দৈনিক মজুরি ১৪৫ টাকা করার প্রস্তাব সরকারের, মহাসড়কে চা শ্রমিকেরা
চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৪৫ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে সরকার। এর আগে গত ১৭ আগস্ট শ্রম অধিদপ্তরে শ্রমিকদের সঙ্গে মালিকপক্ষের বৈঠক থেকে দৈনিক মজুরি ১৪০ টাকা করার প্রস্তাব দিলেও তা প্রত্যাখান করেছেন শ্রমিকেরা। এদিকে, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ডাকা অনির্দিষ্টকালের পূর্ণদিবস কর্মবিরতির আজ অষ্টম দিন। আন্দোলনরত শ্রমিকরা মহাসড়কে নেমে অবরোধ করছেন।
আজ শনিবার সকাল থেকে আন্দোলনরত শ্রমিকরা আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। বিভিন্ন চা-বাগানের কারখানার সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন তাঁরা। তাঁরা দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন।
হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান সাংবাদিকদের বলেন, ‘সরকার থেকে আপাতত শ্রমিকদের মজুরি ২৫ টাকা বাড়িয়ে ১৪৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আপাতত এই মজুরিতে কাজে ফিরতে শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে আজ বিকেলে আলোচনায় বসা হবে।’
বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) নৃপেন পাল বলেন, ‘৩০০ টাকা দৈনিক মজুরির দাবিতে চা-শ্রমিক ইউনিয়নের ডাকে ৯ আগস্ট থেকে ১২ আগস্ট পর্যন্ত দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করেন শ্রমিকেরা। এই চার দিন শ্রমিকেরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। এরপর দাবি আদায় না হওয়ায় ১৩ আগস্ট থেকে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেন তাঁরা। এদিন চা-শ্রমিকেরা চান্দপুর এলাকায় পুরোনো ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করেন। পরে সেখান থেকে কয়েক হাজার চা-শ্রমিক পায়ে হেঁটে চুনারুঘাট পৌর এলাকায় প্রধান সড়কে অবস্থান নেন এবং সেখানে সড়ক অবরোধ করে পথসভা করেন।
নৃপেন পাল বলেন, ‘সমস্যা সমাধানে ১৬ আগস্ট শ্রীমঙ্গলের লেবার হাউসে বেলা ১১টায় শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরী শ্রমিক ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করেন। আমরা তাঁর কাছে আমাদের বিভিন্ন সমস্যা ও দাবি তুলে ধরি। তিনি গুরুত্বসহকারে আমাদের কথাগুলো শোনেন এবং আমাদের আশ্বস্ত করেন। তখন শোকের মাস বিবেচনা করে এবং সরকারের প্রতিনিধিদল যেহেতু আমাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছেন, তাই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ ও রাজপথের আন্দোলন স্থগিত করি।’
চা শ্রমিক ইউনিয়ন জানায়, জুনে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন ও মালিকপক্ষের সংগঠন বাংলাদেশ চা সংসদের বৈঠক হয়। সেখানে শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা করার প্রস্তাব দেন শ্রমিক নেতারা। কিন্তু, মালিকপক্ষ ১৪ টাকা বাড়িয়ে ১৩৪ টাকা মজুরির প্রস্তাব দেয়। যে কারণে শ্রমিক নেতারা তা প্রত্যাখ্যান করেন। এরপর আরও এক মাস পার হলেও মালিকপক্ষ কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি। এর প্রতিবাদে ৯ থেকে ১২ আগস্ট টানা চার দিন প্রতি দিন দুই ঘণ্টা করে ধর্মঘট পালন করা হয়। তারপরও মালিকপক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো কথা না বলায় ১৩ আগস্ট থেকে বাংলাদেশের সব চা বাগানে শুরু হয় শ্রমিকদের অনির্দিষ্টকালের পূর্ণদিবস কর্মবিরতি।
হবিগঞ্জের ২৪টি চা বাগানের শ্রমিকরা দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা করার দাবিতে কাজ বন্ধ রেখে আন্দোলনে নেমেছেন। গত ১৩ আগস্ট চুনারুঘাটে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে সড়ক অবরোধ করেছিলেন চা শ্রমিকরা। ওইদিন দুপুর ১২টার দিকে চুনারুঘাটে ঢাকা-সিলেট পুরাতন মহাসড়কের চান্দপুর এলাকায় অবরোধে বসেন তাঁরা। পরে হাজার হাজার নারী-পুরুষ চা শ্রমিক দীর্ঘ পাঁচ কিলোমিটার হেঁটে চুনারুঘাট শহরে সড়ক অবরোধে নামেন। পুলিশ ব্যারিকেড দিলেও তা ভেঙে সড়ক অবরোধ করা হয়।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন রাজপথে কর্মসূচি না দিলেও ১৮ আগস্ট মাধবপুর উপজেলার জগদীশপুরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করা হয়। মাধবপুর উপজেলার সুরমা ও তেলিয়াপাড়া চা-বাগানের হাজার হাজার শ্রমিক অবরোধ করেন ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক। দুপুর ২টা থেকে পৌনে এক ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ করা হয়। পরে প্রশাসনের কথায় মহাসড়ক থেকে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। তবে, চা শ্রমিক ইউনিয়ন ১৬ আগস্ট শায়েস্তাগঞ্জ গোলচত্বরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে অবরোধ কর্মসূচি দিয়েছিল। কিন্তু, মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে শ্রম অধিদপ্তরের সঙ্গে বৈঠকের জন্য তা স্থগিত করা হয়।