নব্বইতেও অদম্য বৃক্ষপ্রেমী শওকত মাস্টার
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার নাকাইহাট এলাকার বাসিন্দা ৯০ বছর বয়সী শওকত আলী। এলাকার সবাই তাঁকে শওকত মাস্টার বলেই চেনে। তবে তিনি এলাকায় পরিচিতি পেয়েছেন বিলুপ্ত ও দুর্লভ প্রজাতির ঔষধি ও ফলদ গাছের বাগান করে।
স্থানীয়রা জানান, অবসরপ্রাপ্ত এই শিক্ষক নিজের বাড়িতে বিলুপ্ত ও দুর্লভ প্রজাতির প্রায় এক হাজার ঔষধি ও ফলদ গাছের বাগান গড়ে তুলেছেন। তিনি বাগান থেকে উৎপাদিত ওষুধ ও ফল বিনামূল্যে সাধারণ মানুষের মাঝে বিতরণ করেন।
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও গাছ দ্বারা প্রাকৃতিক ওষুধ দিয়ে রোগ নিরাময় বাড়াতেই এই প্রচেষ্টা বলে জানান শওকত আলী। বার্তা সংস্থা ইউএনবির এক প্রতিবেদনে শওকত আলীর এমন উদ্যোগের বিষয়টি উঠে আসে।
জানা যায়, গোবিন্দগঞ্জের নাকাইহাট ইউনিয়নের শীতল গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শওকত আলী হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার সঙ্গেও জড়িত। বয়স ৯০ এর কাছাকাছি হলেও মানবসেবার জন্য বয়স তাঁকে পরাজিত করতে পারেনি। মানুষ ও গাছের প্রতি ভালোবাসা তাঁর শৈশব থেকেই। তিন ছেলে, দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে তাঁর সংসার। তাঁর কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করেন পরিবারের সদস্যরাও।
শওকত আলীর ছেলে সোহাগ বলেন, ‘আমার বাবার মতো মানুষ এ সমাজে আরো দরকার। তাহলে আমরা ঔষধি গাছের গুণাগুণ সম্পর্কে জানতে পারতাম।’
শওকত আলী সারা দিন চিকিৎসাসেবার পাশাপাশি বসতবাড়ির আশপাশে ও পুকুরপাড়ে গড়ে তুলেছেন প্রায় এক হাজার বিলুপ্তপ্রায় ও দুর্লভ প্রজাতির ঔষধি ও ফলদ গাছ। গ্রামের অন্যান্য এলাকায় এসব বিলুপ্তপ্রায় ও দুর্লভ গাছের চারা ছড়িয়ে দিতে বিনামূল্যে বিতরণ করে যাচ্ছেন তিনি। সেইসঙ্গে নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের ডেকে এনে পরিচিত করে দেন এসব গাছের সঙ্গে। জানিয়ে দেন বিভিন্ন গাছের গুণাগুণ। গাছের প্রতি এমন মমতাবোধের কারণে এলাকার মানুষ তাঁর নাম দিয়েছে ‘বৃক্ষপ্রেমী’ শওকত আলী। তাঁর এ কার্যক্রমে খুশি জেলা কৃষি বিভাগ ও সাধারণ মানুষ।
এলাকার বাসিন্দা রুবেল চৌধুরী বলেন, ‘আমরা তো শুধু ধান ও অন্যান্য ফসল চাষ করে নিজের স্বার্থ বড় করে দেখি। নিজের স্বার্থের জন্য জমিতে নানা ফসলের চাষ করে বছরের খাবার জোগাড় করি। কিন্তু শওকত মাস্টার তা করেন না, তিনি ব্যতিক্রম। তাঁর জমিতে শুধু ধান-গমের আবাদ করা হয় না, মানুষের মঙ্গলের জন্য নিজের অনেক জমিতে লাগিয়েছেন বিরল প্রজাতির ঔষধি গাছ। মানুষ তাঁর গাছের বাগান দেখতে আসেন। মানুষ গাছ দেখতে এলে তিনিও খুশি হন। নিজের গাছ দেখিয়ে জানান, আমরা বেঁচে আছি এই গাছের গুণেই। গাছ দিয়েই যে কত রকমের ওষুধ তৈরি হয়, সে সম্পর্কে আমরা জানতে পেরেছি তাঁর কাছ থেকে।’
আরেক বাসিন্দা সাহেব উদ্দিন মাস্টার বলেন, ‘শওকত মাস্টার মানুষের কল্যাণে গাছের চারা বিতরণ করেন, পয়সা নেন না। গাছের যত্ন কীভাবে নিতে হয়, সে ব্যাপারে মানুষকে জানান। তিনি গাছের গুণাগুণ নিয়েও কথা বলেন।’
শওকত আলী গাছ নিয়ে গবেষণায় অন্যান্য অবদান রাখায় বঙ্গবন্ধু পুরস্কার ছাড়াও জেলা ও উপজেলায় একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি পেয়েছেন।
শওকত আলীর এমন কার্যক্রমকে সাধুবাদ জানিয়ে সবাইকে তাঁর মতো গাছ রক্ষায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এস এম ফেরদৌস। সেই সঙ্গে শওকত আলীর গাছের সংগ্রহশালা বাড়াতে বিরল গাছের চারা, প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।