃতি ও বিএনপির বিবৃতির মধ্যে কোনো পার্থক্য ছিল না। যার অর্থ, তারা রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহৃত হয় এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে প্রতিবেদন প্রকাশ করে।’
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল নিয়ে বিশ্বব্যাপী সমালোচনার উদাহরণ তুলে ধরে তথ্য ও সম্প্রচামন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ‘ফ্রান্সের লো মোন্ড (Le Monde) পত্রিকার মতে, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল তাদের জরিপে কোনো দেশের দুর্নীতির আর্থিক মাত্রা পরিমাপ করতে পারে না। কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা বা এনজিও দিয়ে এই জরিপ পরিচালিত হয়, যা সম্পূর্ণ তথ্যের ভিত্তিতে নয়। যেসব সংস্থার অর্থে টিআইবি পরিচালিত হয়, সেসব সংস্থার বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। ২০১৪ সালে সিমেন্স কোম্পানি থেকে তিন মিলিয়ন ডলার ফান্ড টিআই গ্রহণ করে, যে কোম্পানি ২০০৮ সালে বিশ্বে দুর্নীতির জন্য সর্বোচ্চ এক দশমিক ছয় বিলিয়ন ডলার জরিমানা দিয়েছে। ২০১৫ সালে টিআইবির ‘ওয়াটার ইন্টেগ্রিটি নেটওয়ার্কে’র আর্থিক লেনদেন নিয়ে প্রশ্ন তোলায় কর্মকর্তা মিজ আনা বাজোনিকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিলে তিনি জনসম্মুখে এই ঘটনা তুলে ধরেন।’
‘টিআইবি তার প্রতিবেদনে বলেছে, তাঁরা কোনো দেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কতটুকু আছে, সেটিও বিবেচনায় নেয়’ উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘প্রশ্ন হচ্ছে, তাদের প্রতিবেদনে সিঙ্গাপুরকে তাঁরা প্রায় দুর্নীতিমুক্ত দেশ হিসেবে দেখিয়েছে। অথচ সেখানে আমাদের দেশের মতো মতপ্রকাশের ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কিংবা অবাধ তথ্যপ্রবাহ নেই, তাহলে সিঙ্গাপুর কিভাবে দুর্নীতিমুক্ত দেশ হিসেবে বিবেচনায় আসে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘পাকিস্তানের দুর্নীতির কথা দুনিয়াব্যাপী সবাই জানে। বাংলাদেশকে সেই পাকিস্তানের নিচে দেখিয়েছে টিআই। এই তথ্য-উপাত্তগুলোই বলে দেয়, টিআইয়ের রিপোর্ট একপেশে, ভুল তথ্যের ওপর ভিত্তি করে প্রণীত।’
‘২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে ও পরে বিএনপি মার্কিন সরকারের দপ্তরগুলোতে অর্ধশতাধিক চিঠি চালাচালি করেছে’ উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘২০১৯ সালের ১৭ এপ্রিল মার্কিন সিনেট কমিটি, সাব-কমিটি ও হাউজ কমিটির পাঁচ সদস্যকে বিএনপি মহাসচিব নিজের স্বাক্ষরে দেওয়া চিঠিতে বাংলাদেশকে মার্কিন সরকারের অনুদান পূণর্মূল্যায়নের তদবির করেছেন। ২০১৯ সালের ২৪ এপ্রিল মার্কিন সরকারের বিদেশ বিষয়ক হাউস ও সিনেটের পাঁচজন চেয়ারম্যানও এ সংক্রান্ত আরও বিভিন্নজনকে চিঠি লিখে মির্জা ফখরুল সাহেব সেসময় যুক্তরাষ্ট্র সফররত বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ২০১৮ সালের নির্বাচন ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে জিজ্ঞাসা করতে বলেন। এগুলোর তথ্যপ্রমাণ আমাদের কাছে আছে।’
মির্জা ফখরুল সাহেব গতকাল মঙ্গলবার একটা ‘কমিক’ করেছেন উল্লেখ করে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন টেলিভিশনের মাধ্যমে তাকে লবিস্ট নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, বিএনপি ভালোর জন্যই লবিস্ট নিয়োগ করেছে। অর্থাৎ আমরা এত দিন ধরে যে কথাগুলো বলে আসছিলাম, সেটি তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন। কিন্তু সম্ভবত, তার সহকর্মীদের চাপের মুখে পাঁচ মিনিট পরই আবার তিনি বললেন, তাঁরা কখনো লবিস্ট নিয়োগ করেননি। আসলে প্রথমটাই সত্য ছিল।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা জানেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধের জন্য বিএনপি এবং জামাত যৌথভাবে লবিস্ট নিয়োগ করেছিল। প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে হত্যা করার জন্য তাঁরা এফবিআইয়ের এজেন্ট ভাড়া করেছিল, যে এজেন্টকে সেই অপরাধে পরে বিচারের মুখোমুখি দাঁড়াতে হয়েছে।’
বিএনপির উদ্দেশে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করে কোনো লাভ নেই।’