ধর্ষণের বিচার না পেলে আত্মহত্যার আলটিমেটাম স্কুলছাত্রীর
রংপুরের বদরগঞ্জে দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকে (১৫) বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের অভিযোগে বদরগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় গত রোববার সন্ধ্যায় এলাকার চেয়ারম্যান মীমাংসার কথা বলে ওই ছাত্রী ও তার বাবাকে তাঁর বাড়িতে ডেকে মীমাংসাপত্রে স্বাক্ষর নিয়ে এক লাখ টাকা হাতে ধরিয়ে দিয়েছেন।
থানায় লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বদরগঞ্জ উপজেলার দশম শ্রেণির ওই ছাত্রীর পাশের গ্রামের হৃদয়ের সঙ্গে ছয় মাস আগে পরিচয় হয়। পরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এক পর্যায়ে হৃদয় ওই স্কুলছাত্রীকে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে দৈহিক সম্পর্কে লিপ্ত হন। এভাবেই কেটে যায় ছয় মাস, পরে ওই ছাত্রী হৃদয়কে বিয়ের জন্য চাপ দিলে সে সময় ক্ষেপণ করতে থাকে।
বিষয়টি ওই ছাত্রী আঁচ করতে পেরে বিয়ের দাবিতে প্রেমিক হৃদয়ের বাড়িতে গিয়ে অবস্থান নেয়। এ সময় হৃদয়ের পরিবারের লোকজন তাকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করে। পরে ঘটনাটি তাৎক্ষণিক ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানকে অবহিত করা হয়। তখন চেয়ারম্যানের বাড়িতে চার দিন পর বিষয়টি সমাধান করা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়।
নির্ধারিত সময়ে চেয়ারম্যান কোনো ভূমিকা না নেওয়ায় গত শুক্রবার রাত ১০টার দিকে ওই ছাত্রী বদরগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। থানায় অভিযোগ দেওয়ার পর বিট পুলিশ কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) হাবিব ধর্ষিতা ছাত্রী ও তার বড় ভাইকে বিষয়টি মীমাংসা করে দেওয়ার প্রস্তাব দেন বলে ওই স্কুলছাত্রী ও তার স্বজনরা অভিযোগ করেন।
ওই ছাত্রীর মা জানান, থানায় অভিযোগ দেওয়ার পর একজন ইউপি সদস্যের মাধ্যমে চেয়ারম্যান গত রোববার সন্ধ্যায় তাঁর মেয়ে ও স্বামীকে কৌশলে তাঁর বাড়িতে ডেকে নিয়ে মুচলেকাপত্রে স্বাক্ষর নিয়ে তাদের হাতে নগদ এক লাখ টাকা ধরিয়ে দেন।
অভিযোগের বিষয়ে ওই ইউপি চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ইউপি সদস্য রেজাউলের উপস্থিতিতে উভয় পক্ষকে ডেকে ঘটনাটি মীমাংসা করে দেওয়া হয়েছে।
ছাত্রীর বাবা বলেন, ‘মেম্বার-চেয়ারম্যান আমাদের ডেকে নিয়ে আপস করে দিয়েছেন।’
ভুক্তভোগী ছাত্রী বলে, ‘আমি থানায় মামলা করেছি। বিচার না পেলে আত্মহত্যা করে এ কলঙ্কের ইতি টানব।’
ওই ছাত্রীর স্কুলের প্রধান শিক্ষক এ বিষয়ে বলেন, ‘স্কুল বন্ধের সময়ের ঘটনা এটি। যদি স্কুলে যাওয়া-আসার পথে এ রকম ঘটনা ঘটত তাহলে আমরা ব্যবস্থা নিতাম।’
এ ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে বদরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আরিফ আলী বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। ওসি স্যারের সঙ্গে কথা বলেন।’
বদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিবুর রহমান বলেন, ‘তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই হাবিব সাক্ষী দেওয়ার জন্য আদালতে গেছেন। তিনি এলে তার সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’